বাংলা নিউজ > ময়দান > ফুটবলের মহারণ > EURO 2020: মাঠ পেরিয়ে জীবনের নায়ক ড্যানিশ অধিনায়ক সিমোন কিয়ের

EURO 2020: মাঠ পেরিয়ে জীবনের নায়ক ড্যানিশ অধিনায়ক সিমোন কিয়ের

এরিকসেনের সাময়িক চিকিৎসায় রত সিমোন কায়ের। ছবি- রয়টার্স। (Pool via REUTERS)

ম্যাচের মাঝে যখন এরিকসেন আচমকাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন, তখন তাঁর সবথেকে কাছাকাছি ছিলেন জাতীয় দলের সতীর্থ সিমোন কিয়ের।

শুভব্রত মুখার্জি

কথায় বলে ফুটবল এমন একটা খেলা যা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ইউরো কাপ ২০২০ সালের উদ্ধোধনী দিনের উদ্ধোধনী ম্যাচ দেখিয়েছিল কিভাবে ফুটবল একদা করোনা বিধ্বস্ত একটা দেশকে বাঁচার অক্সিজেন পৌছে দিল। যে ইতালিতে করোনার প্রথম ঢেউ একেবারে মৃত্যুমিছিল শুরু করে দিয়েছিল সেই দেশ তুরস্কের ম্যাচে যে ধ্রুপদী ফুটবল খেলে তা যেন গোটা দেশটাকে উজ্জীবিত করে দেয়।

ঠিক সেভাবেই ডেনমার্ক বনাম ফিনল্যান্ড ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের ঘটনা দেখিয়ে দিয়ে গেল কিভাবে একটা ঘটনা গোটা বিশ্বকে এক সূত্রে বেঁধে দিতে পারে। খেলার প্রথমার্ধের ৪২ মিনিটের মাথায় যখন আচমকাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন ইন্টার মিলানে খেলা ২৯ বছর বয়সী ড্যানিশ তারকা এরিকসেন, তখন তাঁর সবথেকে কাছাকাছি ছিলেন তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ সিমোন কিয়ের। যিনি দেশের অধিনায়ক তো বটেই। আবার ইতালীয় সেরি-এ তে খেলেন ইন্টারের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল এসি মিলানে।

ইন্টার বনাম এসি মিলানের ডার্বি পৃথিবীর ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় ডার্বিগুলোর একটা। ইন্টারের এরিকসেন যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন রেফারি ততক্ষনে মেডিক্যাল টিমকে ডাক দিয়ে দিয়েছেন। বিপক্ষ ফুটবলাররাও দৌড়াচ্ছেন এরিকসেনকে দেখতে। তখন এক একটা সেকেন্ডের মাহাত্ম্য অনুভব করে এগিয়ে এলেন দলনায়ক তথা এসি মিলানের ফুটবলার কিয়ের। 

পরিস্থিতি দেখেও একটুও ঘাবড়ালেন না। দলনায়কের মতো ঠান্ডা রাখলেন মাথা। খালি মনে রাখলেন বেসিক জিনিসটা। কার্ডিয়াক অ্যাটাকের সময় যাতে কোনভাবে এরিকসেনের জিভ মুখের ভিতর ঢুকে না যায়। একবার জিভ মুখে ঢুকে গিয়ে জিভ আটকে গেলে অর্থাৎ মুখ বন্ধ হলে আর খোলা না গেলে বিপদ থেকে এরিকসেনকে যে বের করা যাবেনা, সেটা মাথায় গেঁথে নিলেন। মেডিক্যাল টিম এসে পৌঁছানোর আগে সেই গুরুত্বপূর্ণ কয়েক সেকেন্ড দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কিয়ের।

মুখে মুখ রেখে ক্রমাগত এয়ার সাকশান করে গেলেন। এরপরের ঘটনা সকলের জানা। মেডিক্যাল দল এখান থেকেই বাকি কাজটা সঠিক ভাবে সম্পন্ন করলেন। প্রান বাঁচল এরিকসেনের। সতীর্থ কিয়ের তখন তাঁর কাছে, তাঁর পরিবারের কাছে যেন 'দেবদূত'। গ্যালারিতে সমবেত ধ্বনি উঠছে  ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের নামে। এরমধ্যেই জ্ঞান ফিরে পাওয়া এরিকসেনকে তোলা হয়েছে স্ট্রেচারে। অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে উঠতে সতীর্থ তথা দলনায়ক সাইমন কিয়েরকে যেন নিঃশব্দে ধন্যবাদটা দিতে ভুললেন না এরিকসেন। 'দেবদূত' সিমোন কিয়ের শুধু এরিকসেনের প্রাণরক্ষা করলেন না, বাঁচিয়ে দিলেন গোটা ফুটবল বিশ্বকে এক বিষাদঘন মূহুর্তের হাত থেকে।

বন্ধ করুন