দিল্লির মসনদ দখল করেছে বিজেপি। আপের পরাজয়ের কারণ হিসেবে নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সক্সেনার মতে, আপের হারের কারণ হল যমুনার অভিশাপ। রবিবার রাজভবনে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিতে যান বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। সেই সময় গভর্নর তাঁকে বলেন, ‘যমুনা মায়ের অভিশাপের কারণে আপনারা হেরে গিয়েছেন।’ জানা গিয়েছে, গভর্নর আতিশীকে আরও বলেছেন, যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নদী পরিষ্কারের একটি প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে যমুনার অভিশাপ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।
আরও পড়ুন: দিল্লি নির্বাচনের আগে দল বদলেছিলেন ২৪ জন, জিতলেন ক'জন?
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, অতিশী অবশ্য লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বক্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তাছাড়া, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সচিবালয় এই কথোপকথনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। উল্লেখ্য, যমুনা সংক্রান্ত উচ্চ-স্তরের কমিটির উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যকর রয়েছে। যমুনা নিয়ে ‘অভিশাপ’ সম্পর্কে সতর্ক করার মূলে রয়েছে দুই বছর আগে সাক্সেনা এবং কেজরিওয়ালের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে।
যমুনা নদীতে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত নদী পরিষ্কার পর্যবেক্ষণের জন্য লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে একটি উচ্চ-স্তরের কমিটি গঠন করে। এই কমিটি কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে কেজরিওয়াল সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং সাহায্যের প্রস্তাব দেন। তবে, দিল্লি সরকার পরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে। সেখানে সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি যুক্তি দেন যে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিটির প্রধান করা উচিত। এরপর তাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। এই নিষেধাজ্ঞা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যকর রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর কেজরিওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় লেফটেন্যান্ট গভর্নর আপ সুপ্রিমোকে বলেছিলেন যে তাঁকে যমুনার অভিশাপের মুখোমুখি হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে দিল্লি সরকারের অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য কেজরিওয়ালের আশঙ্কাকে দায়ী করেছে যে যদি প্রকল্পটি লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আপ এর কৃতিত্ব পাবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে কেজরিওয়াল পাঁচ বছরের মধ্যে যমুনা পরিষ্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন। প্রতিশ্রুতি পূরণে তার ব্যর্থতা নির্বাচনী প্রচারে একটি প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। বিজেপি এই জন্য তাঁকে কটাক্ষ করেছে এবং ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে যমুনার জল এতটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে তারা আনন্দের সঙ্গে এতে ডুব দেবে। ভোট-পরবর্তী বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে পূর্বাঞ্চলের একটি বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে আপকে সমর্থন করা ভোটাররা বিজেপিকে সমর্থন করেছে।