দিল্লিতে একই পরিবারের তিন সদস্যকে হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়। প্রথমে এই ঘটনায় ২০ বছর বয়সি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তথা বক্সার অর্জুন কুমার দাবি করেছিল যে প্রাতঃভ্রমণ থেকে ফিরতেই বাড়িতে বাবা, মা এবং দিদির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেছিল। কিন্তু, পুলিশ তদন্তে নামতেই মোড় পুরো ঘুরে গেল। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে সম্পত্তির লোভেই অর্জুন নিজের পরিবারের সদস্যদের খুন করে। এই ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: বাবার কাটা মুণ্ড হাতে নিয়ে হাঁটছে ছেলে, প্রকাশ্যে অঞ্জন দাস হত্যাকাণ্ডের ভিডিয়ো
বুধবার সকালে তিনজনের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তবে বাড়ি থেকে কিছুই চুরি হয়নি। তখন তদন্তে নেমেই পুলিশের সন্দেহ হয় পরিচিত কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, অর্জুন খুব সাবধানে খুনের পরিকল্পনা করেছিল। এমনকী পুলিশের কাছে বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তবে সম্পত্তির কারণেই যে এই খুন তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি পুলিশের।
তদন্তকারীরা ধৃতকে জেরা করে জানতে পেরেছেন অর্জুনের ধারণা ছিল, তার বাবা রাজেশ কুমার সব সম্পত্তি তার দিদি কবিতা কুমারের নামে করে দিতে চাইছে। তাছাড়া, বাবা, মা এবং দিদির সঙ্গে তার বনিবনা হতো না। সেই থেকেই খুনের পরিকল্পনা মাথায় আসে অর্জুনের। ধৃত তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, যাতে কোনও চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ প্রতিবেশীরা না পায় তার জন্য সে সকলকে একে একে গলা কেটে খুন করেছিল। শুধু তাই নয়, বাবার ওপর তার এতটাই রাগ ছিল যে তাঁর মাথায় ছুরি মারার পর হত্যা করেছিল অর্জুন।
বুধবার পরিবারের সদস্যদের খুনের কথা অর্জুনই প্রকাশ্যে এনেছিল। সে দাবি করেছিল, প্রতিদিনকার মতো সে সকাল পাঁচটার দিকে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিল। এরপর বাড়ি ফিরতেই দেখে বাবা, মা ও দিদির গলা কাটা রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। তখন অর্জুন জিমে দৌড়ে গিয়ে মালিককে বাবা, মা ও বোন খুন হয়ে যাওয়ার কথা জানায়। সন্দেহ এড়াতে সে তখন প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সামনে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তবে পুলিশ তদন্তে নেমে অর্জুনের কথাবার্তায় বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায়। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সঞ্জয় কুমার জৈন বলেন, ‘যখন আমরা অর্জুনকে প্রশ্ন করি, তখন সে বিভিন্ন উত্তর দিতে শুরু করে এবং আমরা তার কথায় অসঙ্গতি খুঁজে পায়।’
উল্লেখ্য, রাজেশের দেহ পাওয়া গিয়েছিল বাড়ির উপরের তলায়। তার স্ত্রী কোমল কুমার (৪৬) এবং মেয়ে কবিতার দেহ নিচতলায় আলাদা আলাদা ঘরে পাওয়া যায়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন অর্জুন প্রথমে তার দিদিকে হত্যা করে। এরপর অর্জুন উপরের তলায় চলে যায় বাবার কাছে। সেখানে ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাবাকে খুন করে। পরে মাকে খুনের জন্য আবার নিচে নেমে আসে। তার মা বাথরুমে গিয়েছিলেন। তিনি বাথরুম থেকে বেরোতেই অর্জুন হামলা চালায়। এভাবেই পরিবারের সদস্যদের খুন করে। তাদের খুনের জন্য অর্জুন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী বাবার ছুরি ব্যবহার করে।
উল্লেখ্য, অর্জুন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র এবং একজন পরিচিত বক্সার। সে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করে বক্সিংয়ে রৌপ্য পদক জিতেছিল। আরও জানা গিয়েছে, অর্জুনের বাবা বোনের পক্ষ নিতেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অর্জুনকে বকাঝকা করতেন। তাতে প্রথম থেকেই বাবা ও দিদির ওপর ক্ষোভ ছিল অর্জুনের। জানা যায়, ১ ডিসেম্বর তার দিদির জন্মদিনের সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। সেই সময় রাজেশ ছেলে তিরস্কার করেছিলেন। আর তারপরই বাবা মায়ের বিবাহবার্ষিকীর দিন খুন। এখন এই খুনের পরিকল্পনার জন্য অর্জুন ইন্টারনেট ঘেঁটে অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেছিল কি না তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।