৩২ বছর বয়সী তাজমিন ব্রিটস । দক্ষিণ আফ্রিকার মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। চলতি মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তাঁর ব্যাটিংয়ের ভর করেই প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ইংল্যাল্ডের বিরুদ্ধে জয়ের পর সকলের নয়নের মনি হয়ে উঠেছেন তাজমিন ব্রিটস।
শুরুটা এতটা সহজ ছিল না তাজমিনের। ব্রিটসের পরিবারের সকলেই অ্যাথলিট। তাঁর মা একজন টেনিস খেলোয়াড় বাবা এবং ভাই রাগবি খেলোয়াড়। স্বাভাবিক ভাবেই খেলাধূলার দিকেই এগিয়েছেন তাজমিন। তবে শুরুটা হয়েছিল জ্যাভলিন থ্রোয়ার হিসাবে। ২০০৭ সালে চেক প্রজাতন্ত্রে ১৬ বছর বয়সে জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেন তাজমিন। ২০১২ সালে অলিম্পিক্সে দক্ষিণ আফ্রিকার দলের হয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান তিনি।
এর পর এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। তাজমিন সেই সময় সিট বেল্ট পরে না থাকার কারণে গাড়ির উপরে এসে পড়ে। ফলে কোমর থেকে পা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসেন তিনি। দীর্ঘ দিন তাঁকে হুইলচেয়ারে বসে কাটাতে হয়। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কিছু দিন পরে, ফের তাঁর অস্ত্রোপ্রচার করতে হয়।
সেই দুর্ঘটনার ফলে তাজমিনের অলিম্পিক্সের স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে যায়। এমন সময় গিয়েছে, যখন তিনি স্থানীয় একটি মুদির দোকানে পরিচারিকার কাজও করেছেন । তবে ভাগ্য দেবতা তাঁর জন্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করেন ক্রিকেট খেলা। স্থানীয় কিছু টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলার পর জাতীয় দলের হয়ে খেলার ডাক আসে তাঁর কাছে।
২০১৮ সালে তাজমিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটান। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি খেলার জন্যই তাঁকে দলে নেওয়া হয়। তবে ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি খেলেননি। হেরে যাওয়া যে তাঁর ধর্মে নেই। ঘুরে দাঁড়ান ২০২১ সালে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়। নিউজিল্যান্ডে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলেন তিনি।
চলতে টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। শুরুর দুই ম্যাচে রানও পাননি তাজমিন। গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫০ ও ৪৫ রান করেন। সেমিফাইনাল ম্যাচে তিনি করেন ৫৫ বলে ৬৮ রান। মারেন ৬টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারি।
ম্যাচের শেষে তাজমিন বলেন, ‘আমি এখন আর জ্যাভলিন খেলিনা। তবে আমি খুব অল্প বয়সে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তার অনুভূতি সব সময় আলাদা। তবে এখন আমরা যদি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারি তাহলে জ্যাভলিনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দকে টপকে যেতে পারে এই বিশ্বকাপ জয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ভগবান আমার উপর খেয়াল রেখেছেন। তার জন্যই আমি পথ পরিবর্তন করে ক্রিকেটে আসতে পেরেছি।’ আরও কয়েক বছর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি।