ম্যাচের শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুখে হালকা হাসি অজিঙ্কা রাহানের! সেটা কি আনন্দ-স্বস্তির হাসি নাকি লুকানো আগ্রাসনের হাসি? সম্ভবত সবগুলিই হবে। আর হবেই বা না কেন? একটা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া দলের নেতৃত্ব হাতে পেয়েছিলেন। সেখান থেকে কয়েকদিনের ব্যবধানে দলকে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়েছেন। রন্ধ্রে রন্ধ্রে লড়াই, অদম্য জেদের বার্তা ঢুকিয়েছেন। সেই দলের ঐতিহাসিক জয়ের পর কার্যত ভাষা হারালেন রাহানে। বললেন, ‘এই জয়কে কীভাবে ব্যাখ্যা করব, জানি না।’
সোমবার চতুর্থ দিনের পিচের যা অবস্থা ছিল, তা দেখে বছরখানেক আগেও অতি বড় ভারতীয় সমর্থকও জয়ের আশা করতে পারতেন না। ক্রিকেটীয় দিক থেকে সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত কম ছিল। কিন্তু মেলবোর্ন, সিডনি এবং ব্রিসবেনে ভারত যে অদম্য লড়াই, দৃঢ়প্রতিজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিল, তাতে ভর করেই এবার জয়ের সামান্য আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। আর সেই অদম্য লড়াইয়ের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিসবেনে ইতিহাস রচনা করেছে ভারত। ৩২ বছর পর গাব্বায় অস্ট্রেলিয়াকে হারাল কোনও দল। সঙ্গে টানা দু'বার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি জেতার নজির গড়েছে রাহানের ভারত।
সেই জয়ের পর স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত রাহানে। বলেন, ‘এই জয়ের গুরুত্ব আমাদের কাছে অত্যন্ত বেশি। আমি জানি না, কীভাবে এই জয়কে ব্যাখ্যা করব। আমি প্রত্যেক ছেলের জন্য গর্বিত। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য (গর্বিত)। ফলাফলের বিষয়ে চিন্তা না করে আমাদের সেরাটা উজাড় করে দিতে চেয়েছিলাম।’
এবারের অস্ট্রেলিয়া সিরিজে চার ম্যাচই খেলেছেন মাত্র দু'জন - চেতেশ্বর পূজারা এবং রাহানে। বাকি তিন টেস্টে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খেলোয়াড় উঠে দাঁড়িয়ে দলকে এগিয়ে গিয়েছেন। তাতে রাহানের অবদান নেহাত কম নয়। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মধ্যে বিশ্বাস ঢুকিয়েছিলেন, তাঁরাই ম্যাচে ফারাক গড়ে দিতে পারবেন। আর অধিনায়ক রাহানের ভরসার মর্যাদা দিয়েছেন নবাগতরাও। তিন টেস্ট এবং ১০ বলের অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামা বোলিং বিভাগ তুলেছে অস্ট্রেলিয়ার ২০ উইকেট। তবে অনেকেই কুলদীপ যাদবের পরিবর্তে ওয়াশিংটন সুন্দরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই সঙ্গে পাঁচ বোলারের নীতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। সেই প্রশ্ন অবশ্য প্রথমদিন থেকেই ফিকে শুরু করেছিল। তৃতীয় দিন তা পুরোপুরি উবে গিয়েছিল। তখনই রাহানে আরও একবার প্রমাণ করেছিলেন, অতিরিক্ত আগ্রাসনে যান না। কিন্তু কখন, কোথায় কী কৌশল নিতে হবে, দলের থেকে কী চান, সে বিষয়েও তাঁরা মাথায় এতটুকুও সন্দেহের অবকাশ থাকে না।
ম্যাচের শেষে পাঁচ বোলারের নীতি প্রসঙ্গে রাহানে বলেন, ‘২০ উইকেট নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটাই আমরা ঠিক করেছিলাম। আর সেজন্যই আমরা পাঁচ বোলার খেলিয়েছিলাম। ওয়াশিংটন সুন্দরের ফলে দলে ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল। পাঁচ বোলার খেলানোর লক্ষ্য প্রথম থেকেই ছিল। সিরাজ দুটি টেস্ট খেলেছিল, (নভদীপ) সাইনি একটি, (শার্দুল) ঠাকুর একটি এবং (টি) নটরাজনের অভিষেক ম্যাচ ছিল। সমস্ত কৃতিত্ব ওদের।’
অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। চোট পেয়েছিলেন উমেশ যাদব। যত টেস্ট গড়িয়েছে, তত লম্বা হয়েছে চোট-আঘাতের তালিকা। কিন্তু কখনও বিশ্বাস হারাননি। দলের মধ্যে অভাবনীয় এক শান্ত পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। রাহানে বলেন, ‘অ্যাডিলেডে কী হয়েছিল, সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করিনি। আমরা শুধু আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে চেয়েছিলাম। মাঠে চারিত্রিক দৃঢ়তা, মনোভাব তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। এটা পুরোপুরি দলগত প্রচেষ্টা ছিল। যাঁরা আমাদের সমর্থন জুগিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
তিনটি টেস্টে রাহানে যেভাবে দলকে নেতৃত্ব দিলেন, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট - এটা বিরাট কোহলির যুগ হতে পারে। কিন্তু এই ঐতিহাসিক সিরিজ জয়টা রাহানের। এই দলটা তাঁর। এই দলের খেলোয়াড়রা তাঁর নেতৃত্বে ঐতিহাস রচনা করেছেন। খোদ রাহানে নিশ্চয়ই সেই কথা মানবেন না। কারণ তিনি তো টিমম্যান। তাই সব কৃতিত্ব দলকে দেবেন। ভালো সময় দলকে এগিয়ে দেবেন। যেমনভাবে সিরিজ জয়ের ট্রফিটা নটরাজনের হাতে তুলে দিলেন। সেটায় যেন আরও স্পষ্ট হল, রাহানে কতটা ভালো অধিনায়ক।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।