বাংলা নিউজ > ময়দান > ফুটবলারের বদলার কাহিনি! মায়ের প্রতি বাবার বঞ্চনার জবাব দিতে ফুটবলকেই বাছলেন প্রেমাংশু ঠাকুর

ফুটবলারের বদলার কাহিনি! মায়ের প্রতি বাবার বঞ্চনার জবাব দিতে ফুটবলকেই বাছলেন প্রেমাংশু ঠাকুর

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেমাংশু ঠাকুররা (ছবি-আইএফএ)

নিজের বাবাকে উপযুক্ত জবাব দিতে ফুটবলকেই বেছে নিয়েছেন বাংলার প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার প্রেমাংশু ঠাকুর। আসলে প্রেমাংশুর জন্মের পরে তাঁকে ও তাঁর মাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রেমাংশুর বাবা। এরপরে কঠিন লড়াই করে প্রেমাংশুকে মানুষ করছেন তাঁর মা। বাবাকে জবাব দিতে ফুটবলকে বেছে নেন প্রেমাংশু।

নিজের বাবাকে উপযুক্ত জবাব দিতে ফুটবলকেই বেছে নিয়েছেন বাংলার প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার প্রেমাংশু ঠাকুর। প্রেমাংশু কি নিজের লক্ষ্যে সফল হবেন? এই প্রশ্নটাই ঘুরছে সর্বত্র। আসলে প্রেমাংশুর জন্মের পরে তাঁকে ও তাঁর মাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রেমাংশুর বাবা। এরপরে কঠিন লড়াই করে প্রেমাংশুকে মানুষ করছেন তাঁর মা। বাবাকে জবাব দিতে ফুটবলকে বেছে নেন প্রেমাংশু। এবার ফুটবলে সাফল্যে শিখরে উঠে প্রেমাংশু নিজের বাবাকে বোঝাতে চান যে, তিনি অতীতে যেটা করেছিলেন সেটা বড় ভুল ছিল। আসলে ফুটবল দিয়ে মায়ের প্রতি বঞ্চনার বদলা নিতে চান প্রেমাংশু।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কে এই প্রেমাংশু ঠাকুর? তিনি ফুটবলের কোন শিখরে ওঠার কথা ভাবছেন? আসলে বাংলার প্রত্যন্ত জেলা থেকে ফুটবল প্রতিভা তুলে আনার লক্ষ্যে আইএফএ এর সঙ্গে জড়িত হয়েছিল বাংলা নাটক ডট কম। ইউ এক্সেল স্পোর্টস ভেনচার এর সহযোগিতায় সকলের মিলিত প্রয়াসে দুটি মডেল জেলা হিসেবে পুরুলিয়া ও নদীয়া থেকে চারজন ও উত্তর চব্বিশ পরগনা ও হুগলি থেকে এক জন করে মোট ছয় জন তরুণ প্রতিভা কে তুলে আনা হয়েছে যারা আগামী সেপ্টেম্বর এ স্পেনের মত্রিল ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং এর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরা হলেন মহেশ্বর সিং সরদার (স্ট্রাইকার, পুরুলিয়া) দেবজিত রাউত (গোলকিপার, নদীয়া), অনিকেত মণ্ডল (উত্তর চব্বিশ পরগনা, উইঙ্গার), বিশাল সূত্রধর (নদীয়া, মিড ফিল্ডার) ও প্রেমাংশু ঠাকুর (নদীয়া, ডিফেন্ডার)। স্পেন এর মন্ট্রিল অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক ফেরেন্দ তোরেস ও বাংলার প্রথম প্রো লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রশিক্ষক শঙ্কর লাল চক্রবর্তি এই বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

আরও পড়ুন… ব্যাট হাতে ৭৯* রান, বল হাতে চার উইকেট! ইতিহাস গড়েও অল্পের জন্য যুবরাজের রেকর্ড ছুঁতে পারলেন না রশিদ খান

শুক্রবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের তাঁবুতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সচিব অনির্বাণ দত্ত, কোষাধক্ষ্য দেবাশীষ সরকার, সহসভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস,সহ সচিব সুফল রঞ্জন গিরি, শেখ নজরুল ইসলাম, বাংলা নাটক ডট কম এর কর্ণধার অমিতাভ ভ্ট্টাচার্য, ইউ এক্সেল স্পোর্টস ভেঞ্চার এর সঞ্জিত সেন। সেখানেই বাকি সকল তরুণ ফুটবলারদের সঙ্গে প্রেমাংশু ঠাকুরের সাফল্যের কথা বলা হয়েছিল। ছেলের সাফল্যের এই খবরে কষ্টের স্মৃতি মনে ভেসে ওঠে প্রেমাংশুর মা দুর্গা সরকারের। একটা সময়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। নিজের বাবার কাছে ফিরে ছোট্ট ছেলেকে বুকে আগলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রেমাংশুর মা দুর্গা সরকার। তখন থেকেই দাঁতে দাঁত চেপে শুরু হয়েছিল ছেলের জন্য মায়ের লড়াই।

<p>মা দুর্গা সরকারের সঙ্গে বাংলার প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার প্রেমাংশু ঠাকুর</p>

মা দুর্গা সরকারের সঙ্গে বাংলার প্রতিভাবান তরুণ ফুটবলার প্রেমাংশু ঠাকুর

আরও পড়ুন… ‘খারাপ’ আম্পায়ারিং ও দর্শকদের আচরণ নিয়ে মুখ খুলে জরিমানার সম্মুখীন SRH-র ক্লাসেন

ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ নিয়েছিলেন প্রেমাংশুর মা দুর্গা সরকার। পরিচারিকার কাজ করে ছেলের খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনার খরচ সামলেছেন। তবে প্রেমাংশুর মায়ের স্বপ্ন ছিল যে ,ছেলে বড় হয়ে সরকারি চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু ছেলের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা দেখে ভয় পেয়েছিলেন মা, কারণ তিনি আন্দাজ করেছিলেন যে, তিনি যে স্বপ্নটা দেখছেন সেটা হয়তো সফল হবে না। হাজার বকাবকি ও শাসনেও প্রেমাংশুর পা থেকে ফুটবল ছাড়াতে পারেনি মা দুর্গা সরকার। টিফিনের পয়সা জমিয়ে জুতো কিনে খেলা শুরু। দিদির জমানো টিউশনে টাকা চুরি করে প্রথম ফুটবল কেনা। স্কুল পালিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস।

ফুটবলের প্রতি প্রেমাংশুর ভালোবাসা যে কৃ্ত্রিম ছিল না সেটা আজ বুঝতে পেরেছেন সকলে। সেই ফুটবলের মাধ্যমেই সাফল্যের পথ খুঁজে পেয়েছেন প্রেমাংশু। এবার প্রেমাংশু যাচ্ছেন বিদেশে। চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না মা দুর্গা। প্রেমাংশুর মা বললেন, ‘নিজে না খেয়েও ছেলেকে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। সারাদিন অন্যের বাড়ি কাজ করতাম, রাতে বিড়ি বাধতাম। কিন্তু ছেলের পড়াশোনায় একটুও মন ছিল না। সারাদিন ফুটবল নিয়ে পাগলামি করত। কষ্ট হতো, ভয়ও পেতাম। কি করে খাবে? কি হবে ওর ভবিষ্যৎ? আজ ওর সাফল্যে আমি শুধু গর্বিত।’

(আইপিএলের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে- https://bangla.hindustantimes.com/sports/ipl)

প্রেমাংশু ঠাকুর বললেন, ‘আমার জন্মের পর মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল বাবা। আমি এমন সাফল্য অর্জন করতে চাই যাতে আমাদের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বাবাকে আফসোস করতে হয়। এই প্রতিশোধের অস্ত্র একমাত্র ফুটবল। ভালো করে ফুটবল খেলে দেশ ও রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করতে চাই।’ বর্তমানে প্রেমাংশুর পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জোরকদমে চলছে প্র্যাকটিস। আর কয়েক মাস পরেই পাড়ি জমাবেন স্পেনে। বল পায়েই দাগ কাটতে চান স্পেনীয় কোচদের মনে। বিশ্ব শিখড়ে তুলে ধরতে চান ভারতীয় ফুটবলকে।

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup

বন্ধ করুন