ডার্বিকে ঘিরে সমর্থকদের আবেগ থাকে আকাশছোঁয়া। আর সবুজ-মেরুন সমর্থকদের উত্তেজনা তার উপর আবার শেষ ছ'টি ডার্বির ছু'টিতেই জিতেচে মোহনবাগান। যে কারণে বাগান সমর্থকদের উত্তেজনার পারদ একটু বেশিই। তবে এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো কিন্তু এই ম্যাচটিকে আর পাঁচটি ম্যাচের মতোই নিচ্ছেন। ইস্টবেঙ্গল এফসি-কেও অন্য প্রতিপক্ষদের মতোই গুরুত্ব দিতে চান তিনি। তার বেশি কিছু নয়।
ফেরান্দো প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজের দলকে নিয়েই বেশি ভাবিত। তবে নিজেদের মাঠে, নিজেদের সমর্থকদের সামনে ম্যাচ জেতা যে অবশ্যই বিশেষ একটি ব্যাপার, সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ কোচ। শুক্রবার ডার্বির আগের দিন কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা হল।
প্রশ্ন: এখন আর আপনার কাছে ডার্বি নতুন কিছু নয়। এ বার কি ইস্টবেঙ্গল এফসিকে গতবারের তুলনায় শক্তিশালী মনে হচ্ছে?
ফেরান্দো: নিজের দল নিয়েই আমি বেশি ভাবছি। কারণ, প্রতিপক্ষ কেমন, তা তো আর আমার হাতে নেই। প্রতিপক্ষ ভালো দল। ওদের ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। কিন্তু আমি নিজের দলের উন্নতি নিয়ে বেশি ভাবি। সামনে অনেক ম্যাচ আছে। এটাই এখন আমাদের লক্ষ্য। ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে আরও উন্নতি করতে হবে আমাদের। তবে প্রতিপক্ষদের নিয়ে বেশি চিন্তা করছি না।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলকে আলাদা গুরুত্ব নয়-হুঙ্কার কেরালা ম্যাচের হ্যাটট্রিক বয়ের
প্রশ্ন: গত মরশুমে এবং চলতি মরশুমে আপনার দলের বড় সমস্যা হল, উপর ওঠা আবার নীচে নেমে ডিফেন্স করা। যার ফলও ভুগতে হয়েছে আপনাদের। শনিবারের ম্যাচে এই সমস্যার মোকাবিলা কী ভাবে করবেন বলে ভাবছেন?
ফেরান্দো: ম্যাচের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রকমের ব্যাপার ঘটে। অনেক সময় চাপের মুখে ছোটখাটো ব্যাপারগুলোর উপর থেকে নজর সরে যায়। এটা ফুটবলেরই অঙ্গ। এই নিয়ে পরে আবার কাজ শুরু করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটা মোটেই সোজা নয়। ছেলেদের সব সময়েই বলি পরিকল্পনা, কৌশল থেকে সরে গেলে চলবে না। ধাপে ধাপে এগুলো ঠিক হবে এবং দল আরও শক্তিশালী হবে। দলের পরিকল্পনাটা ঠিক থাকা খুব জরুরি। এএফসি কাপ সেমিফাইনালের মতো ম্যাচ হেরে গেলে হতাশা আসে ঠিকই। তবে অতীতটাকে তো আর বদলে ফেলা যায় না। বর্তমান. ভবিষ্যৎ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে।
প্রশ্ন: আপনার দল গোল পেতে শুরু করেছে। এ ছাড়া আর কী কী ইতিবাচক বিষয় নিয়ে আপনারা ডার্বিতে নামছেন এবং এই ম্যাচে আপনার প্রত্যাশা কী?
ফেরান্দো: প্রথম দুই ম্যাচে আনেক সুযোগ হাতছাড়া করেছি। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ওর চেয়ে অনেক ভালো পারফরম্যান্স করি আমরা। তবে একজন কোচের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, দলের খেলোয়াড়রা কতটা জায়গা এবং সুযোগ তৈরি করতে পারছে এবং প্রতিপক্ষের গোলকিপারের সামনে কতটা তৎপর থাকতে পারছে। সে দিক থেকে গত ম্যাচে আমরা অনেক ভালো খেলেছি। এই পরিস্থিতিটা আমাদের পক্ষে অনেক ভালো। তবে আগেই বলেছি, অতীত নয়, ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ আর আক্রমণ বেশ ভালো- নিজেদের ডিফেন্সের ফাঁক পূরণে মন প্রীতমদের
প্রশ্ন: আপনার দলের বিদেশিরা বিশেষ করে ফ্লোরেন্তিন পোগবা ও ব্রেন্ডন হ্যামিল কি আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন?
ফেরান্দো: বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রধান লক্ষ্য থাকে দলকে সাহায্য করা। বিভিন্ন ক্লাবের বিদেশিদের একই উদ্দেশ্য থাকে। স্থানীয় ফুটবলারদের সাহায্য করে থাকে ওরা। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল ওরা যেন একই ভাবে খেলে যায়। আমি খুশি যে, আমাদের বিদেশিরা দলকে সাহায্য করে চলেছে। ছ’জন বিদেশিই অনুশীলনে তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে। এটা ক্লাবের ও দলের পক্ষে খুবই ভাল।
প্রশ্ন: দিমিত্রি পেত্রাতোস দলে এসে যাওয়ার পরে কি আপনার দলের আক্রমণের সমস্যা মিটে গিয়েছে?
ফেরান্দো: আমরা যখন আক্রমণে উঠি, তখন দলের সব ফুটবলারই গুরুত্বপূর্ণ। সবাই নম্বর নাইনকে নিয়েই বেশি আগ্রহ দেখায় ঠিকই, কিন্তু আক্রমণে ওঠার সময় সবাই যার যার নিজের জায়গা তৈরি করে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। যদি আমরা জনি কাউকো বা লিস্টন কোলাসোর গোল নিয়ে ভাবি, তা হলে সেটাই প্রমাণিত হয়। এটাই ফুটবল। এর ফলে কখনও সাফল্য আসে, কখনও আসে না। তাই এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাছে দলই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: গত ম্যাচেই হ্যাটট্রিক পাওয়ায় পেত্রাতোস কাল অনেক বেশি ফোকাসে থাকবেন। প্রতিপক্ষও নিশ্চয়ই তাঁকে কড়া মার্কিংয়ে রাখবে। এর ফলে কি আপনার অন্যান্য স্কোরাররা বিপক্ষের গোলের সামনে আরও স্বাধীন ভাবে খেলতে পারবে ও গোলের সুযোগ পাবে বলে আপনার মনে হয়?
ফেরান্দো: একজন বা দু’জন খেলোয়াড়কে নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করাটা বোধহয় ঠিক নয়। কাল ২২জন প্রতিভাবান ফুটবলার মাঠে নামবে। তাদের প্রত্যেকের সামনেই সমান সুযোগ থাকবে। আগেও বলেছি, আমরা যদি কাল দল হিসেবে খেলতে পারি, তা হলে কোনও বিশেষ খেলোয়াড়ের দিকে বাড়তি মনযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। দশ-কুড়ি বছর আগে হয়তো দু-একজন খেলোয়াড় অনেক কিছু বদলে দিতে পারত। কিন্তু এখন আধুনিক ফুটবলে ১১ জন খেলোয়াড়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যদিও দলের ১১জন খেলোয়াড়ের একই গতি-বেগে বা ছক বজায় রেখে খেলা কঠিন, কিন্তু আমাদের এটাই লক্ষ্য।
প্রশ্ন: গত কয়েকটি ম্যাচে আপনাদের রক্ষণের সমস্যা প্রকট ভাবে দেখা দিয়েছে। ডার্বিতে কি সেই সমস্যা দূর হবে বলে মনে করেন?
ফেরান্দো: রক্ষণ নিয়ে অবশ্যই আমরা ভাবনা-চিন্তা করছি। গত ম্যাচেও আমাদের সমস্যা ছিল। তবে আক্রমণ ভাল হওয়ায় তা সামলে গিয়েছে। তবে শুধু আক্রমণ বা রক্ষণে আলাদা করে নজর দেওয়াটা ঠিক নয়। ফুটবলে অনেক সময় আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, না হলে প্রচুর ভুল হয়। সেগুলোই শোধরাতে হবে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।