দেবব্রত মোহান্তি
প্রায় প্রতিবছরই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত হয়ে যায় ওড়িশা। এবার সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম সতর্ক হওয়ার জন্য ওড়িশা সরকারকে ১০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা করছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা জারির জন্য এই ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। মূলত ওই রাজ্যের একেবারে প্রান্তিক মানুষরা যাতে এই দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম খবর পান, তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমে সেকারণেই এই উদ্যোগ। বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন এক কর্তার মতে, ওড়িশার মানব সম্পদ উন্নয়নের বিষয়টি গোটা দেশের মধ্য়ে একেবারে শেষের দিকে রয়েছে। আদিবাসী এলাকায় দারিদ্র একেবারে লাগামছা়ড়া। আদিবাসী এলাকায় দারিদ্রতার পরিমাণ প্রায় ৬৩ শতাংশ। গোটা রাজ্যে এই দারিদ্রতার পরিমাণ প্রায় ৩৩ শতাংশ।
এই লোন ওড়িশা স্টেট ক্যাপাবিলিটি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট গ্রোথ প্রোগ্রামের আওতায় দেওয়া হচ্ছে। মূলত দুর্যোগ মোকাবিলা সংক্রান্ত ব্যাপারটিকে খেয়াল রাখা এই কর্মসূচির অন্যতম অঙ্গ।
বিশ্বব্যাঙ্কের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর ইন্ডিয়া অগাস্ট টানো কোউনেম জানিয়েছেন, দুর্যোগের জেরে সাধারণ বাসিন্দাদের ক্ষতির পরিমাণ যাতে কমে সেকারণেই এই উদ্য়োগ। কীভাবে সাধারণ মানুষ এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে উপকৃত হবেন? স্টেট রেভিনিউ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, একাধিক পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম জানতে পারবেন। তাঁদের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিকেও মাথায় রাখা হচ্ছে।
এদিকে এই লোনের অনুমোদনের আগে ওড়িশার আদাবাসীদের মধ্যে তীব্র দারিদ্রতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। সেই মূল্যায়নে দেখা যায় ওই রাজ্যে তিনজনের মধ্য়ে একজন দরিদ্র। অন্য়দিকে দারিদ্রতা দূরীকরণের যে পদ্ধতিগুলি ওই রাজ্যে রয়েছে তার মধ্যে সঠিক সমতা নেই। আদিবাসীদের মধ্য়ে দারিদ্রতা দূরীকরণের বিষয়টি অত্যন্ত ধীরে চলে। শিশু মৃত্য়ুর হারও অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে এই মৃত্যু রোধে ওড়িশা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করার চেষ্টা করলেও তা শেষ পর্যন্ত প্রত্য়াশা পূরণ করতে পারেনি। প্রতি ১০০০জন শিশুর মধ্য়ে ৪৪জনের মৃত্যু হয়। গোটা দেশের মধ্য়ে এই সংখ্য়া একেবারে ওপরের দিকে।
এই রাজ্যে অপুষ্টির হারও যথেষ্ট বেশি। তবে বিশ্বব্যাঙ্ক তাদের মূল্যায়নে দেখেছে,একাধিক ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার জন্য নানারকম চেষ্টা করেছে সরকার। কিন্তু বাস্তবে সেই সহায়তা সকলের কাছে পৌঁছায় কি না সেই প্রশ্নও উঠছে। এদিকে পরিসংখ্যান বলছে প্রতি ১৫ মাসে একবার সাইক্লোন আছড়ে পড়ে ওড়িশার উপকূলে। গড়ে প্রতিবছর ওড়িশায় ৩০০০ কোটির আর্থিক ক্ষতি হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তার মধ্যে বন্যা, খরা, সাইক্লোন সবটাই রয়েছে।