প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি যশবন্ত সিনহা এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পদপ্রার্থী। আর এই ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ তিনি দলও ছাড়ছেন। দিল্লির বুকের তাবড় রাজনীতিবিদ ছাড়াও তাঁর একাধিক পরিচিতি রয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের আগে তাঁর কেরিয়ার শুরু হয় একজন আইএএস অফিসার হিসাবে। আর এবার তিনি বিরোধীদের তরফের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। এককালে বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকা যশবন্ত সিনহা ২০২১ সালে যোগ দেন তৃণমূল শিবিরে। তারপর এবার তাঁর সামনে পাখির চোখ ১৯ জুলাই রাইসিনা হিলসের (রাষ্ট্রপতি ভবন) লড়াই। যেদিন হতে চলেছে দেশের ২০২২ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। একনজরে যশবন্ত সিনহা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
পটনার ভূমিপুত্র ১৯৩৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জন্মেছিলেন। এরপর পটনাতেই পড়াশোনা। সেখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি। কিছুদিন পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েওছেন যশবন্ত সিনহা।
এরপর ২৪ বছর ধরে টানা আইএএস অফিসার হিসাবে তিনি দেশসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি সচিব পর্যায়ে বহু বছর নিযুক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত জার্মানির বনে প্রথম সচিব (কমার্সিয়াল) হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন যশবন্ত সিনহা। এরপর বহু বছর তিনি ভারতের সার্ফেস ট্রান্সপোর্ট বিভাগে যুগ্মসচিব ছিলেন।
যে যশবন্ত সিনহাকে এতদিন দেশের কূটনৈতিক মহল চিনত, সেই যশবন্ত সিনহা এরপর ১৯৮৪ সালে আইএএস অফিসার হিসাবে পদত্যাগ করেন। পা রাখেন রাজনীতিতে। যোগ দেন জনতা দলে। ১৯৮৮ সালে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন পার্টির তরফে।
১৯৯৬ সালে যশবন্ত সিনহা দেশের জাতীয় রাজনীতিতে আরও বেশি উজ্জ্বল হতে থাকেন। তিনি সেই বছরই বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। এরপর ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিহারের এই ভূমিপুত্র হাজারিবাগ কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন।
১৯৯৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমল। পরবর্তীকালে ২০০২ সালে যশবন্ত সিনহা কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্বভার পালন করেন।
২০০৯ সালে বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে আসেন যশবন্ত সিনহা। ২০১৮ সালে তিনি বিজেপির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর কার্যত মোদী সরকারের বিরুদ্ধে পর পর তোপ দাগেন তিনি। চড়ান সুর।
২০২১ সালের ১৩ মার্চ তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ঘাসফুল শিবিরে তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদে আসীন হন। ধীরে ধীরে দিল্লি থেকে তৃণমূলের রাজনীতি সামলাতে থাকেন এই প্রাক্তন আইএএস অফিসার।
২১ জুন যশবন্ত সিনহাকে বিরোধী জোটের তরফে রাইসিনা হিলসের লড়াইয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এক ইঙ্গিতবহ টুইটে তার বার্তা কার্যত নিশ্চিত করেন যশবন্ত সিনহা নিজেও। ২০২২ সালের ২১ জুন তৃণমূল থেকে ইস্তফা দেন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা।
উল্লেখ্য, যশবন্ত সিনহার স্ত্রী নিলিমা সিনহা শিশুসাহিত্য লেখিকা হিসাবে পরিচিত। তাঁদের সন্তান জয়ন্ত সিনহা হাজারিবাগের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অপর সন্তান সুমন্ত সিনহা দেশের একজন নামী ব্যবসায়ী। মেয়ে শর্মিলা যদিও লাইমলাইট থেকে দূরে থাকেন।