কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তখন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ক্রোট শিবির। তারা ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার অপেক্ষা করছিল। উচ্ছ্বাসে টগবগ করে ফুটছিল। রেফারি বাঁশি বাজালেই শেষ ষোলোয় ওঠার সেলিব্রেশনে মাতবে তারা। গ্যালারিতে ক্রোট সমর্থকদের শব্দব্রহ্ম তখন সপ্তমে। কিন্তু সেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে চোখের জলে পরিণত হয় ক্রোয়েশিয়ার। তবে একেবারেই আনন্দাশ্রু নয়। বরং ইউরো কাপ ২০২৪ থেকে ছিটকে যাওয়ার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে ক্রোটরা।
ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তের খেলা চলছিল তখন। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইম শেষ হবে হবে করছে। ক্রোয়েশিয়া ১-০ এগিয়ে। সেই সময়ে তাদের একটাই কাজ ছিল, বলের দখল নিজেদের পায়ে রাখা। কিন্তু সেটা হল কোথায়! মাঝমাঠে বিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নেন কালাফিয়োরি। বাঁ-দিকে দাঁড়িয়ে থাকে মাতিয়া জাকাগনিকে বল বাড়ান। বক্সের একেবারে মাথা থেকে ডান পায়ের দূরপাল্লার শটে নিখুঁত প্লেসিং জাকাগনির। গোল বাঁচানোর কোনও সুযোগ ছিল না লিভাকোভিচের। ১-০ থেকে ১-১ ড্র। ছিটকে যেতে যেতেও ইতালি চলে গেল ইউরোর পরের পর্বে। ছিটকে গেল ক্রোয়েশিয়া। আর ক্রোটদের এই হারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, লুকা মদ্রিচ। পেনাল্টি মিস করে তিনি খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন। তবে পরে গোল করে দলকে এগিয়েও দিয়েছিলেন মদ্রিচ। এই গোল ধরে রেখে ক্রোয়েশিয়া যদি পরের পর্বে উঠত, তবে নায়ক হয়ে যেতেন লুকা মদ্রিচ। কিন্তু ম্যাচ ড্র হওয়ায় ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে থাকতে হল তাঁকে। অনেকেই পেনাল্টি মিসের জন্য তাঁকে ম্যাচের পর খলনায়কেরও তকমা দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: জামাইকার বিরুদ্ধে কষ্টসাধ্য জয় দিয়ে অভিযান শুরু মেক্সিকোর, ১০ জনের ইকুয়েডরকে হারাল ভেনিজুয়েলা
এদিন ইউরোর গ্রুপ-বি-র লড়াইয়ে অঙ্কটা সোজা ছিল। স্পেন আগেই শেষ ষোলোয় পৌঁছে গিয়েছিল। যদিও তারা তাদের গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচেও ১-০ আলবিনিয়াকে হারিয়ে পুরো ৯ পয়েন্ট নিয়েই পরের রাউন্ডে গিয়েছে। আর স্পেন জেতায়, ইতালির ক্ষেত্রে ম্যাচ ড্র করলেই নকআউটের ছাড়পত্র পেত। তবে ক্রোয়েশিয়াকে জিততেই হত। এই পরিস্থিতিতে খেলতে নেমে শুরু থেকে ইতালির খেলায় কিছুটা গা-ছাড়া ভাব দেখা গিয়েছিল। আগের ম্যাচে স্পেনের কাছে বিশ্রি হারের ধাক্কা তারা যেন কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে মনে হচ্ছিল। ক্রোয়েশিয়া শুরুতে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলছিল। কিন্তু ম্যাচ যত গড়াচ্ছিল, ততই রক্ষণকে মজবুত রেখেই, তারা ধীরে ধীরে খেলার রাশ নিজেদের হাতে নিচ্ছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, ইতালিকে গোল করতে না দেওয়া। কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে গোল করা।
যেটা কার্যকরী করতে সফলও হয় ক্রোয়েশিয়া। তবে এর মাঝেই ইতালি ভালো সুযোগ পেয়েছিল। কর্নার থেকে বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়েছিলেন নিকোলো বারেল্লা। তিনি ক্রস তুলেছিলেন। ফাঁকা দাঁড়িয়েছিলেন আলেজান্দ্রো বাস্তোনি। তাঁর জোরালো হেড বাঁচিয়ে দেন ক্রোট গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ। পাল্টা বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ক্রোয়েশিয়ার লুকা সুচিচের শট আটকে দেন জিয়ানলুইগি ডোনারুম্মা। তবে দুই দলের স্ট্র্যাটেজির কারণেই প্রথমার্ধে নির্বিষ ফুটবল খেলা হয়। বিরতিতে তাই ফল ছিল গোলশূন্যই।
আরও পড়ুন: টিয়েলেম্যানস, ব্রুইনের গোলে রোমানিয়াকে হারিয়ে জয়ে ফিরল বেলজিয়াম, জমে ক্ষীর ইউরোর গ্রুপ ‘ই’র লড়াই
দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়া কিছুটা আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায়। এমন কী ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে পেনাল্টিও পেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। বাঁ দিক থেকে আন্দ্রেই ক্রামারিচের ক্রস বক্সের মধ্যে ডেভিড ফ্রাত্তেসির হাতে লেগে দিক পরিবর্তন করে। রেফারি প্রথমে পেনাল্টি না দিলেও ‘ভার’-এর সাহায্যে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলান। তবে পেনাল্টি থেকে গোল মিস করতে ব্যর্থ হন লুকা মদ্রিচ। শটে একেই জোর ছিল না, নীচু শট বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সহজেই রুখে দেন ডোনারুম্মা। ক্রোট ভক্তরা তীব্র হতাশায় ডুবে যান। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিজের ভুল শুধরে দলকে ১-০ এগিয়ে দেন লুকা মদ্রিচই। ডান দিক থেকে ভেসে আসা ক্রসে আন্তে বুদিমিরের প্রচেষ্টা ডোনারুম্মা রুখে দিতে গিয়ে মাটিতে পড়ে য়ান। কিন্তু তিনি উঠে দাঁড়ানোর আগেই সেই বল ধরে মদ্রিচ বাঁ পায়ের শটে জালে বল জড়ান।
এর পরে ইতালি গোলশোধের চেষ্টা চালিয়েও মুখ খুলতে পারেনি। তবে ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার ঠিক আগের মুহূর্তে কালাফিয়োরির পাস ফাঁকায় পেয়েছিলেন মাতিয়া জাকাগনিকে। নিখুঁত প্লেসিংয়ে তিনি বল জালে জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নভঙ্গ হয় ক্রোয়েশিয়ার। কান্নায় ভেঙে পড়ে ক্রোট শিবির। প্রসঙ্গত, আলবিনিয়ার সঙ্গে ম্যাচ ড্র করাটাই ক্রোয়েশিয়ার কাছে বড় ধাক্কা প্রমাণিত হল।
আরও পড়ুন: রোনাল্ডোর স্বার্থত্যাগ, পর্তুগালের আগ্রাসী ফুটবল, তুরস্ককে হারিয়ে শেষ ষোলোয় পেপেরা
স্পেনের জয়
গ্রুপ লিগের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলেছিল স্পেন।যে কারণে এদিন আয়মেরিক লাপোর্তে ছাড়া একাদশের বাকি দশ জনকেই বদলে দেন স্পেনের কোচ লুই দে লা ফুয়েন্তে। যে কারণে শুরু থেকে একটু নড়বড় করছিল স্পেন। আলবিনিয়া যদি এদিন স্পেনকে হারাতে পারত, তবে তবে তাদের সামনেও নকআউটে যাওয়ার সুযোগ থাকত। সেভাবেই আগ্রাসী মেজাজে শুরুটা করেছিল তারা। তবে ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খেলার দখল ধীরেধীরে নিয়ে নেয় স্পেন। স্পেন এগিয়ে যায় ম্যাচের ১৪ মিনিটে। দানি ওলমো সামনে অনেকটা জায়গা পেয়ে দৌড়তে থাকেন এবং ক্রস দেন ফেরান তোরেসকে। এতটাই নিখুঁত ছিল সেই পাস যে তোরেস ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে সেই বল জালে জড়ান। এর পর আলবেনিয়াকে প্রথমার্ধে সুযোগই দেয়নি তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও আলবেনিয়া সেভাবে সুযোগ পায়নি। মাঝেমধ্যে বল পেয়ে আলবেনিয়া কাউন্টার অ্যাটাকে উঠলেও, তা কার্যকরী হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে জিতে মাঠে ছাড়ে স্পেন।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।