শেষ হাফ ডজন ডার্বিতে জয়ের দেখা নেই ইস্টবেঙ্গল এফসি-র। আইএসএলের যে চারটি ডার্বি হয়েছে, তাতে হেরেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। এমন কী ডুরান্ড কাপের শেষ ডার্বিতেও আত্মঘাতী গোল করে হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। তবে আইএসএলে নিজেদের খেলা শেষ ম্যাচে নর্থইস্টকে হারানোর পর থেকেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ডার্বির আগে তারা অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে। এখন তারা রীতিমতো চনমনে মেজাজে রয়েছে।
এমন কী যে কোচ, দু'দিন আগে পর্যন্ত নিজের দল নিয়ে কোনও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না, সেখানে সেই স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের গলায় অন্য সুর। প্রাক ডার্বির পরিস্থিতি বিচার করলে, মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা উচিত জুয়ান ফেরান্দোর। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে কিছুটা নিস্তেজ দেখাল স্প্যানিশ কোচকে। অন্যদিকে তাঁর ব্রিটিশ কাউন্টারপার্ট অনেকটাই স্বতস্ফূর্ত। শুরুতে জোড়া হারের পর একটা জয় পুরো শিবিরের মুড বদলে দিয়েছে। যার আভাস পাওয়া গেল কনস্ট্যানটাইনের শরীরী ভাষায়।
ডার্বির আগের দিন সাংবাদিক সম্মেনলে কনস্ট্যান্টাইনের হুঙ্কার, ‘আমি এক পয়েন্টে আগ্রহী নয়। আমরা ড্রয়ের জন্য ডার্বি খেলি না। কোনও দলই এক পয়েন্টের জন্য বড় ম্যাচে নামে না। আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামব। ডার্বি যখনই হোক না কেন, আমাদের তৈরি থাকতে হয়।’
আরও পড়ুন: EB-কে বিশেষ গুরুত্ব নয়,ATK MB-র তারকাকে মাথায় তুলছেন না,টিম গেমই লক্ষ্য ফেরান্দোর
খাতায় কলমে পিছিয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু দেখে বোঝা দায়। আত্মবিশ্বাস ঝড়ে ঝড়ে পড়ল ব্রিটিশ কোচের কথাবার্তায়। কনস্ট্যান্টাইন বলেন, ‘আমরা অনেক উন্নতি করেছি। এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচের থেকে অনেক ভালো হয়েছে আমাদের খেলা। এটা লিগের ম্যাচ। দুটো দলই তিন পয়েন্ট চায়। গত আট-ন’বার সাক্ষাতে মনে হয় ডার্বি জিতিনি। সেটা কাল রাতে শুধরে নিতে চাই। আশা করছি কঠিন ম্যাচ হবে। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানকে একেবারেই ভয় পাচ্ছি না। আমরা লড়াই করব।’
শনিবার আইএসএলের প্রথম ডার্বি হলেও, ঠিক দুই মাস আগে যুবভারতীতে ডুরান্ড ডার্বির অভিজ্ঞতা আছে কনস্ট্যানটাইনের। সুমিত পাসির আত্মঘাতী গোলে জিতেছিল এটিকে মোহনবাগান। তবে সে দিনের ম্যাচের সঙ্গে ২৯ অক্টোবরের ডার্বি মেলাতে রাজি নন ব্রিটিশ কোচ। তাঁর দাবি, ‘ভারতীয় ফুটবল ক্যালেন্ডারে কলকাতা ডার্বি সবচেয়ে বড় ম্যাচ। এটিকে মোহনবাগান শক্তিশালী দল। ম্যাচটা কঠিন হবে। তবে প্রথম ডার্বির তুলনায় এখন পরিস্থিতি আলাদা। আমরা অনেক উন্নতি করেছি। ডুরান্ড কাপের ম্যাচ আমাদের জন্য শুধুমাত্র চারটে প্র্যাকটিস ম্যাচ ছিল। আমরা এখন অনেক উন্নত দল। জানি আমরা শেষ ৮-৯টা ডার্বি জিতিনি। হয়তো প্রতিপক্ষকে টক্কর দেওয়ার মতো পরিস্থিতি বা ক্ষমতা ছিল না। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার খেলাটা জমবে। আমাদের তিন পয়েন্ট পেতেই হবে।’
প্রত্যেক ম্যাচেই গোল হজম করছে ইস্টবেঙ্গল। তার উপর আগের ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। লিস্টন, মনবীররাও ফর্মে ফিরেছেন। সবুজ মেরুনের আক্রমণভাগ শক্তিশালী। লাল হলুদ রক্ষণের ওপর কি বাড়তি চাপ থাকবে? স্টিফেন বলেন, ‘ওরাও গোল হজম করছে। প্রত্যেক ডার্বি স্পেশাল। আমাদের হোমওয়ার্ক সারা। বাকিটা মাঠে দেখা যাবে।’
আরও পড়ুন: কলকাতা ডার্বি জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চায় এটিকে মোহনবাগান, গোল করতে চান লিস্টন
ইস্টবেঙ্গলের প্রথম তিনটে ম্যাচেই ৬০ মিনিটের পর একটা গা ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছে। যার ফলে ক্লিনশিট রাখতে পারছে না লাল হলুদ। ব্রিটিশ কোচ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ডার্বি জিততে হলে তাঁদের ৯০ মিনিটই ভালো ফুটবল খেলতে হবে, নয়তো সমস্যা পড়তে হবে। আত্মবিশ্বাসী হলেও আইএসএলের প্রথম ডার্বিতে যে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে তাঁর দল, সেটা মেনে নেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। স্টিফেন বলেন, ‘আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। আগের দুই বছরের তুলনায় ইস্টবেঙ্গলের ভালো জায়গায় শেষ করা উচিত। এখনও পর্যন্ত আমরা যে ভাবে এগোচ্ছি, তাতে আমি খুশি। আশা করছি, আমরা নিজেদের প্রমাণ করতে পারব।’
প্রথম দিকে গোল পেতে সমস্যা হলেও, এখন সেটা অনেকটাই মিটে গিয়েছে। ক্লেইটন সিলভা, জর্ডন ডহের্টিরা গোল পাচ্ছেন। শনিবাসরীয় রাতেও তাঁদের দিকে তাকিয়ে স্টিফেন। বলেও দিলেন, ‘ক্লেইটনের অভিজ্ঞতা এবং ফুটবল বোধ আমাদের কাছে সম্পদ। ডার্বিতে ও আমাদের অধিনায়ক। মাঠে এবং মাঠের বাইরে ও একজন আদর্শ নেতা। কাল আমরা ক্লেইটনের থেকে হ্যাটট্রিক চাই।’
স্টিভনের কাছে এটা দ্বিতীয় কলকাতা ডার্বি হলেও এই ম্যাচ সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট পড়াশোনা রয়েছে। বলেছেন, ‘কলকাতা ডার্বির অতীত সম্পর্কে ভালোই জানি। একটা সময় স্টেডিয়ামের আয়তনের থেকে বেশি দর্শক আসত। অবিশ্বাস্য একটা পরিবেশ তৈরি হত। আর্সেনাল-টটেনহ্যাম, সেল্টিক-রেঞ্জার্স, মিলান ডার্বির সঙ্গে তুলনা করা যায় একে। নিঃসন্দেহে এটাই এশিয়ার সেরা ডার্বি ম্যাচ। ভালো হত, যদি খেলোয়াড় হিসাবে খেলতে পারতাম। আশা করি কোচ হিসাবে জিততে পারব।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।