‘পাহাড়-চুড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল/আমি এই পৃথিবীকে পদতলে রেখেছি..’ পাহাড়ের প্রতি বাঙালির এক অদ্ভূত ভালোবাসা রয়েছে। যে কারণে বোধহয় বাঙালিদের মধ্যে পর্বতারোহীর সংখ্যা হাতে গুনে শেষ করা কঠিন কাজ। পাহাড়ের টানেই পর্বতারোহীরাই বেরিয়ে পড়েন দুর্গম শৃঙ্গ জয়ের অভিযানে।
এই যেমন ৪৫ বছরের শিক্ষিকা রুণা দে বেরিয়ে পড়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের ট্রেলস পাস অভিযানে। এবং সেই সঙ্গে তিনি গড়ে ফেললেন নজির। প্রথম বাঙালি ও দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা হিসেবে পার করলেন দুর্গম ট্রেলস পাস।
কুমায়ুন হিমালয়ে দুর্গম উচ্চতায় পিন্ডারি হিমবাহের উপরে অবস্থিত পাসটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ২৫০ মিটার উপরে। নন্দাদেবী ও নন্দাকোট পর্বতশৃঙ্গের মাঝে অবস্থিত ট্রেলস পাসের নামকরণ হয়েছে ১৮৩০ সালে কুমায়ুনের প্রথম ব্রিটিশ হাই কমিশনার, যিনি নিজেও একজন অভিযাত্রী ছিলেন, সেই জর্জ উইলিয়াম ট্রেলের নাম অনুসারে। এই পাসে অভিযান করা নিঃসন্দেহে কঠিন।
১৫ জুন চার অভিযাত্রীর এক দল এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ ট্রেলস পাস অতিক্রম করেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনই বাঙালি। রুণা ছাড়া এই দলে ছিলেন রাজু চক্রবর্তী, সুমন্ত বসু এবং জিবিন জোসেফ। জিবিন কেরলের প্রথম ব্যক্তি যিনি এই পাস অতিক্রম করলেন। অভিযাত্রী দলের নেতা ছিলেন আসানসোল নিবাসী রাজু চক্রবর্তী।
যেদিন রওনা দেবেন সেদিন ভার্টিগো সমস্যায় ভুগতে থাকা শ্রীজিতা বমি করতে করতে কাহিল। মাঝপথে আবার বাড়ি থেকে খবর আসে অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন রুণার শ্বশুর। এই সব বাধা অতিক্রম করেও জেদ ও ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লক্ষ্যের দিকে। যদিও ট্রেলস পাস ও রুণার মাঝে ছিল এর থেকেও বড় এক বাধা। ট্রেকিংয়ের কিছুই জানা নেই তাঁর। এখনও পর্যন্ত যত অভিযান করেছেন, সবই শখে ও হুজুগে। কিন্তু অন্যান্যবারের থেকে এবারের পার্থক্য বিশাল। খরস্রোতা নদী, খাড়া পাহাড়ি ঢাল। টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলে সফল হওয়া মুশকিল। যাইহোক সেই পাস পার করে শুক্রবার বাড়ি ফিরেছেন রুণা। তবে সব বাধা পার হয়ে, রুণা ফের নতুন কোনও অভিযানে যাওয়ার এখন দিন গুনছেন।