শুভব্রত মুখার্জি: ফুটবলের ইতিহাস যদি ঘাটতে বসা হয় তাহলে জার্মানি এবং চেকোস্লোভাকিয়ার লড়াইকে অনেকেই 'ডেভিড এবং গোলিয়াথের' যুদ্ধ বলে অ্যাখ্যা সহজেই দেখা যায়। জার্মানি হল সেই দেশ যার দখলে রয়েছে চার চারটি বিশ্বকাপ। তাদের সাথে যৌথভাবে ৪টি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে একমাত্র ইতালি। তাদের থেকে একমাত্র উপরে রয়েছে ব্রাজিল। যাদের দখলে রয়েছে পাঁচটি বিশ্বকাপ। অপরদিকে চেকোস্লোভাকিয়ার দখলে রয়েছে একমাত্র ১৯৭৬ সালে জেতা ইউরো, কিন্তু কোন বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাদের।
সামনেই শুরু হতে চলেছে ইউরো ২০২০ এর আসর। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আমরা ফিরে দেখার চেষ্টা করব ইউরোর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু সোনালি মুহূর্ত। সালটা ১৯৭৬, সেবার ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি জার্মানি এবং চেকোস্লোভাকিয়া।
∆ একনজরে ইউরো ১৯৭৬ :-
১) আয়োজক : যুগোস্লাভিয়া
২) ফাইনাল ভেন্যু : রেড স্টার স্টেডিয়াম, বেলগ্রেড।
৩) চ্যাম্পিয়ন: চেকোস্লোভাকিয়া
৪) রানার্সআপ: জার্মানি
৫) তৃতীয়: নেদারল্যান্ডস
৬) চতুর্থ: যুগোস্লোভাকিয়া
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ যেমন পেলের আবির্ভাবের কারণে তেমন ১৯৮৬ বিশ্বকাপ মারাদোনার 'ঈশ্বরের হাত' এই গোলের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে খ্যাতি লাভ করেছিল। ঠিক তেমন ভাবে ১৯৭৬ সালের ইউরো ফুটবল ইতিহাসে খ্যাতিলাভ করছে 'পানেনকা' পেনাল্টি শটের উদ্ভাবক হিসেবে। এই ইউরো জন্ম দিয়েছিল 'পানেনকা' স্টাইল অফ পেনাল্টি শটের। যার জনক অবশ্যই চেকোস্লোভাকিয়ার আন্তোনিন পানেনকা। বেলগ্রেডের রেড স্টার স্টেডিয়ামে ফাইনালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার মুখোমুখি তৎকালীন সময়ের বিশ্বকাপ ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।
প্রতিযোগিতার শুরুতে বিশেষজ্ঞ সহ সকলের খাতায় চেকোস্লোভাকিয়া আন্ডারডগ। সেমিফাইনালে জোহান ক্রুয়েফের নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে প্রথম ফুটবল বিশ্বকে চমক দিয়েছিল চেকরা। কারণ নেদারল্যান্ডস তৎকালীন বিশ্বকাপের রানার্সআপ দল।
জার্মানরা ফাইনালে গিয়েছিল যুগোস্লোভাকিয়াকে সেমিফাইনালে হারিয়ে। কিন্তু কোচ ভেকলাভ জেজেকের চেকরা মানসিকভাবে শক্তিশালী ছিল। ফাইনালের শুরুতেই জার্মানদের রীতিমতো বিস্মিত করে দিয়ে ফাইনালের ২৫ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় চেকোস্লোভাকিয়া। জার্মানরা ম্যাচে ফেরে ডিয়েটার মুলার ও বার্নড হোলজেনবেইনের গোলে।
নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়ে খেলা ২-২ ফলে সমতায় থাকার পরে খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে। ইউরোর ফাইনাল তাই প্রথমবারের মতো গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই মনে রাখার মতো সেই ঐতিহাসিক 'পানেনকা' পেনাল্টি।
প্রথমে তিনটি করে শটে দুই দলই গোল পায়। চেকের হয়ে চতুর্থ শট নেন লাদিস্লাভ ইয়ুরকেমিক। তিনি গোল করার পরেই জার্মানির চতুর্থ শটটা মিস করলেন উলি হোয়েন্স। চেক পঞ্চম শটে গোল করলেই চ্যাম্পিয়ন হবে এই অবস্থায় স্পট কিক নিতে আসেন বোহেমিয়ানস প্রাহা ক্লাবের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আন্তোনিন পানেনকা। গোলপোস্টের নিচে তখন জার্মানির সেপ মায়ার, যিনি সেই সময়ের অন্যতম সেরা গ্লাভসম্যান। পানেনকা দৌড় শুরু কররেন। জোরে দৌড়ে এসেছিলেন বা বলা যায় স্বাভাবিক গতিতেই এসেছিলেন দৌড়ে। কিন্তু শট নেওয়ার সময় পরিচয় দিলেন অসীম সাহসের। যে শট মিস হলে শিরোপা জয় ফস্কাতে পারে সেখানে জোরে শট নিলেন না, ডানে-বামে কোন দিকেই মারলেন না। আলতো টোকায় ভাসিয়ে পানেনকা বল মারলেন একেবারে সোজা গোলের মাঝ বরাবর। মায়ার ডান দিকে ঝাঁপালেন, বল মাঝখান দিয়ে ঢুকল জালে। চেকোস্লোভাকিয়া সবাইকে বিস্ময়ের জালে জড়িয়ে হল ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন!
১৯৭৬ সালে ফাইনালে নিজের ১০০তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন জার্মানির অধিনায়ক ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। সেই অভিশপ্ত রাতে টাইব্রেকারে দলের পঞ্চম শটটি নেওয়ার কথা ছিল বেকেনবাওয়ারের। তবে তার আগের শটটি উলি হোয়েন্স মিস করার পরে পানেনকা গোল করাতে ফাইনালের ফল নির্ধারিত হয়। উল্লেখ্য ১৯৭৬ ইউরোর ফাইনালের সেই হারের পরে আর কোনও বড় টুর্নামেন্টে কখনও টাইব্রেকারে হারের মুখ দেখতে হয়নি জার্মানদের।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।