ইংল্যান্ডকে আটকে দিয়ে ২০২৪ ইউরো কাপের গ্রুপ- ‘সি’র লড়াই জমিয়ে দিল ডেনমার্ক। বৃহস্পতিবার ১-১ ড্র করে দুই দল। এই ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে আগে থেকেই জানা ছিল। হলও সেরকম। ট্যাকটিক্যাল লড়াইয়েই আটকে গেল দুই দল। এই ম্যাচ জিতলে জামার্নির পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোর টিকিট পেতে পারত ব্রিটিশরা। কিন্তু পয়েন্ট হারানোয় এখন গ্রুপের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ইংল্যান্ডকে। উল্টোদিকে বড় অক্সিজেন পেয়ে গেল ড্যানিশরা।
বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ড এবং আক্রমণ ভাগ নিয়ে এবার ইউরো খেলতে এসেছে ইংল্যান্ড। জুড বেলিংহ্যাম, ফিল ফোডেন, বুকায়ো সাকা, হ্যারি কেনরা বিশ্বের যে কোনও শক্তিশালী ডিফেন্সকে কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট। ক্লাব ফুটবল মাতিয়ে আসা এই তারকাদের কারণে ২০২৪ ইউরোতে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমেছে গ্যারেথ সাউথগেটের টিম। তবে সেই লড়াকু মানসিকতাটা কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বেলিংহ্যাম–ফোডেনদের খেলায়। এদিন হ্যারি কেনের গোলে ইংল্যান্ড প্রথমে এগিয়ে গিয়েও, ড্র করে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
সার্বিয়ার বিরুদ্ধে জিতলেও, সেভাবে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি হ্যারি কেনদের। এদিনও যেন ইংল্যান্ডের খেলার একটা শূন্যতা ছিল। জমাট ছিল না তাদের লড়াই। ইংল্যান্ডের রক্ষণের ফাঁকগুলো বড় স্পষ্ট ভাবে ধরা দিয়েছিল। এভাবে খেলতে থাকলে কিন্তু কপালে দুঃখ আছে সাউথগেটের ছেলেদের। এদিন বরং ডেনমার্কই শুরু থেকে বেশ আত্মবিশ্বাসী ফুটবল খেলছিল। যেহেতু এই ম্যাচে শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি হয়েছে, সে কারণে ম্যাচের বেশির ভাগ সময়েই লড়াইটা মাঝমাঠেই আবদ্ধ ছিল। বলের দখলের জন্য মরিয়া ছিল দু'দলই।
তবে ম্যাচের ১৮ মিনিটের মাথায় দলকে এগিয়ে দেন হ্যারি কেন। দলীয় আক্রমণের সুফল পায় ইংল্যান্ড। তবে এই গোলের জন্য নিঃসন্দেহে কৃতিত্ব দিতে হবে রাইট-ব্যাক কাইল ওয়াকারকে। প্রতিপক্ষ ফুটবলারের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে উপরে উঠে ওয়াকার মাপা পাস বাড়ান অরক্ষিত অবস্থায় থাকা হ্যারি কেনকে। সেই বল অবশ্য ক্লিয়ার করার সুযোগ ছিল ডেনমার্কের কাছে। কিন্তু তারা সেটা করতে পারেনি। বল পেয়ে সুযোগসন্ধানী হ্যারি কেন বাঁ-পায়ে তা জালে জড়ান। চলতি ইউরোয় এটি প্রথম গোল ইংল্যান্ড অধিনায়কের।
আরও পড়ুন: ফের দাপুটে জয়, হাঙ্গেরিকে ২-০ উড়িয়ে প্রি-কোয়ার্টার নিশ্চিত করে ফেলল জার্মানি
পিছিয়ে পড়েও ডেনমার্ক কিন্তু হাল ছাড়েনি। বরং আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ানোর চেষ্টা করে। ইংল্যান্ডের রক্ষণকে বেশ কয়েক বার চাপেই ফেলে দিয়েছিল তারা। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারছিল না। ২৯ মিনিটে গোলের কাছাকাছি গিয়েও, শেষ পর্যন্ত গোলটি হয়নি। তবে গোলের মুখ খুলতে না পারলেও, ম্যাচের রাশ কিন্তু ধরে রাখার চেষ্টা করে ডেনমার্ক। গোল হজমের পর তাদের গোলশোধের তাগিদটা মারাত্মক বেশি ছিল। যার সুফল ড্যানিশরা পায় ম্যাচের প্রথমার্ধেই। ৩৪ মিনিটের মাথায় গোলরক্ষক জর্ডন পিকফোর্ডকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রায় ২৮ গজ দূর থেকে নেওয়া শটে ১-১ করেন মর্টিন হুলমান্ড। বলটি পোস্টে লেগে ঢুকে যায় সোজা গোলে। ২০১৬ সালের পরে ইউরোয় গ্রুপ পর্বে এই প্রথম কোনও গোল খেল ইংল্যান্ড।
সমতা ফিরিয়ে ডেনমার্ক আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী ফুটবল খেলতে শুরু করে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মিডফিল্ডার এবং ফরোয়ার্ডদের যেন সেই সময়ে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক বেলিংহ্যামকে রীতিমতো নিষ্ক্রিয় লেগেছে। ইংল্যান্ডের হয়ে ফোডেনকেই কিছুটা লড়াই করতে দেখা গিয়েছে। বিরতির ঠিক আগে ফোডেনের একটি শট বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে বিরতিতে যায় দু'দল।
বিরতির পর দুই দলই চেষ্টা করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার। তবে কোনও দলই একক ভাবে আধিপত্য তৈরি করতে পারেনি। ৫৬ মিনিটে ফোডেনের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এদিন ইংল্যান্ডের প্রায় সব আক্রমণই হচ্ছিল ডান দিকের উইং ধরে। বাঁ-দিক থেকে সেভাবে আক্রমণ না হওয়ায়, ডেনমার্ক কিছুটা সুবিধা পেয়েছিল। ৬৯ মিনিটের মাথায় সাহস দেখান ইংল্যান্ডের কোচ সাউথগেট। হ্যারি কেন, ফোডেন, সাকাকে একসঙ্গে তুলে নেন তিনি। কিন্তু তরতাজা ফুটবলার নামিয়েও ছবিটা বদলায়নি। অন্য দিকে ডেনমার্ক চেষ্টা করছিল বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়ে পিকফোর্ডকে চমকে দিতে। তবে আর কোনও সাফল্য পায়নি তারাও। শেষ পর্যন্ত ১–১ গোলে ড্র হয়ে যায় ম্যাচ।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।