শুভব্রত মুখার্জি: ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকের মঞ্চে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় জিমন্যাস্ট তথা ত্রিপুরার মেয়ে দীপা কর্মকার। সিমোনে বাইলসের মতো জিমন্যাস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেইবার পদক না জিততে পারলেও চতুর্থ স্থানে শেষ করেন দীপা।এরপরেই দীর্ঘ সময় চোট এবং পরবর্তীতে ডোপিংয়ের কারণে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছিল তাকে। তাঁর ' সিগনেচার মুভ' নিঃসন্দেহে প্রদুনোভা। জিমন্যাস্টিক্সের ইতিহাসে যা অন্যতম বড় ঝুঁকিপূর্ণ তবে স্কোরিং মুভও বটে। তবে এবার সেই প্রিয় প্রদুনোভাকেই আলবিদা জানাচ্ছেন দীপা কর্মকার। নয়া মুভে এবার জিমন্যাস্টিক্সের পদক জেতার লড়াই করবেন তিনি।সেকথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দীপা কর্মকার।
পিছনের দিকে তাকাতে একেবারেই অরাজি দীপা। তিনি জানেন ডোপিং অভিযুক্তদের কতোটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বাস্তব জীবনে। দীপা বলেন, 'যা ঘটে গিয়েছে তাকে তো আমি আর ফেরাতে পারব না। আমি জেনেবুঝে ওই খারাপ ড্রাগটা নিইনি। ফলে আমি নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার ছিলাম। আমার জীবনের অন্যতম কালো অধ্যায় সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে আমি আরো শক্তিশালীভাবে ফিরে আপার অঙ্গিকার মনে মনে করে ফেলেছিলাম। আমি এমন একটা খেলার সঙ্গে যুক্ত যেখানে প্রতিদিন মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। আমি এই কারণেই জানি লোকে যতটা না আমাকে দুর্বল ভাবুক তার থেকেও বেশি শক্তিশালী আমি '
২০২১ সালের ১১ অক্টোবর প্রতিযোগিতার বাইরে ও আন্তর্জাতিক টেস্টিং এজেন্সি দীপার মূত্রের নমুনা প্রয়োগ করে। হাইনামাইন নামক নিষিদ্ধ ড্রাগের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল তাঁর মূত্রে। তাঁর শাস্তি তিনমাস কমানোর পরেই তিনি ফের কামব্যাক করেছেন। ১০ জুলাই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ফুরিয়েছে দীপার। হাংঝাউতে অনুষ্ঠিত হতে চলা এশিয়ান গেমসের ভারতীয় দলেও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ট্রায়ালের মধ্যে দিয়ে। অল রাউন্ড ইভেন্টে ৪৭.০৫ পয়েন্ট স্কোর করে ট্রায়ালে শীর্ষে শেষ করেন তিনি।
তিনি আরও যোগ করেন, 'আমি মুক্তমনে ট্রায়াল দিতে নেমেছিলাম। আমি আরও ভালো করতে পারতাম। তবে জাতীয় দলে ফিরতে পেরে আমি খুশি। এতদিন পড়ে লড়ছি যা আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে, নিজের মনে চিন্তা তৈরি করতে পারে। তবে আমার সেইসব কিছু হয়নি। মানসিকভাবে নিজেকে ভালো জায়গায় আমি রেখেছিলাম। নিজের পুরনো ভিডিয়ো দেখে আমি এটা করতে সম্ভব হয়েছি। অনেকদিন হয়ে গেল রিও অলিম্পিকের। আমি খুশি যে মানুষ এখনও আমার সেখানকার প্রদুনোভা ভল্টকে মনে রেখেছে। আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। আমার মধ্যে এখন ও অনেক খেলা রয়েছে। চোটের কারণে আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার প্রথম সপ্তাহে ও খুব কেঁদেছিলাম। তবে এরপরেই নিজেকে বোঝাই আমার এখন ও অনেক খেলা বাকি রয়েছে। '
কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী বলেন, 'আমাকে অ্যাথলেটিক্সের ক্যারিয়ার শেষের পরে দীপার জীবন নিয়ে ও ভাবতে হবে। কয়েক বছর ধরে হাঁটু ওঁকে খুব সমস্যায় ফেলছে। আমি ওঁকে একটা পদকের জন্য খুব বেশি চাপের মধ্যে ফেলতে পারি না। আমি যদি এখনও ওঁকে ওটা (প্রদুনোভা) করতে বলি ও চোখ বুজে করে দেবে। তবে এটা ওঁর ক্যারিয়ারকে ফের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। পুরনো ভল্ট ভুলে গিয়ে নতুন ভল্ট শেখাটাও খুব একটা সহজ কাজ নয়। দীপার ক্ষেত্রে তো আরো কঠিন। কারণ দীর্ঘদিন ও লড়াই করেনি। ২-৪ মাস সময় লাগে একটা ভল্টকে সঠিকভাবে শিখতে। অনেক সময় অনেক ভল্ট ভালোভাবে শিখতে একটা বছর ও সময় লেগে যায়। নির্বাচনী ট্রায়ালে দীপা শুধুমাত্র ৩৬০ পদ্ধতির ভল্ট করেছে। যা ৭২০ বা ৫৪০ ঘরানার ভল্ট থেকে অনেকটাই সহজ। এই মুহূর্তে ব্যাকওয়ার্ড ভল্ট 'শুকাহারা'তে মনোনিবেশ করেছে দীপা। এই ভল্টের মধ্যে রয়েছে দুটি ব্যাকওয়ার্ড স্পিন, ফরোয়ার্ড হ্যান্ডস্প্রিং ৫৪০।এই ভল্টগুলি খুব হাই স্কোরিং ভল্ট । তবে খুব সহজেই এত কিছু ভালোভাবে শেখা সম্ভব নয়।এর জন্য প্রয়োজন শক্তি, অনুশীলন এবং আত্মবিশ্বাস। যদিও আমাদের হাতে সময় রয়েছে এইসব ভল্ট ভালোভাবে শেখার। আন্তর্জাতিক স্তরে ঝুঁকি না নিলে পদক নেওয়া যাবে না।পদক পেতে গেলে অন্যের থেকে আলাদা কিছু করতেই হবে।'
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।