যে শিবরাজ সিং চৌহানের কৌশলে ভর করে মধ্যপ্রদেশে সরকার ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে বিজেপি, এমনকী, যাঁর দেখানো পথে হেঁটেই মহারাষ্ট্রেও রেকর্ড ভোটে জিতে বিজেপির প্রত্যাবর্তন ঘটেছে, এবার সেই তাঁকেই কোণঠাসা করতে চাইছে কেন্দ্রে প্রধান শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ?
এই প্রশ্ন উঠছেই। কারণ, বছর শেষে আবারও বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে কৃষক সমাজ যে পথে নেমেছে, তার জন্য কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার। ওই দিন মুম্বইয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ধনখড় জানতে চান, যে কৃষকরা ফের আন্দোলনে সামিল হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হচ্ছে না! কৃষকদের এর আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কেন সেসব ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে না!
উল্লেখ্য, দিল্লি-নয়ডা সীমানায় ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। দিয়েছেন ফের একবার 'দিল্লি চলো'র ডাক। এর আগের দফায় কৃষকরা যখন আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তখন মোদী সরকারকে পর্যন্ত পিছু হঠতে হয়েছিল। প্রত্যাহার করতে হয়েছিল তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন। যা বাস্তবে সরকার পক্ষের হার বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
এই প্রেক্ষাপটে আবারও একবার কৃষকদের সামনে সরকার পক্ষকে নত হতে হলে তা মোটেও মোদী ব্রিগেডের পক্ষে সুখকর হবে না।
এমন একটি পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মুম্বইয়ের ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে শিবরাজ সিং চৌহানের উদ্দেশে সরাসরি প্রশ্ন করেন ধনখড়। বলেন, মাননীয় 'কৃষিমন্ত্রী, আপনার আগে যিনি কৃষিমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কি কৃষকদের কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? যদি তিনি কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, তাহলে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের কী হল?'
ধনখড় এভাবে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে সরাসরি কৃষিমন্ত্রীকে প্রশ্নবাণ ছোড়ায় রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি দলে শিবরাজকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে?
এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা হল, এর আগেই প্রশাসনিক পদে নিজের সাফল্য প্রমাণ করেছেন শিবরাজ। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি সফল, একথা বলা যায়। অন্তত দলের নিরিখে তো বটেই।
মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ যে 'লাডলি বহেনা' প্রকল্প চালু করেছিলেন, তার ফলেই সেরাজ্যে বিজেপি শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। এমনকী, পরে সেই ফর্মুলাতেই মহারাষ্ট্রেও একই ধরনের প্রকল্প চালু করেছে বিদায়ী শিণ্ডে সরকার এবং ফলস্বরূপ, রেকর্ড ভোটে ক্ষমতায় ফিরেছে মহাযুতি জোট।
এদিকে, এত ভালো পারফরম্যান্স সত্ত্বেও শিবরাজকে দলের নির্দেশে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে কেন্দ্রে মোদীর মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে হয়েছে। কৃষক আন্দোলনের জেরে যে কৃষি মন্ত্রককে ইদানীংকালে জেরবার থাকতে হয়েছিল, শিবরাজকে সেই মন্ত্রকেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে!
অন্যদিকে সূত্রের দাবি, আরএসএস এবং বিজেপির একাংশ শিবরাজকে এতটাই পছন্দ করে, যে তারা চাইছে জে পি নাড্ডার উত্তরসূরি হিসাবে তাঁকে বিজেপি সভাপতি করা হোক। কিন্তু, বর্তমানে বিজেপির নেতৃত্বে প্রধান যে নেতারা রয়েছেন বলে দাবি করা হয়, তাঁরা নাকি শিবরাজকে বড় একটা পছন্দ করেন না!
এই প্রেক্ষাপটে দিল্লির সীমানা ফের একবার কৃষক আন্দোলনে উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা শুরু হতেই তার দায় শিবরাজের ঘাড়ে চাপিয়ে তাঁকে কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিতেই জগদীপ ধনখড়কে দিয়ে শিবরাজকে কাঠগড়ায় তোলা হল কিনা, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে।