ইউরো ২০২৪-এর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ইংল্যান্ড ছিটকে গেলেও, অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কারণ যেরকম ফুটবল তারা এদিন খেলেছে, তাতে বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, ভাগ্য, বুকায়ো সাকা এবং অভিজ্ঞতা- এই তিনের জোরেই সেমিফাইনালে উঠেছেন হ্যারি কেনরা। না হলে দ্বিতীয়ার্ধে সুইৎজারল্যান্ড যে রকম ফুটবল খেলেছে, তাতে ইংল্যান্ডের জয়টা কিছুটা পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা।
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালেও ইংল্যান্ড পিছিয়ে পড়েছিল। শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়েছিলেন বেলিংহ্যাম। আর কোয়ার্টার ফাইনালেও সেই একই ছবি। এবারও শেষ আটের লড়াইয়ে সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েছিল ইংরেজরা। মান বাঁচান বুকায়ো সাকা। ম্যাচের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও রকমে সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ফলের কোনও পার্থক্য হয়নি। এর পর টাইব্রেকারে ম্যাচ গেলে হেরে যায় সুইৎজারল্যান্ড। এখানেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগে ইংল্যান্ডের। আর টাইব্রেকারের চাপটা নিতে পারেনি সুইৎজারল্যান্ডের প্লেয়াররা। আর টাইব্রেকারের নায়ক নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডন পিকফোর্ড।
আরও পড়ুন: অভিষেকেই সেমিতে, টাইব্রেকারে ভেনেজুয়েলাকে হারিয়ে ইতিহাস কানাডার, শেষ চারে মুখোমুখি আর্জেন্তিনার
চলতি ইউরোর শুরু থেকেই ইংল্যান্ড খুব একটা ভালো ছন্দে নেই। গ্রুপ পর্ব থেকেই তারা সেভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। বা সুযোগ তৈরি হলেও, সেটা কাজে লাগাতে পারেনি। ব্রিটিশদের এই রোগটাই সুইৎজারল্যান্ড এদিন কাজে লাগায়। তারা রক্ষণ শক্ত করে, প্রতি আক্রমণের স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল। এই ছকেই তারা সব ম্যাচ খেলছে। এবং সাফল্যও পেয়েছে। যদিও প্রথমার্ধটা বড় বেশি ম্যাড়ম্যাড়ে ছিল। সেভাবে কোনও দলই আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারেনি। তাও সুইৎজারল্যান্ডের মধ্যে কিছুটা তাগিদ দেখা গিয়েছিল। যদিও গোলের কাছে গিয়ে তারা থমকে যাচ্ছিল। তবে ইংল্যান্ডের দশা ছিল তথৈবচ। প্রথমার্ধ গোলশূন্যই ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য সুইজারল্যান্ড ধীরে ধীরে আক্রমণের গতি বাড়ায়। ইংল্যান্ডের রক্ষণকে তারা বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিল। ম্যাচের ৫১ মিনিটের মাথায় কনসার শট বাঁচান ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডন পিকফোর্ড। এর পরেও বেশ কিছু ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারছিল না। তবে ইংল্যান্ড তখনও নিরুত্তাপ। কেমন যেন গা ছাড়া ভাব ছিল খেলার মধ্যে। হ্যারি কেনকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি ১০০ শতাংশ ফিট নন। তাঁকে তো কার্যত গোটা ম্যাচে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। শুধু মাঠের মদ্যে গড়াগড়ি খেয়ে যখন ফাউল আদায়ের চেষ্টা করছিলেন, তখন তাঁর উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছিল। বেলিংহ্যামও এদিন নিষ্প্রভ ছিলেন। সাকাই যেটুকু নজর কেড়েছেন।
যাইহোক ইংল্যান্ডের মধ্যে গা-ছাড়া ভাবের সুযোগ নিয়ে ৭৫ মিনিটে এগিয়ে যায় সুইৎজারল্যান্ড। ডান দিক দিয়ে এনডয়ের বল এসে পৌঁছয় বক্সের ভিতর। সেটি ক্লিয়ার করতে পারেনি ইংল্যান্ডের ডিফেন্স। জন স্টোনসের পায়ে লেগে বল যায় এমবোলোর কাছে। তিনি ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডারদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুরন্ত গোলটি করেন। পিকফোর্ডের কিছুই করার ছিল না। তবে গোল হজমের পর স্ট্র্যাটেজি বদলান ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। এর পর ইংরেজরা কিছুটা নড়চড়ে ওঠে। আক্রমণে উঠতে শুরু করে তারা। আর সেই ফলও পায় ইংল্যান্ড। ম্যাচের ৮০ মিনিটের মাথায় নিজের দক্ষতায় ১-১ সমতা ফেরান সাকা। বক্সের বাইরে বল ধরে বাঁ-পায়ের শটে গোল করেন তিনি। নির্ধারিত সময়ে আর গোল হয়নি। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে ইংল্যান্ডই বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও, গোলের মুখ খোলেনি। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে শেষ পর্যন্ত কেনকে তুলে নেন সাউথগেট। তবে আর গোলের মুখ খুলতে পারেনি কোনও টিমই। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারেই পার্থক্য গড়ে দেয় ম্যানুয়েল আকাঞ্জির মিস ও পিকফোর্ডের সেভ। প্রথম পেনাল্টি নিতে গিয়েই মিস করেন আকাঞ্জি। তাঁর দুর্বল শট বাঁচিয়ে দেন পিকফোর্ড। ইংল্যান্ড অবশ্য পাঁচে-পাঁচ করে। কটি শটও বাঁচাতে পারেননি সোমার। যার নিটফল, গত বারের রানার্স আপ ইংল্যান্ডকে পেয়ে যায় সেমিফাইনালের টিকিট। লড়াই করেও ছিটকে যেতে হয় সুইৎজারল্যান্ডকে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।