শুভব্রত মুখার্জি: ইউরো কাপ ২০২০'র ডেনমার্ক বনাম ফিনল্যান্ড ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎ করেই ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের মনে ফিরে এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলীয় ফুটবলার জুনিয়রের ঘটনা। সেবারও ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই গোলকিপারের সঙ্গে সংঘর্ষে মাঠে লুটিয়ে পড়েছিলেন জুনিয়র। ভারতের ফুটবল মাঠে চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে সেবার জুনিয়রের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তবে কোপেনহেগেন সাক্ষী থাকল এক বিরল ঘটনার। ডেনমার্ক বুঝিয়ে দিল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ভাল হলে মাঠে বসেই মিরাকেল ঘটানো সম্ভব। ডেনমার্ক বনাম ফিনল্যান্ড ম্যাচের প্রথমার্ধের ঘড়ির কাটা তখন ৪২ মিনিট। ফিনল্যান্ডের ডি বক্স পেরিয়ে সাইডলাইন ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করেই সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন এরিকসেন। একটা থ্রো তার হাঁটুতে এসে লাগে। তার আশেপাশে নিজের দলের বা ফিনল্যান্ডের কোন ফুটবলার ছিলেন না। ঘটনা দেখতে পেয়েই তার গুরুত্ব অনুধাবন করে ফেলেন ফুটবলাররা। রেফারি কল দিয়ে দেন মেডিক্যাল টিমকে। বোল্টসুলভ গতিতে দৌড়ে এসেই ডেনমার্কের দলীয় ডাক্তার তখন এরিকসেনের জামা বুকের উপর থেকে টেনে সরিয়ে দিয়েছেন। একের পর এক হ্যান্ড পেসার দিয়ে বুকে চেস্ট পাম্প মুহুর্মুহু করে চলেছেন তিনি। অপর ডাক্তার তার মুখে মুখ লাগিয়ে এয়ার সাকশান চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে মস্তিস্কে আক্সিজেনের ঘাটতি না ঘটে। একেবারে নিখুঁত কায়দায় ডাক্তারি পরিভাষায় করা 'সিপিআরে'ই মাঠেই হল ম্যাজিক। যে এরিকসেন নড়াচড়া একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি খুলে ফেললেন তার চোখ। আস্তে আস্তে তার হাত, পায়েও সাড়া অনুভব করতে শুরু করলেন।
মাঠেই তার মুখে লাগানো হল অক্সিজেন মাস্ক। হাতে চ্যানেল করে ঢুকিয়ে দেওয়া হল স্যালাইন। কাল বিলম্ব না করেই পাশেই রিগসে অবস্থিত হাসপাতালে যোগাযোগ করা হল। এই পুরো ঘটনা চলাকালীন তাকে ঘিরে ছিলেন তার সতীর্থ এবং বিপক্ষ দলের ফুটবলাররা। গ্যালারিতে কোন সমর্থকের চোখ অশ্রুসিক্ত, তো কোন সমর্থক ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছেন। টিভির পর্দায় বিশ্বজোড়া অগনিত সমর্থক তখন প্রার্থনায় মত্ত। যাতে সুস্থ হয়ে যান ইন্টার মিলানে খেলা দেশের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডের এই নায়ক। টাচলাইনের ধারে উৎকন্ঠিত স্ত্রী তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন ক্যাসপার স্কিমাইচেল।
সমস্ত প্রার্থনা কাজে দিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর এরিকসেনের জ্ঞান ফিরতেই কাল বিলম্ব না করে তাকে স্ট্রেচারে তোলা হল। রিগসের হাসপাতালে আগেই বলা ছিল। এরিকসেনকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর পরেই কোপেনহেগেনের পার্কেন স্টেডিয়াম থেকে রিগসছর হাসপাতালে গ্রীন করিডর দিয়ে ছুট লাগাল অ্যাম্বুলেন্স। রিগসের হাসপাতাল ছিল তৈরি। সেখানেই পৌছতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হর আইসিইউতে। তার শরীরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার তৎক্ষনাৎ পরীক্ষা করে দেখলেন ডাক্তাররা। জানানো হল বিপদ কিছুটা হলেও কেটেছে। আপাতত শারীরিকভাবে স্থিতিশীল এরিকসেন। বিশ্ব সাক্ষী থাকল এক দৃঢ়চেতা মেডিক্যাল দলের। যারা কোন কালবিলম্ব না করে ঝাপিয়ে পড়ে রক্ষা করলেন এক তরুন প্রতিভাবান ফুটবলারের প্রান। তবে সবকিছূর পড়েও থেকে গেল বড় আশঙ্কা। এই ঘটনার পরে আর কোনদিন ফুটবল মাঠে ফিরতে পারবেন তো এরিকসেন! খেলতে পারবেন কি তার ভালবাসার এই খেলাটি! এর উত্তর সময়ের সাথে সাথে মেডিক্যাল সায়েন্স নিশ্চয় দেবে। তবে আপাতত সম্মিলিত প্রাথর্নার অপাড় মহিমার সাক্ষী থাকল গোটা বিশ্ব।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।