শুভব্রত মুখার্জি: আগুনটা জ্বলছিল অনেক দিন ধরেই। ছাই চাপা আগুনের মত ধিকি ধিকি করে জ্বলছিল 'রিমুভ এটিকে' আন্দোলন। ময়দানে ধীরে ধীরে মোহনবাগান সমর্থকদের মধ্যে বাড়ছিল উষ্মা, রাগ, ক্ষোভ। ক্লাব কর্তাদের উপর ক্লাব সমর্থকদের সেই রাগ ঝড়ে পড়ল একেবারে মোহন সচিব দেবাশিস দত্তের বাড়ির উপর। রীতিমতো চলল হামলা। ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ক্লাব কর্তাদের মতভেদ একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল। বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতির লড়াইয়ে বাজার একেবারে গরম করলেন মোহনবাগান ক্লাবের শক্তিশালী কর্তাবাবুরা।
ক্লাবের সহসচিব ও প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সই করা প্রেস বিবৃতিতে জারি হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। যেখানে লেখা হয়েছে, ‘যে পদ্ধতিতে বর্তমান সচিবের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ চলল তা একেবারেই বরদাস্ত করা যায় না। সচিব দেবাশিস দত্ত ও সভাপতি স্বপ্নন সাধন বসুকে যেভাবে নিশানা করা হচ্ছে, তা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ক্লাবের সম্মানহানির চেষ্টা করছে একাংশ। বিক্ষোভের সময় কটুক্তি করা হয়েছে। আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ক্লাবের ঐতিহ্য এতে খুব খারাপ ভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’
প্রসঙ্গত রিমুভ এটিকে সৃঞ্জয় বসু-দেবাশিস দত্তের মতভেদ একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল।দুই শীর্ষ কর্তার ঝামেলা সকলের সামনে চলে আসার ফলে যেন আগুনে ঘৃতাহুতি হয়েছে। ক্লাবের প্রেস বিবৃতির পাল্টা সৃঞ্জয় বোস ও প্রেস বিবৃতি দিয়েছেন। সোমবার এই মরশুমের আইএসএলের প্রথম ম্যাচে চেন্নাইয়ন এফসি-র কাছে ১-২ ব্যবধানে হেরে গিয়েছে মোহনবাগান। ফলে পরিস্থিতি আরও বেশি করে ঘোরালো হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত রবিবার বাগান সচিব দেবাশিস দত্তর বাড়ির সামনে বিক্ষোভে সামিল হন বেশ কিছু মোহনবাগান সমর্থক। ক্লাবের তরফে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় এটিকের সঙ্গে মোহনবাগানের সংযুক্তিকরণের সময় ক্লাবের সচিব ছিলেন না দেবাশিস। ফলে ঘুরিয়ে আঙুল তুলে দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসুর দিকে।
প্রেস বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘এটিকের সঙ্গে যখন ক্লাবের চুক্তি হয়, তখন সচিব ছিলেন না দেবাশিস। তখনকার কার্যকরী সমিতি সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর সেই কারণেই বর্তমান সচিবকে ওই চুক্তির জন্য দায়ী করার অর্থ নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সবাই সচিব দেবাশিস দত্ত ও সভাপতি স্বপন সাধন বসুর পাশে দাঁড়াচ্ছি।’
পাল্টা বিবৃতিতে সৃঞ্জয় বসু লিখেছেন, ‘মনে করি, ময়দানের প্রতিবাদ কারও ব্যক্তিগত বাড়ির সামনে হওয়া উচিত নয়। ক্লাবের প্রেস বিবৃতিতে যা লেখা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। বলা হয়েছে, এটিকের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের সময় সচিব ছিলেন না দেবাশিস দত্ত। আগের কার্যকরী কমিটিতে পাস হওয়া সিদ্ধান্ত তিনি ফলো করছেন। ক্লাব প্রেস রিলিজে ভুল তথ্য পরিবেশেন করছে। সংযুক্তিকরণের সময় ক্লাবের কার্যকরী কমিটিতে যাঁরা ছিলেন, বেশিরভাগ সদস্য এখনও আছেন। সবাই জানে আসল সত্যিটা। ক্লাবের কার্যকরী কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে আর দেবাশিস দত্তকে দায়িত্ব দিয়েছিল, পুরো বিষয় নিয়ে এটিকের সঙ্গে আলোচনার জন্য। সেই আলোচনায় সমান দায়িত্ব ছিল দেবাশিস দত্তরও । চুক্তিপত্রে ফুটবল টিমের তৎকালীন কোম্পানির তরফে আমি এবং দেবাশিস দত্ত দু’জনেই সই করেছিলাম 'ডিরেক্টর' হিসেবে। ফলে চুক্তিপত্রের সময় কে সচিব আর কে অর্থসচিব ছিল বা ছিল না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
তিনি আরও যোগ করে লেখেন, ‘পদত্যাগ করার আগে, আমি ও দেবাশিস দত্ত ইনভেস্টরের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। নাম পরিবর্তন নিয়ে কথা হয়েছিল। ক্লাব চাইলে এখনও আলোচনায় যেতে প্রস্তুত। সদস্য-সমর্থকরাই ক্লাবের মেরুদন্ড। আমি বিশ্বাস করি, তাঁদের আবেগ এবং চাহিদাকে ক্লাব এবং ইনভেস্টর যথাযথ সম্মান দেবে।’
এই ইস্যুতে মুখ খুলে বিষয়টিকে আরও বেশি জটিল করেছেন বর্তমান সহ সভাপতি কুণাল ঘোষ। তিনিও একটি প্রেস বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘১০.১০.২০২২ তারিখে প্রচারিত মোহনবাগান ক্লাবের বিবৃতির বয়ানের সঙ্গে অনেকাংশেই একমত নই। এ বিষয়ে এক্সিকিউটিভ কমিটিতে কোনও আলোচনা হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা ও পদক্ষেপের প্রয়োজন আছে। ক্লাবের সদস্য, সমর্থকদের আবেগকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া তখনও প্রয়োজন ছিল, এখনও প্রয়োজন রয়েছে।’
ফলে একদিকে হার দিয়ে আইএসএল অভিযান শুরু। অন্যদিকে ক্লাবের তথাকথিত সর্বময় কর্তাদের একেবারে প্রকাশ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়িতে মোহনবাগানের মতন ঐতিহ্যশালী ক্লাব যে আদতে কালিমালিপ্ত হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। বিবৃতি,পাল্টা বিবৃতিতে যেমন একদিকে গরম হচ্ছে বাজার, তেমনি অন্যদিকে অশান্ত হচ্ছে পরিস্থিতি।