আর একটু হলে ইউরোতে ফের অঘটন ঘটতে চলেছিল। ইতালির পর ইংল্যান্ডও কার্যত ছিটকে যেতে বসেছিল। হারের মুখ থেকেই কার্যত জয় ছিনিয়ে নেয় ইংরেজরা। স্লোভাকিয়ার কাছে ০-১ হারতে হারতে, শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন দেন বেলিংহ্যাম। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে। এর পরে একস্ট্রা টাইমে হ্যারি কেনের গোলে ২-১ জয় ছিনিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। দুরন্ত লড়েও ছিটকে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় স্লোভাকিয়ার।
বিশেষজ্ঞেরা ভেবেছিলেন, ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইতালি এবং ইংল্যান্ড। গত বারের ফাইনালের রিপ্লে দেখার আশা করেছিলেন সকলে। কিন্তু ইউরোর প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে অঘটন ঘটায় সুইৎজারল্যান্ড। ইতালিকে তারা হারিয়ে শেষ ষোলো থেকেই ছিটকে দেয়। রবিবারও প্রায় অঘটন ঘটতে চলেছিল। তবে কোনও মতে হার বাঁচায় ইংল্যান্ড। এদিন প্রি-কোয়ার্টারে স্লোভাকিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে উঠল ইংল্যান্ড। তারা কোয়ার্টার ফাইনালে সুইৎজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে।
আরও পড়ুন: গোল বাতিল, বৃষ্টি-বজ্রপাতে খেলা বন্ধ, সব কিছু ছাপিয়ে ২-০ জিতে শেষ আটে জার্মানি, বিদায় নিল ডেনমার্ক
খেলার শুরু থেকেই প্রতি আক্রমণের স্ট্র্যাটেজিতে বাজিমাত করার চেষ্টা করেছিল স্লোভাকিয়া। নিজেদের গোল সামলে তারা ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলতে চেয়েছিল। ম্যাচের ৬ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে উঠেই গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল স্লোভাকিয়া। তবে হারাসলিনের শট একটুর জন্য লক্ষ্যচ্যুত হয়। বাইরে বেরিয়ে যায় বল। তার পরেও কিন্তু নিজেদের স্ট্র্যাটেজি থেকে সরেনি স্লোভাকিয়া। তারা কিন্তু কাউন্টার অ্যাটাকে উঠেই ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দিচ্ছিল। হ্যারি কেন ব্রিগেড এতে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়।
সেই সুযোগ কিন্তু কাজে লাগাতে এতটুকু ভুল করেনি স্লোভাকিয়া। ম্যাচের ২৫ মিনিটের মাথায় শ্রাঞ্জের গোলে এগিয়ে যায় স্লোভাকিয়া। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা বল পান ডেভিড স্ট্রিলিচ। তিনি বল বাড়িয়ে ছিলেন শ্রাঞ্জের দিকে। ডিফেন্ডার মার্ক গেহিকে গতিতে হারিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন শ্রাঞ্জে। এর পর ডান পায়ের শট জালে জড়ান। ১-০ এগিয়ে যায় স্লোভাকিয়া।
আরও পড়ুন: ইউরোতে অঘটন, ইতালিকে ছিটকে দিয়ে ইতিহাস সুইৎজারল্যান্ডের, পৌঁছে গেল কোয়ার্টারে
গোল খাওয়ার পরে আক্রমণের জোর কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে তারা পারছিল না। সে অর্থে দেখতে গেলে, প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট কিছুই যেন ঠিক মতো করে উঠতে পারছিল না ইংল্যান্ড। বল পজেশনে এগিয়ে থেকেও গোলমুখী আক্রমণে হতাশ করছিল তারা। প্রথম পর্বে ইংরেজ গোলকিপারকে কিন্তু স্লোভাকিয়ানদের চার-চারটি শটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অপর প্রান্তের গোলকিপারকে বিরতির আগে পরীক্ষার মুখে ফেলতেই পারেননি হ্যারি কেন, ফিল ফডেনরা। এর পিছনে ছিল টিম স্লোভাকিয়ার মরিয়া লড়াই এবং জয়ের খিদে।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ইংল্যান্ড। ফিল ফডেন, কাইল ওয়াকার, কোল পামারেরা অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করছিলেন। কিন্তু বারবার স্লোভাকিয়ার রক্ষণের কাছে প্রতিহত হতে হচ্ছিল তাদের। ইংল্যান্ড বলের দখল রেখেছিল, আক্রমণও তৈরি করছিল। কিন্তু কাজের কাজটাই যা হচ্ছিল না। এর মাঝেই ৮১ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে ডেকলান রাইসের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত এবেরি ইজে এবং ইভান টনিকে ইংল্যান্ড নামানোর পর খেলার রং বদলায়।
আরও পড়ুন: ফের অঘটন ঘটাল ভেনিজুয়েলা, মেক্সিকোকে হারিয়ে কোয়ার্টারে পৌঁছে গেল, ছিটকে গেল জামাইকা
গ্যারেথ সাউথগেটের এই চালেই ম্যাচে প্রত্য়াবর্তন করে ইংল্যান্ড। ব্রিটিশরা যখন বিদায়ের প্রহর গুনছে, তখনই বাইসাইকেল কিকে বেলিংহ্যামের গোল! সংযুক্তি সময়ের পঞ্চম মিনিটে ওয়াকারের লং থ্রো হেড করে বক্সে পাঠান ইজে। অরক্ষিত বেলিংহ্যামের কাছে বল যায়। ব্যাকভলিতে গোল করে সমতা ফেরান বেলিংহ্যাম। তবে সেই গোলের ক্ষেত্রে স্লোভাকিয়ার রক্ষণও কিছুটা দায়ী। বেলিংহ্যামের পিছনেই ছিলেন ভাভরো। তিনি এগিয়ে এলে হয়তো অতটা গোল করাটা সহজ হত না। ম্যাচের ফল ১-১ ফলে, খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই হ্যারি কেনের গোলে ২-১ করে ফেলে ইংল্যান্ড। পামারের ক্রস ধরে ইজে বল বাড়িয়েছিলেন টনিকে। সেখান থেকে বল পান কেন। চলতি বলে হেড করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন তিনি। ইংল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসে সর্বাধিক গোলের মালিক এখন হ্যারি কেনই। পিছিয়ে পড়ার পরে গোলশোধের মরিয়া চেষ্টা শুরু করেও লাভ হয়নি স্লোভাকিয়ার। কিছুটা অভিজ্ঞতার অভাবেই শেষমেশ পিছিয়ে পড়ে স্লোভাকিয়া। অতিরিক্ত সময়ের খেলা ২-১ শেষ হয়। ইউরো থেকে ছিটকে গিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় স্লোভাকিয়ার।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।