সম্প্রতি রেকর্ড হারে জোম্যাটোর আইপিও লঞ্চ হয়েছে। আর তারপরেই দেশের ধনীতম স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠাতাদের তালিকায় উঠে এল সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-সিইও দীপিন্দর গোয়েলের নাম। এখন তাঁর নেট ওয়ার্থ প্রায় ৪.৭ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে জোম্যাটো মূলত ফুড ডেলিভারি অ্যাপ হিসাবে পরিচিত। কিন্তু শুরুতে এমনটা মোটেও ছিল না। বরং রেস্তোরাঁর মেনু দেখার ওয়েবসাইট হিসাবে জোম্যাটোর পথ চলা শুরু।
আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন দীপিন্দর ও তাঁর সহকর্মী পঙ্কজ চাড্ডা। কলেজের পর দিল্লিতে এক বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। সেই সময়েই তাঁরা লক্ষ্য করেন, অফিসের লাঞ্চ ব্রেকে কাছাকাছির মধ্যে চটজলদি কিছু খেতে গেলে বেশ সমস্যা হয়। প্রথমে কাছেপিঠে কোন রেস্তোরাঁ আছে তার খোঁজ করা। তারপর সেখানে মেনু দেখা। এতেই অনেক সময় চলে যায়।
এই ভাবনা থেকেই ২০০৮ সালে Foodiebay.com ওয়েবসাইট তৈরির বুদ্ধি আসে তাঁদের মাথায়। তাঁরা ঠিক করেন, এমন এক ওয়েবসাইট বানাবেন, যাতে বিভিন্ন শহরের সব রেস্তোরাঁর মেনু দেওয়া থাকবে। তাছাড়া লোকেশানও থাকবে। ফলে কেউ চাইলে সহজেই সেখান থেকে পছন্দের রেস্তোরাঁ, মেনু ইত্যাদি আগে থেকেই জেনে যাবেন।
প্রাথমিকভাবে অফিসের সহকর্মীদের জন্যই বানানো হয়েছিল এই সুবিধা। সেখানে বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় ওয়েবসাইটটি পাবলিক করে দেওয়া হয়। দিল্লির প্রায় সব জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর তথ্য ওয়েবসাইটে আপডেট করেন তাঁরা।
এরপর ধীরে ধীরে তাঁরা কলকাতা ও মুম্বইয়ের রেস্তোরাঁর মেনুও যোগ করা শুরু করেন। তখনও জিও আসেনি। তা সত্ত্বেও বিপুল ট্রাফিক আসতে থাকে তাঁদের ওয়েবসাইটে। ফলে, বিনিয়োগকারী পেতে অসুবিধা হয়নি। ইনফো এজ ইন্ডিয়ার সঞ্জীব বিখাচন্দানী তাঁদের ওয়েবসাইটের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০১০ সালে Foodiebay-র নাম বদলে হয় জোম্যাটো।
যোগ করা হয় ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের রেস্তোরাঁয় খেয়ে রিভিউ দেওয়ার সুবিধাও। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অচিরেই দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হয়ে যায় জোম্যাটো। বিনিয়োগ আসতে থাকে বৃহত্ সব সংস্থা থেকে। এমনকি চিনের বিলিয়নেয়ার জ্যাক মা-র অ্যান্ট গ্রুপও এতে বিপুল বিনিয়োগ করেন।
বিশ্বের ২৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে জোম্যাটো। দুবাই, শ্রীলঙ্কা, ব্রিটেন, টার্কি, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও জোম্যাটোর উপস্থিতি রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের ১০ হাজার শহরের প্রায় ১৪ লক্ষ রেস্তোঁরার লিস্টিং রয়েছে জোম্যাটোতে। ২০১৫-১৬ থেকে ফুড ডেলিভারি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে সংস্থা।
তবে জোম্যাটো কিন্তু লোকসানে চলে। এখনও পর্যন্ত মুনাফার মুখ দেখতে পারেনি সংস্থা। দীপিন্দর জানিয়েছেন, তাঁরা ১০ বছর পরের কথা ভেবে এগোচ্ছেন। তাঁদের দীর্ঘকালিন মুনাফার ভাবনাকে সমর্থন করার জন্য তিনি বিনিয়োগকারীদের ধন্যবাদ জানান।