বিজয় দিবসের শুভেচ্ছাবার্তায় কেন বাংলাদেশের নাম করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? তা নিয়ে রীতিমতো হইচই শুরু করলেন ‘নয়া’ বাংলাদেশের কয়েকজন ‘মুখ’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লা দাবি করলেন, এটা নাকি বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, এবং অখণ্ডতা’-য় আঘাত। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আবার এককাঠি উপরে উঠে দাবি করলেন যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারত নাকি স্রেফ ‘বিজয়ের মিত্র’ ছিল। আর থেকে বেশি কিছু নয়।
বিজয়ের ‘মূল কারিগর’ ছিল ভারতীয় বাহিনী!
বাস্তবে অবশ্য বাংলাদেশের ‘বিজয়ের মিত্র’ ছিল না ভারত। বরং বিজয়ের ‘মূল কারিগর’ ছিল ভারতীয় বাহিনী। খাতায়কলমে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধ শুরু করেছিল ভারত। আকাশ, স্থল এবং জল - তিনদিক থেকে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল। এমনই দাপট ছিল যে মাত্র ১৩ দিনে ভারতের সামনে মাথানত করেছিল পাকিস্তানি সেনা। অসহায়ভাবে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেছিল।
আরও পড়ুন: Vijay Diwas: ‘৯৯.৯ শতাংশ বাংলাদেশি মনে করেন ভারত…’ বিজয় দিবসে এসে মনের কথা মুক্তিযোদ্ধাদের
আর ভারত যে বিজয়ের ‘মূল কারিগর’ ছিল, সেটা বাংলাদেশে ভারতীয় সেনা প্রবেশের দৃশ্য থেকেই স্পষ্ট ছিল। সেইসব পুরনো ভিডিয়ো ফুটেজে আমজনতার উন্মাদনা দেখলেই সহজে অনুমান করা যায় যে বাংলাদেশ তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের ঠিক কতটা অবদান ছিল।
‘গরম-গরম’ কথা হাসনাত, নজরুলদের
সেইসব বাস্তবকে উড়িয়ে দিয়ে ‘গরম-গরম’ কথা বলেছেন হাসনাত এবং নজরুল। হাসনাত বলেছেন, ‘এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদী দাবি করেছে, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাঁদের অর্জন। তাঁদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত। যখন এই স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, এবং অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি। ভারতের এই হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।’
একইসুরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা নজরুল বলেছেন, ‘(মোদীর) তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’
ভারতের নামটুকুও নেননি ইউনুস
যদিও তাঁরা যখন সেই মন্তব্য করেছেন, তার কিছুক্ষণ আগেই বিজয় দিবস নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস যে ভাষণ দেন, তাতে সৌজন্যতার খাতিরে একবারও ভারতের নাম নেয়নি। এমনকী বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের নামও নেননি ইউনুস। বেশিরভাগ সময়টা নিজের সরকারের ঢাক পেটাতে এবং শেখ হাসিনার মুণ্ডপাত করতে খরচ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
শেষ ৩ বছরে মোদী নিয়েছেন বাংলাদেশের নাম?
সেই পরিস্থিতিতে নজরুলদের সেই ‘গরম-গরম’ কথার পরে প্রশ্ন উঠছে যে তাঁরা কি ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন? কারণ ২০২৩ সালেও ‘বিজয় দিবস’-র শুভেচ্ছায় বাংলাদেশের নাম করেননি মোদী। ২০২২ সালেও সেটা করেননি। ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের পূর্তিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা’-দের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছিলেন। সেইসঙ্গে যে পাকিস্তানকে পর্যদুস্ত করেছিল ভারত, শক্তির আস্ফালন করতে সেই দেশেরও নাম নেননি মোদী।
সোমবারও মোদী আলাদাভাবে পাকিস্তানের নাম করেননি। নাম নেননি বাংলাদেশের। তিনি বলেন, ‘আজ বিজয় দিবসে ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে অবদান রাখা বীর জওয়ানদের সাহসিকতা এবং আত্মবলিদানকে সম্মান জানাচ্ছি। তাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং অবিচল সংকল্পই আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রেখেছিল এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। তাঁরা যে আত্মত্যাগ করেছেন, তা চিরকাল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের দেশের ইতিহাসে গেঁথে থাকবে।’