মাঝ সপ্তাহে এ মরশুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, নিজেদের ঘরের মাঠে রিয়াদ মাদ্রিদের মুখোমুখি হয়েছিল। দারুণ মিডফিল্ডার, দুর্ধর্ষ দুই কোচ, সম্ভাব্য ব্যালন ডি'অর জয়ীদের উপস্থিতিতে খাতায় কলমে এই ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার প্রত্যাশা ছিল। বলতেই হচ্ছে দুই দল কিন্তু বিন্দুমাত্র হতাশ করেনি।
ম্যাচের একেবারে শুরু থেকেই গোটা ৯০ মিনিটে কী হতে চলেছে, তা পূর্বাভাস পাওয়া যায়। মাত্র দুই মিনিটে রিয়াদ মাহরেজের একেবারে নিখুঁত ক্রস থেকে কেভিন ডি'ব্রুইন হেডারে গোল করে ম্যান সিটিকে এগিয়ে দেয়। তার নয় মিনিট পরে গ্যাব্রিয়েল জেসুস যখন সিটির হয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ (রিয়ালের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে নিজের তৃতীয় গোল) করেন, সেই সময় রিয়াল কোচ কার্লো আনসেলোত্তির মুখই তাঁর দলের অবস্থার কথা বলে দেয়। ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে সিটির দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে নাজেহাল দেখায় রিয়ালকে।
তবে যে দলে করিম বেঞ্জেমা থাকে, তাদের ম্যাচে ফেরার সুযোগ সবসময়ই থাকে। ৩৩ মিনিটে ফারলান্ড মেন্ডির ক্রস থেকে ফার্স্ট টাইম শটে সিটির জালে বল জড়িয়ে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান ফরাসি স্ট্রাইকার। প্রথমার্ধে আগাগোড়া সিটি দাপট দেখালেও ম্যাচ থামে ২-১। ফিল ফডেন, রিয়াদ মাহরেজরা একগুচ্ছ সুযোগ নষ্ট না করলে, এই অর্ধেই সিটি চার-পাঁচটি গোল দিয়ে দিতে পারত। প্রথামর্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও একইরকমভাবে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় করে সিটি। সাবস্টিটিউট হিসাবে রাইট ব্যাকে নামা ফার্নান্দিনহোর ঠিকানা লেখা ক্রস থেকে ফডেন ৫৩ মিনিটে স্কোর ৩-১ করেন।

তবে ফডেনের গোলে অ্যাসিস্ট দিয় হিরো হওয়ার মাত্র দুই মিনিট পরেই ম্যান সিটির গোল খাওয়ার জন্যও দায়ী দলের অধিনায়ক ফার্নান্দিনহো। স্বদেশীয় ভিনিসিয়াস জুনিয়র মাঝমাঠে তাঁর পায়ের ফাঁকা দিয়ে বল গলিয়ে যে দৌড় শুরু করেন, তা থামে বল সিটি গোলে জড়িয়ে দেওয়ার পর। ম্যাচে ফেরত আসে রিয়াল। নাটকের এখানেই শেষ ছিল না। ৭৪ মিনিটে জিনচেঙ্কোকে পেনাল্টি বক্সের একটু বাইরে ফাউল করার পর, সকল রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় কার্যত খেলা থামিয়ে দেন। তবে রেফারি ফাউল দেওয়ার বদলে অ্যাডভান্টেজ খেলান এবং তা থেকেই আরও একটি অসাধারণ গোলে সিটিকে দুই গোলের ব্যবধান আরও একবার এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন বার্নাডো সিলভা।
ম্যাচের ৮২ মিনিটে পেনাল্টি বক্সে আয়েমরিক লাপোর্ত বল হাতে লাগানোয়, পেনাল্টি পায় রিয়াল মাদ্রিদ। গত সপ্তাহে লা লিগায় দুইটি পেনাল্টি মিস করলেও, এই ম্যাচে পানেনকা মেরে রিয়ালকে ফের একবার ম্যাচে ফেরান বেঞ্জেমা। প্রসঙ্গত, এটি এই মরশুমে তাঁর ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গোল, যার সুবাদে তিনি রবার্ট লেওয়ানডোস্কিকে টপকে এবারের টপ স্কোরার হয়ে গেলেন। এ মরশুমে রিয়ালের হয়ে ৪১ ম্যাচে ৪১ গোল হয়ে গেল তাঁর। মাহরেজ এই অর্ধেই সিটির হয়ে বড় সুযোগ পান। তাঁর শট পোস্টে লাগে, ফডেনের শট কার্ভাহাল ব্লক করেন, রুবেন ডিয়াজ অল্পের জন্য দুইবার ট্যাপ ইন মিস করেন। মোটের উপর গোটা ম্যাচের সিংহভাগটা সিটি দাপট দেখালেও, মাত্র এক গোলে পিছিয়ে থাকায় রিয়াল কিন্তু হেরেও বেশ ভাল জায়গায় আছে।