তাঁর দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে সেমিফাইনালের আগে কিছুটা হলেও চিন্তিত এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো। বিশেষ করে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে জামশেদপুরের কাছে হারের পর, বেশ মুষড়ে পড়েছে এটিকে মোহনবাগান। তবে ফেরান্দো মনে করেন, অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকানোই ভাল এবং প্রতিটি নক আউট ম্যাচের প্রতি মুহূর্তে মনোনিবেশ করতে হবে পুরো দলকে।
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে লিগ পর্বের দু'টি ম্যাচের মধ্যে একটিতে এটিকে মোহনবাগান ড্র করেছিল। অপর ম্যাচটি ২-১ জিতেছিল। সেমির প্রথম ম্যাচেও জয়ের ধারাই ধরে রাখতে চাইবে ফেরান্দোর টিম।
শনিবার সেমিফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ও মরণ-বাঁচন ম্যাচের আগে শুক্রবার সাংবাদিকদের ফেরান্দো যা বললেন:
হায়দরাবাদ এফসি-র মতো দলের বিরুদ্ধে নামার আগে তাদের কী কী বিষয়ে আপনারা ওয়াকিবহাল রয়েছেন?
আমরা জানি যে, খুব ভালো একটা দলের বিরুদ্ধে আমরা মাঠে নামছি। এই মরশুমটা খুব ভালো কেটেছে ওদের। কুড়িটা ম্যাচ খেলা হয়ে যাওয়ার পরে হায়দরাবাদ বোধহয় খুব একটা চাপ নিয়ে খেলতে চাইবে না, বরং ফুটবলটাকে উপভোগ করার কথা মাথায় নিয়ে মাঠে নামবে। সে জন্যই ওরা ভালো দল। তবে এই ম্যাচে জিততে তো চাইবেই ওরা। উন্নত ফুটবলও খেলবে।
লিগ পর্যায়ে হায়দরাবাদ আপনাদের হারাতে পারেনি। সেমিফাইনালে কি আপনারা তাই মানসিক ভাবে একটু এগিয়ে থেকে নামবেন?
সে রকম কোনও বাড়তি সুবিধা নিয়ে মাঠে নামা কঠিন হবে। আগের ম্যাচে কী হয়েছে, কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, সম্প্রতি দু-তিনটে ম্যাচে কেমন খেলেছি, এগুলোর প্রভাব খুব একটা পড়বে বলে মনে হয় না। তা কোনও বাড়তি সুবিধা পাব বলে মনে হয় না। ওদের হাল্কা ভাবে নিলেই চাপে পড়তে হবে।
দুটো সেমিফাইনালে ১৮০ মিনিটের লড়াই। কী ভাবে দেখছেন এই লড়াইকে, ম্যাচ ধরে ধরে, না একসঙ্গে দুটো ম্যাচকে ফোকাসে রাখছেন?
আমাদের সামনে এখন দুটো ম্যাচ। প্রতি ম্যাচই জিততে হবে আমাদের, এমনই মানসিকতা রয়েছে আমাদের দলে। দুটো ম্যাচে আলাদা পরিকল্পনা নেই। কাল, বুধবার, দুটো ম্যাচই আমাদের জিততে হবে, এমনই ভাবনা আছে। আশা করি আমাদের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন সত্যি হবে।
ওদের দলটা খুব সঙ্ঘবদ্ধ এবং ওদের বিদেশি অ্যাটাকারদের মধ্যে বোঝাপড়াও খুব ভাল। এই বিদেশি অ্যাটাকারদের আটকাবেন কী ভাবে?
হ্যাঁ, জানি ওরা প্রায় দুটো মরশুম একসঙ্গে খেলছে। একটা দল যদি দু’বছর ধরে একসঙ্গে খেলে, তা হলে তারা ভাল খেলবেই। তবে আমাদের ছেলেরাও বেশির ভাগই দুই মরশুম একসঙ্গে খেলছে। তাই আমাদের দলও, আশা করি, খারাপ খেলবে না।
বিদেশিদের পাশাপাশি অনিকেত যাদব, আশিস রাই, আকাশ মিশ্র, রোহিত দানু, নিখিল পূজারিদের মতো ভারতীয় ফুটবলাররাও ভাল ফর্মে রয়েছে। ওদের সম্পর্কে কী বলবেন?
ওরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট উন্নতি করেছে। তবে যারা ওদের খুঁজে বের করেছেন, সেই স্কাউটদের প্রশংসা করতেই হবে। এই খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স সম্পর্কে ওদের ভাল ধারণা আছে। এ ছাড়া ওদের কোচ এবং কোচিং স্টাফও এদের যথেষ্ট ভাল ভাবে তৈরি করেছে। তার ফল ওরা পেয়েছে। আমাদেরও সুমিত, রাণা, অভিষেকদেরও সে ভাবেই তৈরি করতে হবে। কারণ, ওদের প্রতিভা রয়েছে।
হায়দরাবাদের বার্থোলোমিউ ওগবেচে প্রতি দলের কাছেই ত্রাস হয়ে উঠেছেন। ওঁকে আটকানোর জন্য কী পরিকল্পনা রয়েছে?
অবশ্যই পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেটা এখন বলা যাবে না। তবে সত্যি বলতে, আমরা শুধু নিজেদের খেলা নিয়েই ভাবছি। কী ভাবে নিজেদের পায়ে বল রাখতে হবে, জায়গা বের করতে হবে, আক্রমণে উঠতে হবে। কালকের ম্যাচে আমাদের পরিকল্পনা এ রকমই।
এই মরশুমে রয় কৃষ্ণা এমন বহু সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, যেগুলো থেকে সাধারণত তিনি অনেক গোল করেছেন। এই ব্যাপারে কি ওঁর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?
শুধু রয় কেন, সবার সঙ্গেই কথা হয়। এই মরশুমটা প্রত্যেকের কাছেই খুব কঠিন ছিল। কোভিড, চোট-আঘাতে অনেকেই দলের বাইরে ছিল।
গত ম্যাচে আপনাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এই ম্যাচে আপনার দলের ছেলেরা ভাল খেলবে কী করে?
সত্যিই গত ম্যাচে আমাদের পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। সোমবারের ম্যাচটা কঠিন হয়ে উঠেছিল আমাদের কাছে। তবে ফুটবলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা অতীত, যাকে বদলানো যায় না। অবশ্যই আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারি। সেই চেষ্টাই করছি। কারণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা আমাদেরই হাতে। আমরা অনুশীলনে সে জন্য মনোনিবেশ করছি।
অনেক কর্নার পেলেও সেগুলি থেকে গোল পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন আপনারা। সেমিফাইনালের আগে কি এই ব্যাপারটা আপনাকে চিন্তায় রেখেছে?
না না, একেবারেই নয়। এই ব্যাপারে আমরা হয়তো পিছিয়ে আছি। কিন্তু এখন এই একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে পড়ে থাকার সময় নেই আমাদের হাতে। ফুটবলে তো শুধু সেটপিস নেই, আরও অনেক ছোটখাটো ব্যাপার আছে, যেগুলোতে নজর দেওয়া দরকার। কিছু কিছু ব্যাপারে বদল আনা দরকার ঠিকই। কিন্তু বেশি প্র্যাকটিস সেশন যদি না পাওয়া যায়, তা হলে চট করে বদল আনা কঠিন হয়।
গত ম্যাচে হেরে লিগশিল্ড হাতছাড়া হওয়ার পরে দলের ছেলেদের কী ভাবে উজ্জীবিত করছেন?
একই কথা বলব। এটা এখন অতীত। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সেমিফাইনাল ও তার পরে ফাইনাল এখন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। তার পরে এএফসি কাপ আছে। আমাদের সামনে এখন অনেক কিছু রয়েছে।
লিগশিল্ড হারানোর পরে এখন নিশ্চয়ই ট্রফি জয়ের জন্য মরিয়া আপনার দল?
নক আউট মানেই কঠিন লড়াই। যে কোনও ফলই হতে পারে। যেখানে একটা বা দুটো ম্যাচেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে, সেখানে যে কোনও ফল হতে পারে। এমন নয় যে সামনে কুড়িটা ম্যাচ আছে সামলে নেওয়া যাবে। তাই প্রতিটি মুহূর্তে মনংযোগ নিখুঁত থাকতে হবে এবং সারা ম্যাচে ফোকাসড থাকাটা খুবই জরুরি।
হুগো বৌমাসের চোটের কী অবস্থা?
এই সপ্তাহে দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেছে হুগো। সে জন্য আমি খুশি। সুসাইয়ের চোট এখনও সেরে ওঠেনি। অভিলাষও তাই। তবে আমরা ম্যাচের আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।