বিসিসিআই থেকে চক্রান্ত করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমন দাবি করে একদিকে মহারাজের পাশে দাঁড়ান বিশ্বরূপ দে। আবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে সৌরভের বিদায়ে কাটছাঁট প্রতিক্রিয়াও দেন তিনি। প্রাক্তন সিএবি কর্তার দাবি, নেতা ধরে ক্ষমতায় এলে এভাবে গদিচ্যুত হওয়াই ভবিতব্য।
বোর্ড সভাপতির পদে যে সৌরভের থাকা হচ্ছে না, সেই গুঞ্জন বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতীয় ক্রিকেটমহলে শোনা যাচ্ছিল। শেষে মঙ্গলবার রজার বিনি বিসিসিআই সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে রাজীব শুক্লা কার্যত সৌরভের অপসারণের খবরে সিলমোহর দিয়ে দেন। তার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা প্রতিক্রিয়া দেন বিশ্বরূপ দে, যিনি এই মুহূর্তে রাজ্যের শাসকদলের একজন কাউন্সিলর।
দীর্ঘদিন বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে থাকা বিশ্বরূপ দে এক্ষেত্রে একজন বাঙালি হিসেবে আর একজন বাঙালির ক্ষমতা হারানোর ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তার পরেই তিনি দাবি করেন যে, সৌরভ একদা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়ে ঘুরপথে সিএবির ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং পরে বিজেপিকে ব্যবহার করে বিসিসিআইয়ের মসনদে বসেন। তাই এমন পরিণতি অপেক্ষা করে ছিল তাঁর জন্য।
আরও পড়ুন:- ICC Ranking: রিজওয়ানকে টপকাতে না পারলেও বিশ্বব়্যাঙ্কিংয়ে সূর্যকুমারই ভারতের এক নম্বর
ফেসবুকে বিশ্বরূপ দে লেখেন, ‘অনেকেই জানতে চাইছেন, সৌরভ আর বোর্ড প্রেসিডেন্ট না থাকায় আমি খুশি নাকি অখুশি? আমার উত্তর খুব সহজ। বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বিচারে আমি অখুশি। কারণ বাংলার কোনও প্রতিনিধি যখন প্রশাসন বা অন্য কোনও ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে আসেন, বা তাঁকে যখন সরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা একজন প্রকৃত বাঙালির কাছে সুখকর হতে পারে না। একজন বাঙালি হিসেবে যেভাবে চক্রান্ত করে বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সৌরভকে সরিয়ে দেওয়া হল, তার নিন্দা করি আমি। একই সঙ্গে বলব, আমি অসম্ভব ব্যথিতও।’
পরক্ষণেই তিনি দাবি করেন যে, এমনটা একদিন হওয়ারই ছিল। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি যোগ করেন, ‘এটা তো হওয়ারই ছিল। কারণ, বছর তিনেক আগে বিজেপির হাত ধরে, (পড়তে হবে অমিত শাহ-র হাত ধরে) ব্রিজেশ প্যাটেলকে হঠিয়ে রাতারাতি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। অথচ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ব্রিজেশের বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রিজেশের বদলে সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করা হয় শুধুমাত্র ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। ঠিক একইরকমভাবে আমার গুরু শ্রদ্ধেয় জগমোহন ডালমিয়ার আকস্মিক প্রয়াণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নবান্নে গিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সৌরভ। সিএবি নির্বাচন এড়িয়ে এভাবে ঘুরপথে তখন সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া সৌরভের মতো ব্যক্তিত্বের পক্ষে খুব মাননসই ছিল কি?’
বিশ্বরূপ দে কার্যত অভিযোগ তোলেন যে, সময় সময়ে সৌরভ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। তিনি লেখেন, ‘অতীতে বাম আমলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অশোক ভট্টাচার্যের কতটা কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন, সেটা সকলেরই জানা। আসলে কোনও বাঙালি নতজানু হয়ে কোনও পদে আসীন হলে, সেটা সমগ্র বাঙালি জাতির কাছেই প্রবল লজ্জার হয়। সৌরভ যদি নিজের প্রশাসনিক যোগ্যতায় (ক্রিকেটার হিসেবে যাঁর যোগ্যতা তর্কাতীতভাবে প্রণিধানযোগ্য) বিসিসিআই ও সিএবি প্রেসিডেন্ট হতেন, আজ এভাবে তাঁর অপসারণ ঘটত না বোর্ড থেকে। আসলে রাজনীতিবিদদের হাত ধরে ঘুরপথে ক্ষমতায় আসলে পরিণতি এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।’
অবশ্য সৌরভকে ভবিষ্যতে আইসিসি চেয়ারম্যান পদে দেখতে চাইছেন বিশ্বরূপ দে। তিনি এও জানিয়েছেন যে, ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থে তিনি সর্বদা সৌরভের পাশে রয়েছেন এবং তাঁকে সমর্থন করবেন। সঙ্গে মহারাজকে একটা পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। বিশ্বরূপ দে চান, ভবিষ্যতে আইসিসি চেয়ারম্যান হলে সৌরভ যেন অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপন না করেন।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।