তিন বাংলাদেশি নাগরিক। কেউ ঋণ মেটাতে, আবার কেউ নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে এসেছিলেন ভারতে। কিন্তু, সকালে ঘুম ভাঙতেই তাঁদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। ওই তিনজনই দেখতে পান তাদের একটি করে কিডনি চুরি হয়ে গিয়েছে। বলিউড সিনেমা ‘রান’- এ দেখা গিয়েছিল এক যুবককে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তার একটি কিডনি বের করে নেওয়া হয়। ঠিক যেন সেই সিনেমার ঘটনায় বাস্তবে ঘটল এই তিন বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে। তাদেরকেও ঠিক একইভাবে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আনা হয়েছিল ভারতে। আর সেখানেই ডাক্তারি পরীক্ষার নামে বের করে নেওয়া হল কিডনি। এনিয়ে চার্জশিট পেশ করেছে দিল্লি পুলিশ। তাতেই ৩ বাংলাদেশের নাগরিকের করুণ কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের জেলায় সক্রিয় কিডনি পাচার চক্র, গৃহবধূর অভিযোগে উত্তর দিনাজপুর তোলপাড়
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে একটি কিডনি পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে এভাবেই প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন ৩ নাগরিক। স্বাভাবিকভাবেই এমন ঘটনার পর বাংলাদেশি ওই নাগরিকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের পথে। তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি যে তাঁদের সঙ্গে এমনটা হবে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে অনুযায়ী, বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই যন্ত্রণাদায়ক ঘটনার বিবরণ দেওয়া রয়েছে চার্জশিটে। জানা যায়, ওই ব্যক্তিদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতে আনা হয়েছিল। এরপর মেডিক্যাল করানোর নামে তাঁদের কিডনি বের করে নেওয়া হয়। পরে ৪৮ ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলে তারা জানতে পারেন কিডনি চুরি করা হয়েছে। যদিও কিডনি বাবদ তাঁদের ৪ লক্ষ টাকা দেয় প্রতারকরা।
প্রতারিত এক বাংলাদেশি নাগরিক বলেন, বাড়িতে তাঁর মা, বোন এবং স্ত্রী রয়েছেন। একজন পরিচিত ব্যক্তি তাঁকে ভারতে চাকরির জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডে তাঁর কাপড়ের ব্যবসা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি একটি এনজিও থেকে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ৩ লাখ টাকা শোধ করতে পারলেও বাকি টাকা শোধ করতে পারেননি। তাই ওই ব্যক্তির পরামর্শে ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পাসপোর্ট এবং মেডিক্যাল ভিসায় ১ জুন ভারতে আসার পর তাঁকে বলা হয়েছিল যে তিনি টাকা নিয়ে কিডনি দান করতে চাইছেন। কিন্তু, তাতে আপত্তি জানালে তাঁর পাসপোর্ট এবং ভিসা আটকে রাখা হয়। এমনকী সারাজীবন আটকে রাখারও হুমকি দেওয়া হয়।
একইভাবে ৩৫ বছর বয়সি বাংলাদেশের নাগরিককে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডাক্তারি পরীক্ষার নামে তাঁর কিডনি বের করে নেওয়া হয়।৩ এপ্রিল তাঁকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং অজ্ঞান হয়ে যান। ৫ এপ্রিল জ্ঞান ফিরে বুঝতে পারেন কিডনি বের করা হয়েছে। তখন তাকে ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।
তৃতীয় বাংলাদেশিও একই রকম অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। ভারতে চাকরি দেওয়ার নামে অজ্ঞান করে কিডনি বের করে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে বলা হয়েছিল, কোনও সমস্যা ছাড়াই একটি কিডনি নিয়ে বাঁচতে পারবেন তিনি। তাঁকেও ৪.৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তামনে তাঁরা বাংলাদেশে ফিরেছেন। এই মামলায় দ্রুত বিচার শুরু হবে।