শেষ ইস্টবেঙ্গলের সুপার সিক্সের আশা। রবিবার আইএসএলের ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র ঘরের মাঠে তাদের সঙ্গে ড্র করায় স্বপ্নভঙ্গ হল অস্কার ব্রুজোর ছেলেদের। গোটা ম্যাচে তাদের দুরন্ত লড়াই জলে গেল নিশু কুমারের ছোট্ট একটি ভুলে। যার জেরে পেনাল্টি পায় বেঙ্গালুরু এফসি। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে সুনীল ছেত্রী ১-১ করে স্বপ্নভঙ্গ করে লাল-হলুদের।
এদিন মেসি বাউলির একমাত্র গোলে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। তবে প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে দশ জন হয়ে গিয়ে মারাত্মক চাপে পড়ে যায় তারা। তার পরেও অবশ্য পুরো দ্বিতীয়ার্ধ এক গোল ধরে রেখে লড়াই চালাচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল। ৯০ মিনিট পর্যন্তও আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল তারা। কিন্তু শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিই ডোবাল লাল-হলুদকে। এই ড্রয়ের ফলে ২৩ ম্যাচে এখন ২৮ পয়েন্টে ইস্টবেঙ্গলের। লিগ তালিকার আট নম্বরেই থাকল তারা। তবে আর কোনও অঙ্কেই সুপার সিক্সে উঠতে পারবে না অস্কার ব্রুজোর টিম।
এদিন ইস্টবেঙ্গল শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজেই ছিল। শুরু থেকেই আগ্রাসী ফুটবল খেলতে দেখা যায় তাদের। প্রচুর সুযোগ তারা তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। যার খেসারতও ম্যাচ ড্র করে দিতে হল লাল-হলুদকে। প্রথমার্ধে অন্তত চার গোলে এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। পিভি বিষ্ণু একাই দু'টি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। তবে ম্যাচের ১১ মিনিটে লাল-হলুদ ব্রিগেডের হয়ে গোলের দরজা খুলে দিয়েছিলেন মেসি বাউলি। বেঙ্গালুরুর বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন সাউল ক্রেসপো। তার আগে মেসির সঙ্গে পাস খেলেন তিনি। এদিকে ক্রেসপো বক্সে ঢুকে মাটিতে পড়ে গেলেও, তাঁর পা থেকে বল বের করতে পারেননি বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার। সেই বল ধরে কিছুটা এগিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো নীচু শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। এই গোলের আগে এবং পরে বিষ্ণু যেভাবে গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন, সেটার জন্য ম্যাচের পর তাঁকে কপাল চাপড়াতে হচ্ছে।
এদিকে ম্যাচের ২৯ মিনিটে হ্যামস্ট্রিং পেশিতে চোট পান আনোয়ার আলি। এটা লাল-হলুদ ব্রিগেডের কাছে যে সুখবর হবে না, তা বলাই বাহুল্য। ইতিপূর্বে চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছেন দলের আর এক ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের। এই পরিস্থিতিতে আনোয়ারের চোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা লাগে না। লাল-হলুদ সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খায় প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে। ৪৭ মিনিটে দিয়ামান্তাকোস লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। বেঙ্গালুরুর অ্যালবার্ট নগুয়েরার সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান দিয়ামান্তাকোস। ইস্টবেঙ্গলের গ্রিক স্ট্রাইকার তাঁর মাথা দিয়ে ঢুঁসো মারেন নগুয়েরাকে। যার জেরে দিয়ামান্তাকোসকে কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি।
এক জন ফুটবলার কমে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলকে ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলতে হয়েছে। রক্ষণ শক্তিশালী করার জন্য লাকরাকে তুলে নিশু কুমারকে নামান অস্কার ব্রুজো। এদিকে সুযোগ পেয়ে বেঙ্গালুরু চাপ তৈরি করতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গলের উপর। তবে গোলমুখ খুলতে পারছিল না তারা। মেন্ডেজ একটি সুযোগ নষ্ট করেন। এদিকে খেলার বিপরীতে প্রতি আক্রমণেও উঠছিল লাল-হলুদ। তবে সবচেয়ে বড় কথা, দশ জনে খেলেও বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠে সুনীল ছেত্রীদের আটকে রেখেছিলেন অস্কার ব্রুজোর ছেলেরা। প্রাণপণ তাঁরা লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা যখন সেলিব্রেশনে মাতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, সেই সময়েই অঘটনটা ঘটে যায়। সুনীল ছেত্রীর উদ্দেশে ভাসানো একটি বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হাতে লাগিয়ে বসেন নিশু কুমার। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টি দেন। আর বাংলার জামাই সুনীল পেনাল্টি থেকে গোল করতে কোনও ভুল করেননি। তবে গোল করার পর তিনি কিন্তু এদিন সেলিব্রেশন করেননি।
বেঙ্গালুরু এমনিতেই সুপার সিক্সে উঠে গিয়েছিল। এই ম্যাচ হারলেও তাদের কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল হারায় তাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।