কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজার ৩৪ মানুষের সামনে যে ভাবে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে এটিকে মোহনবাগান, তার পরে তাদের কোচের খুশি হওয়ারই কথা। স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো যথেষ্ট খুশিও। কিন্তু যখনই ডার্বির প্রসঙ্গ চলে আসে, তখনই তিনি জানিয়ে দেন, ওই ম্যাচ নিয়ে আলাদা করে ভাবতে বসবেন। কারণ, হিরো আইএসএলে সব ম্যাচই আলাদা। রবিবার কোচিতে দলের অস্ট্রেলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দিমিত্রিয়স পেত্রাতোস ভারতে তাঁর প্রথম হ্যাটট্রিকটি করে দলকে ৫-২-এ জেতান।
কেরালা ব্লাস্টার্সের মাঠ থেকে এমন এক বড় জয় তুলে নিয়ে আসার পরে সাংবাদিকদের আর কী কী বললেন কোচ? জেনে নেওয়া যাক।
প্রশ্ন: প্রতিপক্ষের এত সমর্থকের মাঝখানে এই আবহে এ রকম একটা বড় জয় নিয়ে কী বলবেন?
ফেরন্দো: সত্যি বলতে এখানে খেলাটা একটা ভালো অভিজ্ঞতা। অসাধারণ এক পরিবেশ। যখন আমরা ম্যাচ খেলতে স্টেডিয়ামে আসছিলাম, তখন দেখি ঝাঁকে ঝাঁকে হলুদ গেঞ্জি পরা মানুষ স্টেডিয়ামে আসছেন। অসাধারণ ছবিটা। ফুটবলারদের পক্ষে এই পরিবেশে খেলাটা বেশ কঠিন। কারণ, দর্শকদের ওই চিৎকারই চাপ বাড়িয়ে দেয়। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে খেলতে হয় ফুটবলারদের। এখানে এসে স্থানীয় দলকে হারানো সত্যিই কঠিন। তবে এই ব্যাপারটা ফুটবলারদের রপ্ত করতে হবে। এটাই ফুটবলের স্বাভাবিক ছবি। ইউরোপ, আমেরিকার ফুটবলে এ রকমই দেখা যায়। তবে আমার দলের চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখে আমি খুশি। ১০-১৫ মিনিট চাপে থাকার পরেও যে দৃঢ়তা ওরা দেখাল, তা অনবদ্য।
আরও পড়ুন: পেত্রাতোসের হ্যাটট্রিকে কেরালাকে ৫ গোলের মালা পরাল এটিকে-মোহনবাগান
প্রশ্ন: এর পরেই কলকাতা ডার্বি। তার আগে এ রকম একটা জয় কি আপনাদের পক্ষে একেবারে নিখুঁত ফল হল?
ফেরান্দো: প্রতি ম্যাচই আলাদা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগই একেবারে আলাদা ধরনের। এ রকম একটা জয়ের পরে হয়তো দলের আরও ভালো পারফরম্যান্স হবে, আরও উজ্জীবিত হয়ে খেলবে ছেলেরা। আবার অন্য রকমও হতে পারে। সব রকমই সম্ভব। নিজেদের খেলা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করাটাই এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের কাজ ঠিক মতো করে যাওয়া। আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে আমাদের ওঠা নামার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ব্যাপারগুলো নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। দু’সপ্তাহের মধ্যে কলকাতা ডার্বিতে নেমে পড়াটা অবশ্যই আমাদের কাছে ভালো ব্যাপার। ফুটবলার ও সমর্থকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এটি। আশা করি, ওই ম্যাচের জন্য দল তৈরি হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: কয়েক দিন আগেই আপনাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এখন এই জয়ের পরে কী বলবেন?
ফেরান্দো: ভারতীয় ফুটবলে অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেগুলো উচিত নয়। আমরা এখানে ফুটবলের উন্নতির জন্যই আসি এবং ফুটবল নিয়েই থাকি। কিন্তু এখানে ফুটবলের বাইরের আলোচনা নিয়ে প্রচুর শক্তি ও সময় নষ্ট হয়। এই যে হারলেই খেলোয়াড়, কোচেদের সরানোর দাবি ওঠে, এটা খুবই খারাপ লাগে। সবাই কত ভালো খেলল, সেই আলোচনা করে শক্তি এবং সময়কে কাজে লাগানোই তো ভালো। তা হলেই ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হবে। আমি এ ভাবেই ভাবি।
আরও পড়ুন: জয়ে ফিরল গত বারের ISL চ্যাম্পিয়নরা, নর্থইস্টকে ৩-০ উড়িয়ে চেনা ছন্দে হায়দরাবাদ
প্রশ্ন: বাঁ দিক দিয়ে অর্থাৎ হরমনজ্যোৎ খাবরা ও রুইভা হারমিপমের দিক দিয়ে আক্রমণের ক্ষেত্রে আপনার দলের ছেলেরা অনেক সুবিধা পেয়েছে বলে মনে করেন?
ফেরান্দো: হ্যাঁ, এটা আমরা আগেই লক্ষ্য করেছিলাম। তাই আশিক ও লিস্টনকে বলে দিয়েছিলাম ওই দিক দিয়ে বারবার উঠতে, যাতে আরও বেশি জায়গা তৈরি করতে পারি আমরা। দল শুরুর দিকে স্বচ্ছন্দে ছিল না। কারণ, ব্রেন্ডানকে লেফট সেন্টার ব্যাক হিসেবে সাধারণত খেলাই। টাঙরি শুরুর দিকে ওর কাছে চলে আসছিল। তাই লিস্টন ও আশিকের আশেপাশে জায়গা বেশিই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। সেই জন্যই প্রথম দিকটা আমাদের পক্ষে ম্যাচটা কঠিন হয়ে ওঠে। তা ছাড়া কেরালা খুবই ভাল শুরুটা করেছিল। কিন্তু মিনিট কুড়ি পর থেকে যখন জনি, হুগোর কাছাকাছি চলে আসতে শুরু করে, তখন থেকেই আমরা জায়গা পেয়ে যাই। এবং দেখেছেনও, তার ফলে কী হয়। এর ফলে লিস্টন, মনবীর, দিমিত্রিদের পক্ষে কাজটা আরও সোজা হয়ে যায়। মাঝে মাঝে উইঙ্গারদের স্ট্রাইকার হিসেবে খুব দরকার হয়। তা হলে আরও জায়গা বের করে নেওয়া যায়। সব ম্যাচেই পরিকল্পনা করেই নামি। কিন্তু খেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাতে পরিবর্তনও করতে হয়।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।