১৩ বছর বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু তাঁর। নেট বোলার হিসেবে এসেছিলেন বাংলা মহিলা দলের অনুশীলনে। যাঁকে দেখেই ঝুলন গোস্বামী মুগ্ধ হয়েছিলেন। নির্বাচকদের বলেছিলেন, ‘মেয়েটির উপরে নজর রাখুন।’ সেই মেয়েটি নিরাশ করেননি ঝুলনকে। মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা তিতাস সাধুও ভোলেননি ঝুলনকে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাঁর মুখে শুধুই ঝুলনের কথা।
আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিতাস বলেছেন, ‘বাংলার অনুশীলনে নেটবোলার হিসেবে গিয়েছিলাম। ঝুলনদি (গোস্বামী) ছিলেন সেই অনুশীলনে। আমার বোলিং দেখে খুশি হয়েছিলেন। সেই সময় বাংলা দলের কোচ ছিলেন শিবশঙ্কর পাল। ঝুলনদি নিজে গিয়ে কথা বলেছিলেন ওঁর সঙ্গে। তার পরে দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে আমাকে নেওয়া হয়। সেখানেও উইকেট পাই। বলতে পারেন, বাংলার হয়ে সেই প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে।’
ঝুলনের থেকে অনেক পরামর্শও পেয়েছেন তিনি। ঝুলন বলছিলেন, ‘আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন উনি। কী ভাবে গতি বাড়ানো যায়, লাইন এবং লেংথ কী রকম থাকা উচিত। বিশ্বকাপ জেতার পরে আমাকে মোবাইলে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। সব সময়ই ওঁর থেকে কিছু না কিছু শেখা যায়।’
আরও পড়ুন: একানার পিচ নিয়ে ক্ষোভ, চাকরি গেল পিচ কিউরেটরের
ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে চার ওভারে মাত্র ছ’রান দিয়ে তিতাস তুলে নিয়েছেন দুই উইকেট। একাই ভেঙে দেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-অর্ডারের মেরুদণ্ড। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত তিতাস। বলছিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকাতেই আমাদের নিয়ে যা উন্মাদনা হচ্ছে, জানি না ভারতে পৌঁছলে কী হবে! তবে এত দিনের পরিশ্রম সফল হল। বাবা দীর্ঘদিন আমার জন্য পরিশ্রম করেছেন। তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। বন্ধুরা আমাকে নিয়ে গর্বিত। এই অভাবনীয় প্রাপ্তির আনন্দ বোধহয় আর কিছুতেই নেই।’
ফাইনালের আগের দিন ড্রেসিংরুমে গিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী নীরজ চোপড়া। সেই প্রসঙ্গে তিতাস বলছিলেন, ‘নীরজ ভাইয়ার মতো ব্যক্তিত্বকে সামনে থেকে দেখার পরেই আমরা উদ্বুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। উনি আমাদের বলেছিলেন ফাইনাল ম্যাচ নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনের সব চেয়ে বড় পরীক্ষা কিন্তু সেটা ভেবে যেন চাপে না পড়ে যাই। অবশ্যই যেন সেটা উপভোগ করি। আমরা তাই করেছি। নীরজ ভাইয়া অলিম্পিক্সে কী ভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই কাহিনিও শুনিয়েছেন সকলকে।’
এর সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদক জয়ের দিনে মনে করে বলেছিলেন, তাঁর চেয়ে ভালো কেউ জ্যাভলিন ছুড়তে পারবেন না। সেই কথাটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। ফাইনালের আগে মনে হচ্ছিল, এই মঞ্চ আমার। নতুন বল হাতে পেয়ে বেশি কিছু চিন্তাই করিনি। শুধু ঠিক জায়গায় বল রেখেছি। গতি ও সুইংই বাকি কাজটা করে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: ইশানের খারাপ পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যানে লাইক করে কী বার্তা দিলেন KKR তারকা নীতিশ?
ছেলেবেলায় অ্যাথলেটিক্স হতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেখানেই থামেননি তিতাস। সাঁতার নিয়েও ভাবনাচিন্তা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে কেন ২২ গজকেই বেছে নিলেন? তিতাস বলছিলেন, ‘আমাদের পারিবারিক ক্লাব আছে চুঁচুড়ায়। জেলা স্তরে ক্লাব ক্রিকেট খেলে। সেই দলের খেলা দেখতে যেতাম। ক্রিকেটারদের জল দিতাম। ওদের সঙ্গে অনুশীলনও শুরু করেছিলাম ১৩ বছর বয়সে। ছোটবেলায় জোরে বল করতাম। বাবা বুঝতে পেরেছিলেন, ক্রিকেটের প্রতি আমার আগ্রহ বাড়ছে। সেই আগ্রহটা আর কমতে দেননি। নিয়মিত অনুশীলন শুরু করি। গতি বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও নিতে শুরু করি। এ ভাবেই পেস বোলার হয়ে ওঠা।’
জেলা স্তরের ক্লাব ক্রিকেটে তিতাস নাকি ছেলেদের পরিচয়েও খেলেছেন। নিজেই সে কথা স্বীকার করেছেন। বলছিলেন, ‘আমি মেয়ে বলে জেলা স্তরের ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে দিচ্ছিল না। তাই পুরুষের নামে খেলেছিলাম। সফলও হয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৫ স্তরে ছেলেদের দলের হয়ে প্রচুর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। সেখানেও সফল। এখন বুঝি, সেই প্রতিযোগিতাগুলো আমাকে এই উচ্চচায় তুলে আনতে কতটা সাহায্য করেছে।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর তিতাসের লক্ষ্য কী থাকছে? তিনি বলছিলেন, ‘ভারতের সিনিয়র দলে নিয়মিত খেলাই লক্ষ্য। তার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেব। ঝুলনদি বলেছেন, অনুশীলনের মান উন্নত করতে। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী নিশ্চয়ই পরিশ্রমের মাত্রা বাড়াব। আশা করি, ভারতীয় দলের হয়েও একদিন বিশ্বকাপ জিতব।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।