১৯৩৬ সালের ৪ অক্টোবর বর্তমান তেলেঙ্গানা রাজ্যের সেকেন্দরাবাদে আম্মাগুডা গ্রামে জন্ম তুলসীদাস বলরামের। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে ছিলেন তুলসীদাস বলরাম। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। সেই কারণেই তাঁর মা ফুটবল খেলাতে বাধা দেন বলরামকে। তাঁর মা চেয়েছিলেন সরকারি কর্মী হোক তাঁর ছেলে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাল ধরুক সংসারের। কিন্তু ছেলের তো তখন বিশ্ব জয় করার অদম্য জেদ।
দুই বেলা ঠিক মত খাবার জোগাড়ের ক্ষমতা ছিল না তাঁর মায়ের। অধিকাংশ সময় খালি পেটেই খেলতে হতো। কিন্তু ফুটবল যে তাঁর প্রান। থেমে থাকেননি তিনি। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলতে থাকে দেদার ফুটবল খেলা। এমনকি ফুটবল কেনারও টাকা ছিল না। রবারের বল কিনে এবং অসমান জায়গায় চলত ফুটবল অনুশীলন।
একদিন হঠাৎ চোখে পড়ে গেলেন আব্দুল রহিমের। আব্দুল রহিম তখন অধুনালুপ্ত হায়দরাবাদ ফুটবল সংস্থার সভাপতি। বলরামের বল নিয়ন্ত্রণ নজরকাড়ে রহিম সাহেবের। ১৯৫৬ সালের সন্তোষ ট্রফির জন্য হায়দরাবাদ দলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। রোজ সেকেন্দরাবাদ থেকে হায়দরাবাদে যাওয়ার মতো টাকাও ছিল না বলরামের। রহিম সাহেব সাইকেল কিনে দেন তাঁকে।
সন্তোষ ট্রফিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেন বলরাম। সেই ফর্মই তাঁকে জায়গা করে দেয় মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলে। অবশ্য সেই দলে অধিকাংশ ম্যাচই মাঠের বাইরে কাটিয়েছেন তিনি। রহিম চেয়েছিলেন অলিম্পিকে অভিজ্ঞতা অর্জন করুক বলরাম। তিনি ভারতে ফেরার পর কলকাতার ক্লাব ইস্টবেঙ্গল তাঁকে নিতে চেয়েছিল। রাজিও হয়েছিলেন বলরাম। তাঁকে খেলতে দেননি আব্দুর রহিম। তখন বলরাম হায়দরাবাদ সিটি পুলিশের হয়ে খেলা শুরু করেন। সেখানে কনস্টেবলের চাকরি পান। কিন্তু তাঁর আশা পূরণ হয়নি সেখানে। ব্যাগ পত্র গুটিয়ে চলে আসেন ইস্টবেঙ্গলে।
এই সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনে সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত হয়ে ওঠে। একের পর এক ম্যাচে করতে থাকেন অসাধারণ পারফরম্যান্স। ১০৪টি গোল করেন। বহু ট্রফি জিতেছেন লাল হলুদের হয়ে। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬২ সাল বলরামের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো সময় ধরা হয়। শুধু ভারত নয়, এশিয়ার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন তিনি। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, বলরামের নাম এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হতে থাকে দর্শকদের কাছে।
শেষ জীবনে নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন তুলসীদাস বলরাম। ক্লাবের প্রতি অভিমানী হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বয়স জনিত কারণে ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে ৮৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তুলসীদাস বলরাম। পিকে, চুনিরা আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার চলে গেলেন তাদের সতীর্থ। সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটল।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।