মণিপুরের ফুটবল ম্যাচের একটি ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আসলে ফুটবল ম্যাচে খেলোয়াড়দের অস্ত্র হাতে মাঠে দেখা যায়। এর পরেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আসলে একজন ব্যক্তি ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রঙের ফুটবল জার্সি পরে ক্যামেরার দিকে হেঁটে আসছিলেন। হাঁটু পর্যন্ত উঁচু মোজা ও রানিং শর্টস পরে তিনি যেন ধুলোমাখা মাটিতে ফুটবল ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে এই 'ফুটবল খেলোয়াড়' দুটি স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বহন করছিলেন—একটি তার ডান কাঁধে ঝোলানো ছিল, অন্যটি হাতে ধরা ছিল। তিনি বন্দুক উঁচিয়ে হেসে উঠলেন।
এই 'ফুটবল ম্যাচ ওয়ার্মআপ' ভিডিয়োটি প্রথমে মণিপুরের কাংপোকপি জেলার এক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে দেখা যায়। এখন এটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ভিডিয়োতে দেখা গেছে, এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তি ফুটবল কিট পরে একে ও আমেরিকান এম সিরিজ অ্যাসল্ট রাইফেল বহন করে ফুটবল খেলছেন। বন্দুকগুলোর ব্যারেলের চারপাশে লাল ফিতা বাঁধা ছিল।
ভিডিয়োতে দেখা একটি ইভেন্টের পোস্টারে লেখা ছিল স্থানটি ‘(L) নোহজাং কিপগেন মেমোরিয়াল প্লেগ্রাউন্ড, কে গামনমফাই।’ স্থানীয়রা 'গামনমফাই' নামে পরিচিত একটি গ্রাম মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় অবস্থিত, যা রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফুটবল জার্সির সামনে লেখা ছিল ‘সানাখাং’, এবং একে রাইফেল বহনকারী একজন ব্যক্তির জার্সির পিছনে লেখা ছিল ‘গিন্না কিপগেন।’ তার জার্সি নম্বর ছিল ১৫।
দেখুন সেই ভিডিয়ো-
আরও পড়ুন … SL vs AUS 2nd Test: ৩৬তম শতরান করে দ্রাবিড়কে ছুঁলেন স্মিথ, অজি অধিনায়ক কোহলির রেকর্ডের কাছে পৌঁছালেন
ভিডিয়োতে থাকা ইভেন্টের পোস্টারের লেখা অনুযায়ী, ফুটবল ম্যাচটি ২০ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার নাম্পি রোমিও হানসঙ ইনস্টাগ্রাম থেকে এই ভিডিয়োটি মুছে ফেলেন, যার ওয়াটারমার্ক ছিল 'কুকিল্যান্ড' এবং তার নিজের নামে একটি হ্যাশট্যাগ ছিল। পরে তিনি ইনস্টাগ্রামে শুধুমাত্র ফুটবল ম্যাচের একটি ছোট ভিডিয়ো পোস্ট করেন, যেখানে বন্দুকধারী ব্যক্তিদের দৃশ্য ছিল না।
তার ইউটিউব চ্যানেলে, যেখানে ১.০৯ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, তিনি প্রায় ছয় মিনিটের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন। এতে প্রথম তিন সেকেন্ডে আগের মুছে ফেলা ভিডিয়োর বন্দুকধারীদের দৃশ্য ছিল। তবে পরে এটি সম্পাদনা করে বন্দুকধারীদের দৃশ্য সরিয়ে ফেলা হয়। এরপরে সোশ্যাল মিডিয়াতে মূল ভিডিওর একটি অনুলিপি পাওয়া যায়।
বাকি ভিডিয়োতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ফুটবল ম্যাচের দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তবে ভিডিয়োর শেষে দেখা যায়, গাঢ় সবুজ সামরিক পোশাক পরা সশস্ত্র ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানস্থলে নাচছেন। তাদের হেলমেট ও কাঁধের ব্যাজে লাল লোগো ছিল, যা সাধারণত কুকি ন্যাশনাল ফ্রন্ট (P) বা KNF-P-এর মিলিশিয়াদের পরতে দেখা যায়। কাংপোকপি এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা।
আরও পড়ুন … Record breaking viewership: জিওস্টার নেটওয়ার্কে দর্শকসংখ্যায় রেকর্ড গড়ল বর্ডার-গাভাসকর ২০২৪-২৫ ট্রফি
তদন্তের দাবি
মৈতৈ সম্প্রদায়ের একটি নাগরিক সংগঠন ‘এক্স’ (আগের টুইটার)-এ পোস্ট করে কর্তৃপক্ষকে এই খোলামেলা অস্ত্র প্রদর্শনের তদন্ত করতে বলেছে। মৈতৈ হেরিটেজ সোসাইটি লিখেছে, ‘মণিপুরের একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যা গভীরভাবে উদ্বেগজনক তা হল তথাকথিত ফুটবলারদের দ্বারা অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রকাশ্য প্রদর্শন। নাকি এটি কুকি বিদ্রোহীদের ফুটবল টুর্নামেন্ট? আমরা কর্তৃপক্ষকে এই অস্ত্র প্রদর্শনের তদন্ত করার আহ্বান জানাই।’
KNF-P-এর 'P' মানে 'প্রেসিডেন্ট'—এটি বোঝায় যে KNF-P মূল KNF, তাই এটি 'প্রেসিডেন্ট' হিসেবে পরিচিত। KNF ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে এটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—SK কিপগেনের নেতৃত্বে KNF-MC এবং ST থাংবই কিপগেনের নেতৃত্বে KNF-P। KNF একটি বিতর্কিত 'সাসপেনশন অব অপারেশনস' (SoO) চুক্তির স্বাক্ষরকারী, যা প্রায় দুই ডজন কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
SoO-এর শর্ত অনুযায়ী, বিদ্রোহীদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে থাকতে হবে এবং তাদের অস্ত্র সংরক্ষিত তালাবদ্ধ স্থানে রাখতে হবে। মণিপুর সরকার দীর্ঘদিন ধরে যৌথ পর্যবেক্ষণ কমিটিকে (JMG), যা প্রতি বছর SoO চুক্তি পর্যালোচনা করে, চুক্তিটি সম্পূর্ণ বাতিল করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। সরকারের অভিযোগ, SoO-ভুক্ত গোষ্ঠীগুলো মণিপুরের সহিংসতায় শুরু থেকেই জড়িত। SoO চুক্তির মেয়াদ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে।
আরও পড়ুন … U-13 MLS Cup: ১২ গোলে জিতল ইন্টার মায়ামি, মেসির ছেলে থিয়াগো একাই করলেন ১১ গোল
মণিপুরের অস্ত্র সংকট
২০২৩ সালে, যখন মণিপুরের সহিংসতা শুরু হয়, তখন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত তরুণদের উভয় সম্প্রদায়ের পক্ষেই প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা গেছে। এ সংক্রান্ত শত শত ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। মৈতৈ মিলিশিয়া 'আরামবাই টেংগোল' সদস্যদের সামরিক-গ্রেডের গ্রেনেড লঞ্চার ও একে-৪৭ হাতে পাহাড়ের পাদদেশে 'টহল' দিতে দেখা গেছে, অন্যদিকে কুকি পক্ষের লোকেরা পাহাড়ের ওপর বাঙ্কারে একই ধরনের অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে।
উভয় পক্ষই নিজেদের 'গ্রামভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক' বলে দাবি করেন। নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তারাও যখন 'গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক' শব্দটি ব্যবহার করছেন, তখন অনেকেই মনে করছেন, অস্ত্রধারীরা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে গ্রহণ করছে। অনেক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, উভয় পক্ষের বিদ্রোহীরা মণিপুরের সহিংসতায় জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে কুকি বিদ্রোহীদের দ্বারা SoO চুক্তির লঙ্ঘন, এবং মৈতৈ বিদ্রোহীদের প্রত্যাবর্তন, যারা গত ১০ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং মিয়ানমারের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে ফিরে এসেছে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।