আগের ম্যাচেই কেরালা ব্লাস্টার্সের সঙ্গে ড্র করে এটিকে মোহনবাগান একটা ধাক্কা খেয়েছে।। শীর্ষে থাকা হায়দারাবাদ এফসি-র সঙ্গে তাদের পয়েন্টের ব্য়বধান বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে জামশেদপুর এফসিও সবুজ-মেরুনকে তিনে নামিয়ে দুইয়ে উঠে এসেছে। শীর্ষে থাকার লড়াইটা কঠিন করে ফেলেছে জুয়ান ফেরান্দোর টিম।
এই পরিস্থিতিতে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামবে এটিকে মোহনবাগান। ফেরান্দোর সামনে লক্ষ্য এখন একটাই। প্রতিটা ম্যাচকে ফাইনাল ধরে এগোন। সব ম্যাচ থেকেই তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে মরিয়া বাগান। যাতে লিগ তালিকায় শীর্ষে থেকে তারা শেষ করতে পারে।
২৩ জানুয়ারি ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করেছিল এটিকে মোহনবাগান। তবে ফিরতি লিগে তারা জিততে মরিয়া হয়ে রয়েছে। ১৬ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএল তালিকার তিনে রয়েছে বাগান। এ দিকে ১৮ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএল তালিকার সাতে রয়েছে ওড়িশা। এ দিকে হায়দরাবাদ ১৮ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএল তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ১৬ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রয়েছে জামশেদপুর।
ওড়িশার বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে অবশ্য চোট আঘাত সমস্যায় জর্জরিত এটিকে মোহনবাগান। ওড়িশার বিরুদ্ধে নামার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন জুয়ান ফেরান্দো:
আপনার দলের বিদেশিদের অবস্থা কী? ওঁরা কি কাল মাঠে নামার মতো ফিট?
ওরা সবাই একশো শতাংশ প্রস্তুত নয়। চোট থেকে সেরে ওঠার একটা প্রক্রিয়া থাকে। ধাপে ধাপে ক্রমশ ভাল মতোই সুস্থ হয়ে উঠছে। ওরা এখন দলকে সাহায্য করতে পারে। কয়েকজন একশো শতাংশ ফিট নয়। তবে আমি খুশি। কারণ, এখনই মরশুমের সেরা সময়। আর এই সময়ে ওরা ভাল আছে।
গত ম্যাচে রয় কৃষ্ণাকে ১৫ মিনিটের জন্য মাঠে দেখা গিয়েছে। উনি কি কাল পুরো ৯০ মিনিট খেলতে পারবেন?
দেখা যাক। ওর চোটটা আসলে খুব গুরুতর ছিল। ওকে এখন প্রথমে ২০ মিনিট, তার পরে ধাপে ধাপে ৪৫, ৬০ মিনিট খেলানোর পরে ৯০ মিনিট খেলার জায়গায় আনতে হবে। এটাই খেলোয়াড়দের সুস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া। দেখা যাক মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি আসে যে, পরিকল্পনায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। তবে আমার কাছে রয় যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই উইলিয়ামস, কার্লও। আশা করি ক্রমশ ওদের পারফরম্যান্স ভাল হবে।
লিস্টন-কোলাসোকে গত ম্যাচে সেরা ফর্মে দেখা যায়নি ওঁর শারীরিক অসুস্থতার কারণে?
না শারীরিক সমস্যা নয়। আসলে যখন তিন সপ্তাহে ৬-৭টা ম্যাচ খেলতে হয়, তখন ক্লান্তি আসেই। সব ক্লাবেরই একই সমস্যা। লিস্টন একশো শতাংশ দিতে তৈরি নয়। সুসাইরাজকে খেলানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু ওকেও বিভিন্ন চোট সারানোর প্রক্রিয়া পেরিয়ে আসতে হয়েছে। এই পজিশনে লিস্টন ও সুসাইকেই খেলানো যেতে পারে। সুসাইয়ের অবস্থা ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। লিস্টন ক্লান্ত হলে ওকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। অনুশীলনে যদি দেখি সুসাই ভাল খেলছে, তা হলে ওকে নামাতে পারি। কেউ টানা খেলে গেলে মাঝে মাঝে তাকে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন।
জোনাথাস ওড়িশা দলের অন্যতম বিপজ্জনক খেলোয়াড়। ওঁর জন্য কি আলাদা পরিকল্পনা আছে? দলের পরিকল্পনাই বা কী?
আমাদের নীতি হল প্রতিপক্ষের সবাইকে নিয়ে ভাবো। একজন খেলোয়াড়ের ওপর বেশি মনোনিবেশ করা মানে অযথা শক্তির অপচয়। ওদের দলটা ভাল। ভাল বিদেশি রয়েছে ওদের দলে। জেরির মতো স্থানীয় ফুটবলার রয়েছে। ওদের পুরো দল নিয়েই ভাবতে হবে।
সেট পিস থেকে গোলের ক্ষেত্রে আপনারা অন্যান্য দলের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। এতে কি আপনাদের সমস্যা বাড়তে পারে বলে মনে করেন?
আমার মনে হয় না। মরশুমের শেষ দিকে এসে অনেক ছোটখাটো ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত ম্যাচে বিপক্ষ একটা সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু তখন ফাউল হয়েছিল। ওদের কাছে এটা সুযোগ। কিন্তু আসলে তা নয়, ওটা ফাউল ছিল। সেট পিস কখনও কখনও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ঠিকই। কারণ, এটা খেলারই অঙ্গ। আমার কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ৯০ মিনিট মনোনিবেশ করা। দলের খেলোয়াড়রা ৯০ মিনিট একই ভাবে ভাল খেলে যেতে পারলে আমি খুশি।
হুগো বৌমাসকে গত ম্যাচে মাথা গরম করতে দেখা গিয়েছে মাঝে মাঝে। এই নিয়ে কি ওঁর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?
শুধু হুগো নয়, এই নিয়ে সবার সঙ্গে প্রায় সব সময়ই কথা হয়। এটা পেশাদার ফুটবলের অঙ্গ। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই প্রয়োজন। সব সময়ই যে সব ঘটনা দলের বা খেলোয়াড়দের পক্ষে ইতিবাচক হবে, তার কোনও মানে নেই। রেফারি বা কোচেদের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলেও আবেগ ঝেড়ে ফেলে সেগুলো মেনে নিতে জানতে হয়। কারণ, আমরা পেশাদার। আর পেশাদাররা সেটাই করে, যাতে ক্লাব ও তার নিজের পক্ষে ভাল হয়।
ওড়িশার বিরুদ্ধে জিতলে কি সেরা চারে আপনাদের জায়গা পাকা হবে বলে মনে করেন?
এসব নিয়ে ভাবছিই না। আমি শুধু তিন পয়েন্ট পাওয়ার কথা ভাবছি। তার পরে খেলোয়াড়দের ফের চাঙ্গা করে তুলে বেঙ্গালুরুর মুখোমুখি হওয়ার কথা ভাবছি। কারণ, বৃহস্পতিবারের পরে ম্যাচ আবার রবিবার। সেরা চারে থাকা নিয়ে চিন্তা করছি না। চিন্তা করছি এক নম্বর জায়গাটা নিয়ে। আমাদের মানসিকতা এ রকমই। দুটো ম্যাচ খুব কাছাকাছি আছে আমাদের। আগামী কয়েকদিনে খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা ম্যাচ রয়েছে। এর মধ্যে আমাদেরও দুটো ম্যাচ আছে। আগামী দু’সপ্তাহ সমর্থকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চলেছে। এ বারের পুরো মরশুমটাই বেশ আকর্ষণীয় হচ্ছে। বেশির ভাগ দলেরই সুযোগ রয়েছে সেরা চারে থাকার।
আপনাদের শেষ ম্যাচ জামশেদপুরের বিরুদ্ধে, যেটা লিগ পর্বেরও শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচই কি লিগশিল্ড জয়ীর নাম নির্ধারণ করবে? কী মনে হয় আপনার?
জানি না। আমার ইচ্ছে বা স্বপ্নের কথা যদি বলেন, মোটেই আমি তা চাইব না। ওই ম্যাচটা আমরা উপভোগ করতে চাই। তবে সেটা হওয়া বোধহয় কঠিন। শেষ দিকের ম্যাচগুলো প্রত্যেকের কাছেই কঠিন হবে। আমরা লিগ পর্বের শেষে এক নম্বরে থাকব কি না, তা নির্ভর করবে আমাদেরই ওপর। তবে শেষ ম্যাচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে, তা তার আগের তিনটি ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে। দেখা যাক কী হয়।
য়।