তিনজন পক্ষে রায় দিয়েছেন। দু'জন বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। তার ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের (সংবিধানের ১০৩ তম সংশোধনী) বিষয়টি সবুজ সংকেত পেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। যাঁরা বিপক্ষে রায় দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত। কোন কোন যুক্তি পেশ করেছেন তাঁরা, তা দেখে নিন -
১০৩ তম সংশোধনীর বিষয়টি সমানাধিকার নিয়মের পরিপন্থী
প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত এবং বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাটের পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অবস্থার নিরিখে সংরক্ষণের বিষয়টি সংবিধানের মূল কাঠামোকে লঙ্ঘন করে না। কিন্তু তফসিলি জাতি বা তফসিলি উপজাতি বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির গরিব মানুষদের সেই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির বাইরে রেখে সংবিধানের ১০৩ তম সংশোধনীতে বৈষম্যের একটি ধরণ ফুটে উঠেছে। যা সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ।
বিচারপটি ভাট বলেছেন, 'গণতন্ত্রের সাত দশকে প্রথমবার একটি বৈষম্যমূলক নীতিতে সবুজ সংকেত দিয়েছে আদালত। কাউকে বর্জন করার ভাষা নেই আমাদের সংবিধানে। আমার মতে, সংবিধানের (১০৩ তম) সংশোধনীতে সেই বর্জনের ভাষা আছে এবং ন্যায়বিচারের নীতিকে লঙ্ঘন করে। অর্থাৎ (সংবিধানের) মূল ভিত্তিকে লঙ্ঘন করে।'
তিনি আরও ব্যাখ্যা করে জানান, একটি অংশে আছেন সমাজের তথাকথিত উচ্চশ্রেণির গরিব মানুষরা। অপর অংশে আছেন অনগ্রসর শ্রেণির গরিব মানুষরা। যাঁরা শ্রেণি সংক্রান্ত কারণে বাড়তি সমস্যার মুখে পড়েন। কিন্তু সংবিধানের ১০৩ তম সংশোধনী ওই দ্বিতীয় অংশের মানুষকে বাদ রাখা হচ্ছে। সবাইকে বিশ্বাস করানো হচ্ছে, যাঁরা অনগ্রসর শ্রেণি সংক্রান্ত সংরক্ষণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তাঁরা ভাগ্যবান। যা সংবিধানের 'সমান সুবিধা প্রদানের মূল ভিত্তির পরিপন্থী'।
আরও পড়ুন: EWS: গরিবদের ১০ শতাংশ কোটা কি অন্যদের উপর প্রভাব ফেলবে? আদালতে যা জানাল কেন্দ্র
অনগ্রসর শ্রেণি ছাড়া গরিবদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান
বিচারপতি ভাটের বক্তব্য, সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশকে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, এমনটা নয়। কিন্তু অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে সেই সুযোগ-সুবিধার আওতার বাইরে রাখা কখনও অনুমোদন যোগ্য নয়।
সংরক্ষণের ৫০ শতাংশ সর্বোচ্চসীমা লঙ্ঘন
বিচারপতি ভাটের মতে, সংরক্ষণের ৫০ শতাংশ সর্বোচ্চসীমা লঙ্ঘনের অনুমতি দেওয়ার ফলে ভবিষ্যতে আরও শ্রেণিবিভাগের পথ প্রশস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সমানাধিকারের যে অধিকার আছে, তা স্রেফ সংরক্ষণের অধিকার হয়ে দাঁড়াবে। বিচারপতি ভাট বলেন, 'এক্ষেত্রে (বি আর) অম্বেদকরের পর্যবেক্ষণ মনে রাখতে হবে। (তিনি বলেছিলেন যে) সংরক্ষণকে কেবলমাত্র সাময়িক ও ব্যতিক্রমী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নাহলে সেটা সমানাধিকারের শাসনকে গ্রাস করে নেবে।'