টাইব্রেকারে গঞ্জালো মন্টিয়েলের শট জালে জড়াতেই, বিস্ফোরণ ঘটল ৩৬ বছর ধরে জমে থাকা আবেগের। আনন্দে, উচ্ছ্বাসে, চোখের জলে, উদ্বেলতায় তখন ভেসে চলেছে আর্জেন্তাইন শিবির। শান্ত স্বভাবের লিওনেল মেসিও দু’হাত শূন্যে ছুড়ে সেলিব্রেশনে মাতেন। দীর্ঘ দিন ধরে মনের কোণে লালিত করা স্বপ্ন সফল হওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন মেসি।
পাঁচ বার বিশ্বকাপ খেললেও, এই প্রথম বার বিশ্ব জয়ের স্বাদ পেলেন লিও মেসি। তাও ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় এসে। এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলে, জীবনের বড় আক্ষেপ থেকে যেত। আধুনিক ফুটবলের অন্যতম মহাতারকা তিনি, তবে বিশ্বকাপ না পেলে ফুটবল জীবনটাই অপূর্ণ থাকত। মারাদোনার সঙ্গে তুলনায় কোথাও গিয়ে পিছিয়ে থাকতেন, কিন্তু সেটা হল না। মেসির শেষ বিশ্বকাপে পোয়েটিক জাস্টিস।
আরও পড়ুন: ইতিহাস লিখেও কর্ণ এমবাপে, মেসির দিনে নায়ক মার্টিনেজ, তৃতীয় বিশ্বকাপ আর্জেন্তিনার
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তৃপ্ত লাগছিল মেসিকে। সংযত, শান্ত স্বভাবের মেসি সেলিব্রেশনে মেতে থাকলেও, তাঁর শরীরী ভাষায় ছিল স্বস্তির ছোঁয়া। টেনশনের চোরাস্ত্রোত থেকে বের হয়ে, উচ্ছ্বাস তখন ফল্গুধারার মতোই বয়ে চলেছিল।
খেলা শেষ হওয়ার পর ফ্রান্সের ফুটবলারদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলেন। দলের ফুটবলারদের সঙ্গে উৎসবে মাতলেন। নিরাপত্তা কর্মীদের অনুমতি নিয়ে পরিবারকে মাঠে ডেকে নিলেন। মা, স্ত্রী, সন্তানদর সঙ্গেও আবেগ ভাগ করে নিলেন। মাঝে মাঝে গ্যালারির দর্শকদের অভিবাদনের প্রত্যুত্তর দিলেন মেসি। তাঁর জীবনটা যেন এ দিন পূর্ণতায় ভরে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ মেসির, ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছরের আক্ষেপ মিটল আর্জেন্তাইনদের
তবে ট্রফি নেওয়ার মুহূর্তটা সেরা হয়ে থাকল। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর থেকে ট্রফি নেওয়ার উচ্ছ্বাসটা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। ১০ মাস প্রতীক্ষার পর যেন সদ্যোজাত পিতা তাঁর সন্তানকে কোলে নিচ্ছেন। এমন ভাবেই ট্রফিটা নিলেন মেসি। ট্রফির উপর আলতো চুম্বন। তার পরেই বহু প্রতীক্ষিত বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে সতীর্থদের দিকে নাচতে নাচতে এগিয়ে গেলেন মেসি। আর সেই সঙ্গেই বাঁধনহীন সেলিব্রেশন শুরু।
বিশ্বকাপ ট্রফিটা মেসির হাতে তুলে দেওয়ার আগেই, টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ারের পুরস্কার অর্থাৎ গোল্ডেন বল নিতে এসে আগেই তাতে চুম্বন করে গিয়েছিলেন মেসি। তাঁকে দেখে তখনই বোঝা যাচ্ছিল, এই ট্রফিটা তাঁর কাছে কতটা দামী। আর ট্রফি হাতে পাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বাসের পারদটা ছিল আকাশছোঁয়া।
গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই মেসির মধ্যে ট্রফি জয়ের জন্য মরিয়া ভাবটা বারবার ফুটে উঠেছিল। আর তারই ফল পেলেন হাতেনাতে। এ বার আর চোখের জল ফেলে নয়, মাথা উঁচু করে হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়লেন লিও মেসি। ২০১৪ সালে ফাইনালে উঠেও, বিশ্বকাপ না জেতায় আফসোসটা ৮ বছর পর মিটিয়ে নিলেন ৩৫ বছরের মহাতারকা।
বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসি জোড়া গোল করলেন। সর্বাধিক গোলের তালিকায় ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে তাঁকে টেক্কা দিলেও, বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের শিরোপা জিতলেন। পেলেন সোনার বল। এর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপেও সোনার বল জিতেছিলেন মেসি। কিন্তু সে বার চোখের জলে সেই পুরস্কার নিয়েছিলেন। আর এ বার উচ্ছ্বাসে ভেসে মধুর ভাবে শেষটা করলেন লিও মেসি।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।