সোশাল মিডিয়ায় একটা লাইক, একটা শেয়ার কিংবা একটা কমেন্ট পাওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন? কতটা বেপরোয়া হতে পারেন? যদি আপনাকে বিয়ে করতে বলা হয়, করবেন? এতটা পড়ে হয়তো ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা রে বাবা!
কিন্তু, বিশ্বাস করুন, এখনকার দিনে আর এসবও বিরাট কোনও ব্যাপার নয়! কারণ, সোশাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়াতে কেউ কেউ ক্যামেরার সামনে বিয়ে করতেও রাজি! তবে, তারপর যে কত কিছু ঘটতে পারে, সেটা অস্ট্রেলিয়ার একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী তরুণী একটি অনলাইন ডেটিং অ্য়াপের মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে আলাপ করেন। তাঁদের মধ্য়ে বন্ধুত্ব হয় এবং তাঁরা একে অপরকে ডেট করতে শুরু করেন। এই দু'জনই অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে থাকতেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই যুবক তরুণীকে আনুষ্ঠানিকভাবে এঙ্গেজ হওয়ার বা প্রেমের প্রস্তাব দেন। তরুণী তাতে সায় দেন এবং দু'জনের সম্পর্ক এতে আরও গাঢ় হয়।
এত দূর পর্যন্ত সবকিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু, প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার ঠিক দু'দিন পর ওই যুবক তরুণীকে বলেন, সিডনিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি যদি সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে যান, তাহলে তাঁর ভালো লাগবে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই তরুণী তাতে আপত্তি করেননি। শুধু তাই নয়। যুবকের আবদার শুনে তিনি একটি সাদা পোশাক (সাদা শার্ট) পরে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছন। কিন্তু, সেখানে একজন চিত্রগ্রাহক এবং অন্য দু-একজন ছাড়া তেমন কেউ ছিলেন না। এবং তাঁরা কেউ সাদা পোশাক পরেননি।
এসব দেখে সন্দেহ হয় তরুণীর। তিনি তাঁর প্রেমিককে প্রশ্ন করেন, এ কেমন অনুষ্ঠান? তখন যুবক তাঁকে বলেন, আসলে আজ তাঁদের বিয়ে! একথা শুনে বেজায় ঘাবড়ে যান তরুণী।
তিনি সেখান থেকে চলে যেতে চাইতেই যুবক তাঁকে আড়ালে নিয়ে যান এবং বোঝান, পুরোটাই আসলে মিছিমিছি। ওই যুবকের ইনস্টাগ্রামে ভালোই ফলোয়ার আছে। তিনি দাবি করেন, শুধুমাত্র ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য তিনি বিয়ের অভিনয় করছেন। তরুণী যদি তাঁকে সাহায্য করেন, তাহলে তিনি উপকৃত হবেন।
এরপর তরুণী ভেবে দেখেন, সত্যিই তো! অস্ট্রেলিয়ায় বিয়ে করতে গেলে তো আগে থেকে বেশ কিছু আইনি নিয়ম মানতে হয়। তিনি তো সেসব কিছুই করেননি। তাই, এটা তো আসল বিয়ে হতেই পারে না।
ব্যাপারটায় বেশ মজাও পান তরুণী। নিজের এক বন্ধুকে ফোন করে সব জানান। সেই বন্ধুও সব শুনে হাসতে থাকেন। এবং শেষমেশ খ্রিস্টান ধর্মের সমস্ত নিয়ম পালন করে তিনি ওই যুবককে বিয়ে করেন।
সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। তাতে অনেক লাইক, কমেন্ট আসে। তরুণী এতে খুশি ছিলেন। কারণ, তিনি জানতেন ওটা নকল বিয়ে।
কিন্তু, এই ঘটনার দু'মাস পর তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তরুণীর 'নকল' স্বামী তাঁকে ফোন করে বলেন, তরুণী যাতে তাঁকে তাঁর স্থায়ূী ঠিকানায় একজন বসবাসকারী হিসাবে ওই যুবকের নামও নথিভুক্ত করান!
তরুণী তাঁকে বলেন, এটা সম্ভব নয়। কারণ, তাঁরা সত্যিকার স্বামী-স্ত্রী নন। তখন যুবক দাবি করেন, তিনি সত্যিই তাঁর স্বামী! এবং তার স্বপক্ষে সমস্ত নথি তরুণীকে পাঠান তিনি। যেগুলো তৈরি করা হয়েছিল সিডনি থেকে, মেলবোর্ন থেকে নয়।
স্বাভাবিকভাবেই এরপর তরুণী আদালতের দ্বারস্থ হন। তাতে দেখা যায়, তরুণীর সঙ্গে ওই যুবকের আলাপ হওয়ার বহু আগেই এই দু'জনের নামে বিয়ে করার আবেদনপত্র বা নোটিশ জারি করা হয়েছে। এবং সেই নোটিশে তরুণীর স্বাক্ষর পর্যন্ত রয়েছে।
যদিও আদালত বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে বলে, ওই স্বাক্ষরের সঙ্গে তরুণীর স্বাক্ষরের সামান্য মিল রয়েছে! অর্থাৎ - সেটি জাল হতে পারে।
কিন্তু, যুবক দাবি করেন, তিনি তরুণীর সম্মতি নিয়েই তাঁকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু, আদালত বলে, সেই সম্মতি নেওয়ার জন্য তরুণীকে মিথ্য়া বলা হয়েছিল এবং ভুল বোঝানো হয়েছিল। তাই, তরুণীর ওই সম্মতি আইনগ্রাহ্য নয়।
শেষমেশ ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে এই বিয়ে বেআইনি বলে খারিজ করে দেয় আদালত। তরুণীও হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।