চিনকে বন্ধু বলে ভারতের মানচিত্র (ম্যাপ) নিয়ে টিপ্পনি করলেন মহম্মদ ইউনুস। সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম'-র মধ্যেই সংবাদসংস্থা রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস দাবি করেন, বাংলাদেশকে ছাড়া ভারতের মানচিত্র (ম্যাপ) আঁকা যাবে না। কিন্তু এখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি অত্যন্ত ‘ব্যথিত’ বলে দাবি করেছেন ইউনুস। যিনি চিনকে ‘দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন।
হাসিনার ফেরত পাঠানোর দাবি ইউনুসের
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনুস দাবি করেছেন যে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ভারতের। যাতে তাঁর আমলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদী, রাজনৈতিক বিরোধীদের উপরে যে অত্যাচার চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেটার জন্য বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়। যিনি ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন।
হাসিনা-সংঘাত, তারপরে সীমান্তে টানাপোড়েন
তবে দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বায়ুঘাঁটিতে অবতরণের পরে হাসিনা কোথায় গিয়েছেন, তা নিয়ে ভারত সরকারের তরফে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। সেইসময় একাধিক মহলের তরফে দাবি করা হয়েছিল যে হাসিনাকে দিল্লির কোনও ‘সেফ হাউসে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে ভারত অবশ্য কিছু জানায়নি যে হাসিনা কোথায় আছেন। যিনি গত বছরের অগস্ট থেকে জনসমক্ষে আসেননি। যা বার্তা দেওয়ার, সেটা ভিডিয়োর মাধ্যমেই দিয়েছেন।
তারইমধ্যে ডিসেম্বরের দিকে সরকারিভাবে ভারতের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণের আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত সরকারের তরফে শুধু জানানো হয়েছিল যে বাংলাদেশের আর্জি এসেছে। কিন্তু ঢাকার আর্জিতে সাড়া দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে নয়াদিল্লির তরফে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। বরং হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আধিকারিক।
আর হাসিনা নিয়ে সেই টানাপোড়েনের মধ্যেই সীমান্তের একাধিক জায়গায় সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ। ভারতীয় ভূখণ্ডেই বিএসএফ বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করলেও তাতে বাধা দেয় বিজিবি। যে সংঘাতের বিষয়টি গড়িয়েছে কূটনৈতিক স্তরেও। দু'দেশই একে অপরের রাজধানীতে থাকা হাইকমিশনারকে তলব করেছে।
বিশেষ কোনও ইঙ্গিত দিলেন ইউনুস?
সেই আবহেই রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক যতটা সম্ভব, ততটা মজবুত হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না।’
সেইসঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে চিনকে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন ইউনুস। আর তারপরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কি বিশেষ কোনও ইঙ্গিত করলেন? কারণ তিনি যে সময় এরকম মন্তব্য করেছেন, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে বাংলাদেশের ‘সম্পর্ক’ বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে। ঢাকায় এসেছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের (ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স) প্রতিনিধি দলও। তাঁদের মধ্যে একজন আবার অতীতে চিনে কাজ করেছেন। সবমিলিয়ে ইউনুসের বার্তা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।