এত দিন যত রোগী আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশই প্রবীণ নাগরিক। আর সেই কারণেই মোদী সরকার ৭০ বছরের বেশি বয়সি রোগীদের সকলের জন্যই বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের সময়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপে যেমন প্রবীণ নাগরিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপকৃত হবেন, তেমনই সরকার পক্ষও আগামী দিনে ইভিএমে এর সুফল ভোগ করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি ছিল। কেন? তথ্য বলছে, রীতিমতো সমীক্ষা চালিয়ে আমজনতার প্রয়োজন বুঝে নির্বাচনী ইস্তাহারে এই বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তা কার্যকর হওয়ায় মানুষ খুশি হবে।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, প্রবীণরা গুরুতর অসুস্থ বা অথর্ব হয়ে পড়লে, বহু ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই তাঁদের পরিত্যাগ করেন। এই বয়স্ক মানুষগুলির কাছে নিজেদের চিকিৎসা করানোর কোনও সামর্থ্য থাকে না।
এদিকে, অধিকাংশ স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রেই ৭০ বছরের বেশি বয়সিদের বিমার আওতাধীন রাখা হয় না। কারণ, তাতে বিমা সংস্থাগুলির আর্থিক মুনাফা কমবে। আর যে বিমা সংস্থাগুলি এই পরিষেবা দেয়, তাদের কিস্তির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। যা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে আয়ুষ্মান ভারত সত্যিই সেই পরিবারগুলির পক্ষে সহায়ক হবে।
সমস্যা আরও আছে। অনেক বিমা সংস্থা বিমা নেওয়ার প্রথম দুই-তিনবছর পর্যন্ত পুরনো অসুখে বিমার কভারেজ দেয় না।
সরকারি তথ্যভাণ্ডার বলছে, ভারতে ৭০ বছরের বেশি বয়সিদেরই সবথেকে বেশি স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজন। কারণ, তাঁরা সবথেকে বেশি অসুস্থ হন এবং তাঁদের কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি। যার জন্য তাঁদের দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হতে পারে।
প্রবীণদের মধ্যে কিডনি, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে, প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে ডায়ালিসিসের জন্যই সবথেকে বেশি ক্লেম চাওয়া হয়েছে।
করোনা অতিমারির পর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়েছে। কারণ, যে বয়স্করা কোভিডের কবলে পড়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। তাঁদের অনেকেই এমন সমস্ত অসুখে ভুগছেন, যার চিকিৎসা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্তের পক্ষে সেই খরচ বহন করা কার্যত অসম্ভব।
এইসব কারণেই, এবার থেকে সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান নির্বিশেষে দেশের সেই সমস্ত প্রবীণ নাগরিক, যাঁদের বয়স ৭০ বছর, বা তার বেশি, তাঁরা সকলেই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, অর্থাৎ বিনামূল্যে চিকিৎসা বিমার সুবিধা পাবেন।
৭০ বছর বা তার বেশি বয়সি কোনও সদস্য রয়েছেন, এমন পরিবারগুলি যদি আগে থেকেই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় থাকে, তাহলে তাদের কভারেজের ঊর্ধ্বসীমা আরও ৫ লক্ষ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। যাতে ৭০ বছরের কম বয়সিদের জন্য বরাদ্দ বিমার টাকায় সত্তরোর্ধ্ব সদস্যটির চিকিৎসা না করাতে হয়।
প্রত্যেক পরিবার পিছু ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এভাবেই অতিরিক্ত ৫ লক্ষ টাকার বিমার সুবিধা দেওয়া হবে। এমনকী, বেসরকারি বা রাজ্য সরকারি বিমার আওতাধীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও (৭০ বছর ও তার বেশি বয়সি) এই পরিষেবা পাবেন।