অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে সত্যি সত্যি নির্বাসিত করল ফিফা। ফিফার তরফে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ফেডারেশনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণেই এই নির্বাসন। আসলে ফেডারেশনের নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া কমিটির হস্তক্ষেপ মোটেও ভালো ভাবে নেয়নি ফিফা। যার জেরেই এই শাস্তির মুখে পড়তে হল ফেডারেশনকে।
তবে শুধু এটাই কারণ নয়। ফেডারেশনকে নির্বাসন করার পিছনে রয়েছে আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
১) ১৩ বছর ধরে এআইএফএফ-এর কোনও নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়নি। প্রফুল্ল প্যাটেল তিন চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে ফেলেছিলেনষ এবং আবার প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর অধিকারই ছিল না তাঁর। যা আইন লঙ্ঘন করেছে।
২) অনিয়মের অভিযোগ এনে ১৮ মে সুপ্রিম কোর্ট অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের শাসকগোষ্ঠীর কমিটি। ভেঙে দেয় এবং দেশে খেলা পরিচালনার জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি নিযুক্ত করে।
আরও পড়ুন: আশঙ্কাই সত্যি হল, AIFF-কে নির্বাসিত করল ফিফা, ভারত থেকে সরছে U-17 মহিলা WC
৩) এই সিওএ (COA) কমিটিতে নিযুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারক অনিল ডেভ, প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি এবং ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। তারা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সমস্তটা পরিচালনা করতে শুরু করেন। পাশাপাশি প্রফুল্ল প্যাটেলের প্রস্থানে ফুটবল ভক্তরা খুশি হয়েছিলেন।
৪) এর পরই শুরু হয় জটিলতা কারণ ফিফা কখনও কোনও দেশের ফুটবল সংস্থার উপর রাজনৈতিক বা সরকারি হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করে না এবং এই কারণে তারা নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তানকে।
৫) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর ভারতীয় ফুটবলের পরিস্থিতি খাতিয়ে দেখতে ভারতে আসে ফিফা এবং এএফসি'র প্রতিনিধি দল। ওই সফরে এসে ফেডারেশনের দায়িত্বে থাকা সিওএ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয় প্রতিনিধি দলের। ফিফা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এআইএফএফ-এর নতুন সংবিধান চূড়ান্ত করতে হবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে। নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। নির্বাচনে যাঁরা জিতবেন সেই কমিটিকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফেডারেশনের সভাপতির পদের জন্য খারিজ করা হল সুব্রত দত্তের মনোনয়ন
৬) এর মধ্যে সিওএ আদালতে অভিযোগ করে, প্রফুল্ল প্যাটেল এখনও ফেডারেশনের কাজকর্মে পিছন থেকে হস্তক্ষেপ করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করে সিওএ।
৭) ফিফার তরফে প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে, ফিফা কাউন্সিল সর্বোসম্মতভাবে সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থাকে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ, ফিফার ভাবমূর্তির বড় রকমের নিয়মভঙ্গ। যতক্ষণ না সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের এক্সিকিউটিভ কমিটি সমস্ত নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছে, এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি তৈরি হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই নির্বাসন বহাল থাকবে।
নির্বাসনের ফলে ঠিক কী কী সমস্যায় পড়তে হবে ভারতীয় ফুটবলকে?
- সিনিয়র হোক কিংবা জুনিয়র, ভারতের কোনও জাতীয় দলই কোনও রকম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারবে না।
- আন্তর্জাতিক মানের কোনও ম্যাচই খেলতে পারবেন না সুনীল ছেত্রীরা। এমন কী এশিয়ান কাপও খেলতে পারবে না ভারত।
- নির্বাসন থেকে গেলে অনূর্ধ্ব -১৭ মহিলাদের বিশ্বকাপ হওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
- নির্বাসনের ধাক্কায় যেন কয়েক যুগ পিছিয়ে গেল ভারতীয় ফুটবল। কারণ ভারতীয় ফুটবলের ব়্যাঙ্ক ফের শূন্য থেকে শুরু হবে। ফের শূন্য থেকে লড়াই শুরু করতে হবে সুনীলদের।
সমস্যায় পড়বে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলও
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ঘরের মাঠে এএফসি কাপের ইন্টারজোনাল সেমিফাইনালে খেলার কথা এটিকে মোহনবাগানের। কিন্তু নির্বাসন বহাল থাকলে, সেই ম্যাচ খেলতে পারবে না জুয়ান ফেরান্দোর টিম।
এ দিকে যতদিন না পর্যন্ত সাসপেনশন উঠছে, নতুন করে কোনও বিদেশি ফুটবলার সই করানো যাবে না। এর অর্থ, ইস্টবেঙ্গলের ষষ্ঠ বিদেশি ফুটবলার সই করানোর পরিকল্পনা আপাতত বিশ বাঁও জলে। একই রকম ভাবে ভারতীয় ক্লাবে খেলা কোনও বিদেশি এখন অন্য দেশেও যেতে পারবেন না।
ঘরোয়া ফুটবলে সমস্যা
ঘরোয়া ফুটবলে আপাতত কোনও অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া ক্লাব ফুটবলও চলতে পারে আগের মতোই। অর্থাৎ আইএসএল, আই লিগ-সহ ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতায় ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকছে না।
কী ভাবে নির্বাসন মুক্ত হতে পারবে এআইএফএফ?
এআইএফএফ-কে ফিফার নির্বাসন থেকে মুক্ত হতে হলে, সুপ্রিম কোর্টের গঠন করা কমিটিকে (COA) সরতে হবে এবং ক্ষমতায় আসতে হবে এআইএফএফ-এর নতুন এক্সিকিউটিভ কমিটিকে। নতুন এক্সিকিউটিভ কমিটি এআইএফএফ-এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে পেলে, তবেই এই নির্বাসন থেকে মুক্ত হবে ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।