আইএসএলে যারা নাকি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবীদার। যে দলে বড় বড় প্লেয়ারদের গাল ভরা নাম। সেই তারকাখচিত দলটাই কিনা আই লিগের অনামী দলের বিরুদ্ধেই মুখ থুবড়ে পড়ল! শনিবার ডুরান্ড কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই রাজস্থান ইউনাইটেডের কাছে লজ্জার হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়ল! মরশুমের প্রথম ম্যাচেই পরাজয়ের তকমা গায়ে সেঁটে মাঠ ছাড়লেন এটিকে মোহনবাগানের কোচ-প্লেয়াররা।
যে টিমটা একটা সময়ে ১৬ বার ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুগ্মসেরা পারফরম্যান্স যাদের। ফাইনাল খেলেছে ২৮ বার। সেই টিমটার পারফরম্যান্স দেখে শনিবার সম্ভবত লজ্জা পেল যুবভারতীও। আই লিগের ক্লাব রাজস্থান ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই দিশেহারা ফুটবল খেলেছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। দলটার মধ্যে যে কোনও বোঝাপড়া গড়েই ওঠেনি, সেটা তাদের পারফরম্যান্সেই পরিষ্কার। তার মাঝেই অবশ্য দু’বার এগিয়ে গিয়েও গোল খাওয়ার অস্বস্তি। শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হার। ২-৩ হেরে লজ্জার মাথা নীচু করে এ দিন মাঠ ছাড়তে হল জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেদের।
আরও পড়ুন: নির্বাসনের গেড়ো- AFC Cup-এ ATK MB-র কপাল পুড়লে, ভাগ্য খুলবে বাংলাদেশের ক্লাবের
তবে সবুজ-মেরুন যে এ দিন গোলের সুযোগ তৈরি করেনি, তা কিন্তু নয়। বেশ ভালো কিছু সুযোগ তারা পেয়েছিল। কিন্তু কাজেই লাগাতে পারল না। না হলে প্রথমার্ধেই রাজস্থানকে গোলের মালা পরাতে পারত এটিকে মোহনবাগান। এ দিন যে হারে তারা গোল মিস করেছে, তাতে কিন্তু আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রথমার্ধে যা ফুটবল খেলেছে সবুজ মেরুন, বিরতিতে অন্তত তিন গোলে এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। হ্যাটট্রিকের সুযোগ হাতছাড়া করেন লিস্টন কোলাসো। সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা তো এখন থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। মরশুমের শুরুতেই জালে বল না জড়াতে পারার রোগটা আবার গোটা মরশুমে ভোগাবে না তো বাগানকে? প্রশ্ন জেগেছে সমর্থকদের মনেই।
এ ছাড়া সবুজ-মেরুনের রক্ষণের দশাও তথৈবচ। কাউন্টার অ্য়াটাকে উঠে গোল করে বেরিয়ে গেল রাজস্থান। আর দর্শক হয়ে থাকল সবুজ-মেরুনের ডিফেন্স। রাজস্থানের বিরুদ্ধে ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচেই মোহনবাগান জার্সিতে অভিষেক হয় ফ্লোরেন্তিন পোগবার। কিন্তু পল পোগবার দাদাকে মোটেও আহামরি কিছু লাগেনি।
আরও পড়ুন: ‘জানি ডার্বির উত্তেজনা, অন্য রকম পরিবেশ থাকে’, শহরে এসেই অনুশীলনে শুরু পোগবার
এ দিন তিন জন ডিফেন্ডারকে রেখে দল সাজিয়েছিলেন জুয়ান ফেরান্দো। মাঝমাঠে লোক বাড়িয়ে ৩-৫-২ এ শুরু করেন। মরশুমের প্রথম ম্যাচে দলে জায়গা পান ডার্বির হ্যাটট্রিক বয় কিয়ান নাসিরি। ম্যাচের ৩ মিনিটের মাথায় অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায় ফ্লোরেন্তিন পোগবার গোল। ১১ মিনিটে কাউকোর পাস থেকে বল বাইরে মারেন লিস্টন। এর পরেও গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন গোয়ান মিডিয়ো। কিন্তু বাধ সাধেন রাজস্থান কিপার নীরজ কুমার। ২০ এবং ৩১ মিনিটে লিস্টনের নিশ্চিত গোল বাঁচান তিনি। এ দিন ম্যাচের সেরাও হন নীরজ।
গোল পেতে ৪৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় এটিকে মোহনবাগানকে। বিরতির দু'মিনিট আগে আশিক কুরুনিয়ানের মাইনাস থেকে দলকে এগিয়ে দেন কিয়ান। তবে বেশিক্ষণ লিড ধরে রাখতে পারেনি সবুজ মেরুন। দু'মিনিটের মধ্যে ১-১ করে রাজস্থান ইউনাইটেড। ৪৫ মিনিটে উইলিয়ামের পাস থেকে গোল করেন বেখতুর। পাশে দর্শকের ভূমিকায় পোগবা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এটিকে মোহনবাগানকে আবার এগিয়ে দেন আশিক কুরুনিয়ান। ৪৬ মিনিটে হুগো বৌমাসের শর্ট ফ্রি-কিক থেকে বাঁ পায়ের নিখুঁত প্লেসিংয়ে ২-১ করেন তিনি। এর পরেও ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল ফেরান্দোর দল। গোলকিপারকে একা পেয়েও মিস করেন কিয়ান। দ্বিতীয়ার্ধে একাধিক পরিবর্তন করেন এটিকে মোহনবাগান কোচ। বিরতিতে লিস্টনের জায়গায় নামান মনবীর সিংকে। ৫৮ মিনিটে পোগবার জায়গায় নামেন হ্যামিল। জোড়া পরিবর্তন করে তুলে নেন হুগোকেও। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন আশিকও। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৬১ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরায় রাজস্থান। গোল করেন লালরেমসাঙ্গা ফানাই।
ম্যাচের শেষ দিকে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় রাজস্থান। ৯০ মিনিটে অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায় উইলিয়ামের গোল। কিন্তু তার পরেও শেষরক্ষা হল না। অতিরিক্ত সময়ের অন্তিমলগ্নে (৯০+৫) রাজস্থানের হয়ে জয়সূচক গোল করেন পরিবর্ত ফুটবলার গ্যামার নিকুম। মরশুমের প্রথম ম্যাচ একটি অনামী দলের কাছে হেরে একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়িমুখো হন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। বুধবার এটিকে মোহনবাগান পরের ম্যাচে মুখোমুখি হবে মুম্বই সিটি এফসি-র।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।