নারী দেহের স্তনকে 'কমলালেবু' বলে উল্লেখ করে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হল প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার যুবরাজ সিংয়ের সংস্থা 'ইউউইক্যান ফাউন্ডেশন'কে।
ব্রেস্ট ক্যানসার সম্পর্কে মহিলাদের সতর্ক ও সচেতন করতে সম্প্রতি তাদের পক্ষ থেকে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞাপনেই মহিলাদের স্তকে 'কমলালেবু' বলে উল্লেখ করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা। এহেন উদ্ভট তুলনাকে অধিকাংশ নেট নাগরিকই 'অসংবেদনশীল' এবং 'অস্বস্তিকর' বলে উল্লেখ করেন। এমনকী, এই সমালোচকদের মধ্যে সাংবাদিকরাও রয়েছেন।
বিতর্কের সূত্রপাত কোথা থেকে?
দিল্লির মেট্রোয় একটি বিজ্ঞাপন দেখে, সেই বিজ্ঞাপনের ছবি তুলে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে সেই ছবি পোস্ট করেন এক মহিলা। সেই বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, 'প্রত্যেক মাসে একবার আপনার কমলালেবু পরীক্ষা করে দেখুন'! বিজ্ঞাপনের এহেন উদ্ভট উপস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্তৃপক্ষকে তুলোধনা করেন ওই মহিলা এক্স ইউজার।
অধিকাংশ এক্স ব্যবহারকারীরই মনে হয়েছে, ওই বিজ্ঞাপনে যে নারী চরিত্রগুলি তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোস্টারে এমনই বিভিন্ন নারী চরিত্রের হাতে একটি করে কমলালেবু ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকি এক বা একাধিক নারী চরিত্র সেই কমলালেবু অথবা সেই প্রধান নারী চরিত্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে!
এ নিয়ে সাংবাদিক মহলের কী বক্তব্য?
সাংবাদিক ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায় তাঁর লিঙ্কডইন প্রোফাইলে এই বিজ্ঞাপনের পোস্টার নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'কোনও লাম্প রয়েছে কিনা, সেটা বোঝার জন্য আপনার স্তন পরীক্ষা করুন। কমলালেবু নয়।'
ঋতুপর্ণা আরও লেখেন, 'আমরা যদি ব্রেস ক্যানসারের ব্রেস্ট শব্দটিই উচ্চারণ করতে না চাই, তাহলে কীভাবে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করব? আর কীভাবেই বা এই বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করব? এটা কেমন বুদ্ধি? এই কারণেই যাঁরা যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রচার চালান, তাঁরা একটি বিষয়ে জোর দেন। যাতে শিশুদের তাদের গোপনাঙ্গগুলির সঠিক নাম, যেমন - ভ্যাজানা, পেনিস ইত্যাদি শেখানো হয়। তাহলে তারা সত্যিই খারাপ স্পর্শের অর্থ বুঝবে এবং তাদের বাবা-মা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবে।'
ঋতুপর্ণার এই পোস্টে অসংখ্য লিঙ্কডইন ব্যবহারকারী কমেন্ট করেছেন। এমনকী, সেই দলে সংশ্লিষ্ট এনজিও-ও রয়েছে। যদিও তারা তাদের বিজ্ঞাপনের কারণ ব্যাখ্যা করে বিষয়টির স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেছে। তবে, তাতে শেষ রক্ষা হয়নি।
কারণ, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। যার জেরে বাধ্য হয়েই ওই এনজিও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
এ নিয়ে ইউউইক্যানের কী বক্তব্য?
যুবরাজ সিংয়ের এনজিও-র তরফে সাংবাদিক চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে এই বিষয়ে তাঁর মতামত প্রকাশ করার জন্য। কারণ, তারা মনে করে, সকলেরই নিজস্ব মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।
একইসঙ্গে সংস্থার বক্তব্য, 'ইউউইক্যানে, আমরা জানি, সরাসরি মানুষের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে আলোচনা করা কতটা কঠিন। এটি এমন একটি বিষয়, যা অধিকাংশ মানুষই এড়িয়ে যান, যতক্ষণ না তাঁরা নিজেরা অথবা তাঁদের কোনও আপনজন এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হন।'
সংস্থার আরও দাবি, অনেক ভাবনা চিন্তা করেই তারা স্তনের বদলে 'কমলালেবু' শব্দটি ব্যবহার করেছে। তারা তাদের এই পদক্ষেপকে 'সাহসী নির্বাচন' এবং 'গভীর ভাবনা'র ফসল বলেও দাবি করেছে।
এমনকী, যেভাবে এই বিজ্ঞাপনের জেরে মানুষ ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে, তাতে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে এবং তারা এর জন্য নিজেদের 'গর্বিত' অনুভব করছে বলেও জানিয়েছে যুবরাজ সিংয়ের এনজিও।