শুভব্রত মুখার্জি
'গুডবাই কমানদান্তে' - ঠিক এভাবেই ফুটবলের রাজপুত্রের বিদায়ের পরে তাঁকে বিশ্বজুড়ে বামপন্থী চিন্তাধারার মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। দিয়েগো মারাদোনা নিজেকে কোনওদিন নিজেকে বামপন্থী বলেননি। বরং জানাতেন, তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর ভক্ত। বলেছিলেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই। মৃত্যু পর্যন্ত আমি ফিদেলিস্তা।’ একইসঙ্গে হাতে বড় করে আঁকা চে'র উল্কির বারবার প্রদর্শন ঘটিয়েছেন জনসমক্ষে। হাতে হাভানা চুরুট হাতে একাধিকবার ধরা পড়েছেন ক্যামেরার লেন্সে।
ফুটবলের বরপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আর্য়ান্সের একেবারে হতদরিদ্র ঘর থেকে চরম ক্ষুধা-আর দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্ব ফুটবলকে শাসন করেছেন। তার বাঁ পায়ে যেন ছিল জাদু। বিশ্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের জীবনের পরতে পরতে ছিল দারিদ্র, নিপীড়িন। সেই তিনিই পরবর্তীতে এই নিপীড়িতদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন। ফুটবল খেলেও যে দারিদ্র ঘোচানো যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মূলত তাঁতে দেখেই আর্জেন্টিনার পরবর্তী একটা প্রজন্ম নেশার জগৎ থেকে দূরে সরে পায়ে তুলে নিয়েছিলেন ফুটবল।
কয়েকদিন আগে সার্বিয়ান সংবাদপত্র পলিটিকায় দেয়া এক অকপট সাক্ষাৎকারে মারাদোনা বলেছিলেন, ‘বুয়েন্স আর্য়ান্সের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত অংশ ফ্যাবেল ফিওরিটোতে আমার জন্ম। অঞ্চলের দারিদ্রের রূপ এখনও আগের মতোই আছে। বন্ধুরা এখনেও সেই আগের মতোই আছে। শুধু রাজনীতিবিদ আর সরকারি লোকেরাই দিনদিন ধনী হয়েছে।’ অকপট স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছিলেন, ‘ধনী হওয়ার সুযোগ আমারও ছিলো। কিন্তু আমি সুযোগ নিইনি, কারণ সেটা করতে গেলে আমায় গরিবের পেটে লাথি মেরে তাঁদের কাছ থেকে চুরি করতে হত।’
মারাদোনা একবার গরিবদের কথা বলার লক্ষ্যে আর্জেন্টিনার রাজনীতিতেও যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ ছিল, সেই সময় কেউ তাঁর একটি কথাও শোনেননি। ফলে তাঁকে সরে আসতে হয়েছিল রাজনীতির ময়দান থেকে। আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল কিংবা কিউবা - দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশগুলোতেই সমস্যা—দারিদ্র। মারাদোনা মনে করতেন, প্রথম বিশ্বের ধনী দেশগুলিই এই দীনতার জন্য দায়ী। মারাদোনা কুশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। তাঁর অভিযোগ ছিল স্বয়ং পোপ থেকে শুরু করে সব দেশের রাজনীতিবিদেরা। তাঁর বক্তব্য ছিল, কেউ গরিবদের পক্ষে কথা বলেন না। বার্লিনের প্রাচীর ধ্বংসের পরে সারা পৃথিবীতে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে ন'গুণ। কিন্তু তা দেখার কেউ না থাকায় তাঁর আক্ষেপ ছিল। জীবনের শুরুতেএকটা সময় আর্জেন্টিনার নব্যউদারনীতিবাদী প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেমকে সমর্থন করতেন তিনি।
কিউবায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানকার বামপন্থী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মারাডোনার পায়ে কাস্ত্রোর প্রতিকৃতির ট্যাটুও ছিল। ডান হাতে ছিল স্বদেশী বিপ্লবী চে গুয়েভারা প্রতিকৃতি। নিজের আত্মজীবনী এল দিয়েগো উৎসর্গ করেছিলেন যে কয়েকজন মানুষের প্রতি, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো অন্যতম।
ভেনেজুয়েলার মার্কিন বিদ্বেষী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুগো চ্যাভেজেরও সমর্থক ছিলেন মারাদোনা। ২০০৫ সালে চ্যাভেজের সাথে সাক্ষাতের জন্য তিনি ভেনেজুয়েলাও গিয়েছিলেন।নিজেকে চ্যাভেজে বিশ্বাসী 'চ্যাভিস্তা' বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘ফিদেল, চ্যাভেজ যা করে, আমার কাছে সেগুলোই ঠিক।’
২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার মার দেল প্লাটায় সামিট অফ দ্য আমেরিকাস-এ তিনি আর্জেন্টিনায় জর্জ ডব্লিউ বুশের উপস্থিতির বিরোধিতা করে একটি টি-শার্ট পরেছিলেন, যাতে লেখা ছিল 'STOP BUSH'। বুশকে তিনি 'আবর্জনা'-র সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন। একটা সময় তিনি প্রকাশ্যেই তার মার্কিন বিদ্বেষী মনোভাব ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমি সেইসব কিছুকেই ঘৃণা করি যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। আমি ঘৃণা করি আমার সর্বশক্তি দিয়ে।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।