সুনীল ছেত্রীকে ঘিরে আবেগের ফল্গুধারা বয়ে চলেছে তিলোত্তমায়। রাত পোহালেই ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি লগ্ন ঘনিয়ে আসবে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) শেষ বারের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে নামবেন সুনীল ছেত্রী।
ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন হাসিমুখেই। বুকের ভিতরে হয়তো তোলপাড় হয়ে চলেছিল। কিন্তু পেশাদারিত্বের মোড়কে নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছিলেন সুনীল। বুধবার দুপুরে ইগর স্টিম্যাচের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন এসেই জড়িয়ে ধরলেন কুয়েত কোচ রুই বেন্টোকে। তার পর চোয়াল শক্ত করে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন। আবেগকে ধারেকাছে ঘেষতে দিলেন না। আবেগ এবং পেশাদারিত্বের মধ্যে তিনি ভালোই ব্যালেন্স করতে জানেন। তাই তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই, মনের ভিতর কী ঝড় বয়ে চলেছে!
আরও পড়ুন: গত তিন দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ- কুয়েতের বিরুদ্ধে নামার আগে বড় দাবি ইগর স্টিম্যাচের
‘বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডের ছাড়পত্র সংগ্রহ করা’
সুনীলের কাছে নিজের বিদায়ী ম্যাচের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতে ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডের ছাড়পত্র সংগ্রহ করা। সুনীল বলেও দিলেন, ‘আবেগ থাকবেই। তবে এখন শুধুই কুয়েত ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। ড্রেসিংরুমে আমার অবসর নিয়ে আর কোনও কথা বলি না। আমার শেষ ম্যাচ নিয়ে চর্চা এখন অতীত। শুধুমাত্র আপনারাই আবেগের প্রসঙ্গ টানেন। আমাদের সামনে এখন শুধুই কুয়েত ম্যাচ। যা আমাদের ভালো খেলে জিততে হবে। আমি বেশ কয়েক বার এখানে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। এমন অনেক জন এখানে রয়েছে, যাদের আমি গত ২০ বছর ধরে দেখছি। আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে এবার ম্যাচে ফোকাস করতে হবে। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ম্যাচ। এর থেকে ভালো অবসরের মঞ্চ হতেই পারত না। আমি মানসিক ভাবে শান্তিতে আছি। নিজের সবটা উজাড় করে দিয়েছি। আমরা কাল ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারব কিনা, সেটা সময়ই বলবে। তবে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।’
এর পরেই তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন অবসর নিয়ে আর প্রশ্ন না করতে। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করছি শেষ ম্যাচের কথাটা বার বার মনে না করাতে। এটা ভারতের সঙ্গে কুয়েতের লড়াই। নিজের ভেতরে আমি একটা ছোট যুদ্ধ লড়ছি। দয়া করে কেমন লাগছে জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করবেন না।’
আরও পড়ুন: গর্ব করার মতো দল গড়ছি, আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল- মরশুম শুরুর অনেক আগেই হুঙ্কার EB কোচ কুয়াদ্রাতের
‘এটা আমার নয়, আমাদের ম্যাচ’
এটা যে ভারত বনাম কুয়েতের ম্যাচ, সেটা বারবার মনে করিয়ে দেন ভারত অধিনায়ক। সুনীল বলেন, ‘আমি ম্যাচটা নিয়ে আবেগপ্রবণ হতে চাইছি না। শুধু জিততে চাই। ১-০ গোলে জিতলেও চলবে। আমাদের আগের ১৫ দিন ভালো কেটেছে। দল ফিট আছে। সবাই নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি। কোচের দল বাছতে সমস্যা হবে। যে কোনও কোচের কাছেই এটা বড় সমস্যা। তবে এটা আমার ম্যাচ নয়, আমাদের ম্যাচ। কুয়েতের বিরুদ্ধে দলের ম্যাচ। পরের রাউন্ডে গিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে আমাদের সামনে। ম্যাচটা কলকাতায় বলে অবশ্যই খুশি। আমাদের লম্বা আবাসিক শিবির হয়েছে। বেশি দিন একসঙ্গে থাকলে দলের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ে। মাত্র পাঁচ দিনে সেটপিস নিয়ে বিস্তারিত ট্রেনিং হয় না। আশা করছি আমরা এবার এটা কাজে লাগাতে পারব।’
‘অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই’
ম্যাচটা জিতলে অবসরের সিদ্ধান্ত বদলাবেন কি না সেই প্রসঙ্গে সুনীল বলেছেন, ‘একদমই নয়। আমার শ্য়ুট বানানো হয়ে গিয়েছে। আমি মাঠে গিয়ে সাধারণ সমর্থকের মতো খেলা দেখতে পারি। হঠাৎ করে মাথায় আসা কোনও জিনিস দুম করে বলে দিলাম, এমন নই আমি। অনেক ভাবনাচিন্তা করেছি অবসর নিয়ে। ১৯ বছরে দারুণ যাত্রা কাটিয়েছি। এটাই শেষ।’
আরও পড়ুন: রেকর্ড আমার পিছনে ছোটে… সৌদি প্রো লিগে নতুন রেকর্ড গড়ে চাঞ্চল্যকর দাবি রোনাল্ডোর
‘গোল করার চেয়েও জেতাটা বড়’
১৯ বছর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দেশের জার্সিতে অভিষেকে গোল পেয়েছিলেন। বিদায়ী ম্যাচেও গোল করে আরও একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চাইবেন সুনীল। তবে তাঁর দাবি, ‘আমি ১৯ বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলছি। কুয়েত ম্যাচটা আমাদের কাছে বিশাল ম্যাচ। ম্যাচটা জিততে পারলে, সব কিছু বদলে যাবে। আমি গোল পেলাম কী পেলাম না, সেটা বড় বিষয় নয়। পেলে ভালো, না পেলেও সমস্যা নেই। ভারতের জার্সিতে যে কেউ গোল করলেই আমরা খুশি। আমার দু'টি লক্ষ্য- এক) ম্যাচটা জিতে তিন পয়েন্ট পাওয়া। দ্বিতীয়ত) ক্লিনশিট রাখা। ম্যাচের পর সেলিব্রেশন হবে। কঠিন ম্যাচ। শেষ না হওয়া পর্যন্ত আনন্দ করা যাবে না। আমরা ক্লিনশিট রেখে তিন পয়েন্ট পেতে চাই। তাই যাবতীয় উৎসব ম্যাচের পর তোলা থাকবে।’
উত্তরসূরি কে?
বৃহস্পতিবারের পর প্রাক্তন হয়ে যাবে সুনীল। তাঁর উত্তরসূরি কে হবে? বেশ কয়েক জনের উপরেই আস্থা রাখছেন বিদায়ী অধিনায়ক। এই প্রসঙ্গে মজা করে সুনীল বলেন, ‘ডেভিড, মনবীর, রহিম, শিবাশক্তিরা আছে। তবে সব নম্বর নাইনের বিশেষত্ব আলাদা। আমাদের দলে ৬-৭ জন আছে, যারা এই পজিশনে খেলতে পারবে। কোচের হাতে বিকল্প থাকবে। ওরা সবাই অপেক্ষা করে আছে। আমি চলে যাওয়ার পর ওরা সুযোগ পাবে। এবার যদি আমি বলি, আমি অবসর নিচ্ছি না, ওদের মাথায় হাত পড়বে।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।