২৪ বছরের মোহিত আওয়ানা জয়পুরে নিজের দেশের মাটিতে পা রেখে ফেললেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে কোনও মতে তিনি ফিরে এসেছেন দেশে। এই মোহিত ইউক্রেনের ভিএন কারাজিন খারকিভ ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। সেখানে তিনি মেডিক্যালের পড়াশোনা করেন। খারকিভে বোমা আছড়ে পড়ার কিছু আগে তিনি ছেড়েছিলেন সেই এলাকা। প্রাণ হাতে করে দেশে ফিরে আপাতত স্বস্তিতে মোহিত। উল্লেখ্য, মোহিতের মতো বহু ভারতীয় পড়ুয়া প্রতি বছর ইউক্রেনে যান। প্রশ্ন উঠতেই পারে, পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোন সুবিধা ইউক্রেনে রয়েছে, যা ভারতীয় পড়ুয়াদের সেখানে আকর্ষণ করে?
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে ভারতের ১৮,০৯৫ জন পড়ুয়া পঠনরত। তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই সেখানে মেডিক্যাল পড়ুয়া। উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর ভারতের একটা বড় অংশের পড়ুয়ারা ইউক্রেনমুখী হন। উল্লেখ্য, মেডিক্যাল পড়ুয়াদের সংখ্যা তাঁদের মধ্যে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন, রাশিয়া, চিন ও ফিলিপিন্সে বহু সংখ্যক ভারতীয় মেডিক্যাল পড়ুয়ারা ভিড় করেন। জানা যায়, ভারতের মেডিক্যাল কলেজগুলির থেকে রাশিয়া, ইউক্রেন, ফিলিপিন্স, চিনে মেডিক্যাল পড়ার খরচ অনেকটাই কম। এছাড়াও এই কলেজগুলিতে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে সুবিধা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেখানে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অনেক কম। ভারতে স্নাতকস্তরের মেডিক্যাল কোর্সে ১ লাখ আসনের জন্য অন্তত ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থী প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন। সেখানে ইউক্রেনে পরিস্থিতি খানিকটা সহজ। এছাড়াও ভারতে মেডিক্যাল পড়াশোনার ক্ষেত্রে সরকারি কলেজে গড় খরচ ২ লাখ, আর বেসরকারী কলেজে খরচ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। ফলে সাড়ে চার বছরে পড়ুয়ার পরিবারকে দিতে হবে ৫০ লাখ টাকা। আর এই খরচ শুধু কলেজের ফি। এদিকে, ইউক্রেনে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে গড়ে বার্ষিক খরচ ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। যা ভারতের কলেজগুলির থেকে অনেকটাই কম। এছাড়াও ইউক্রেন থেকে মেডিক্যালের স্বীকৃতি পাওয়া চিকিৎসকরা সারা বিশ্বের সর্বত্রই স্বীকৃত। এমনকি ভারতেও তাঁরা স্বীকৃত। উল্লেখ্য, ইউক্রেন সহ বিদেশের মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ পড়ুয়াদের ভারতে চিকিৎসক হিসাবে স্বীকৃতি পেতে গেলে পাশ করতে হবে 'ফরেন মেডিক্যাল কলেজ এক্সামিনেশন'।
হিসাব বলছে, প্রতি বছর ভারত থেকে ২ থেকে ৩ হাজার পড়ুয়া বিদেশে মেডিক্যাল পড়াশোনা করতে যান। এই হিসাব দিচ্ছে সরকারি তথ্য। উল্লেখ্য, এখনও প্রায় ১০ হাজার পড়ুয়া অপেক্ষা করে রয়েছেন 'ফরেন মেডিক্যাল কলেজ এক্সামিনেশন' পাশ করার জন্য। তা পেলেই তাঁরা ভারতে চিকিৎসক হিসাবে স্বীকৃত হবেন। উল্লেখ্য, বিদেশ থেকে মেডিক্যাল পড়ে আসা পড়ুয়াদের মধ্যে ১০-২০ শতাংশ এই পরীক্ষায় পাশ করে থাকেন। উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ড, ইউকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে পাশ করে আসা চিকিৎসকদের একমাত্র সরাসরি স্বীকৃতি দেয় ভারত। বাকি দেশ থেকে মেডিক্যাল পড়ে আসা পড়ুয়াদের জন্য রয়েছে এই 'ফরেন মেডিক্যাল কলেজ এক্সামিনেশন' পরীক্ষাটি। আর ইউক্রেনে পড়াশোনার নানান সুবিধা দেখার পর প্রতিবছরই ভারত থেকে বহু পড়ুয়া সেদেশে চলে যান উচ্চশিক্ষার্থে।