মহমেডান মাঠে ডার্বি। আর সেই ডার্বিকে ঘিরে উত্তাল হল ময়দান। ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি থেকে শুরু করে তুমুল উত্তেজনা, হস্তক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে- রবিবাসরীয় দুপুরে একদম গনগনে আগুন জ্বলল ডার্বি ঘিরে। রণক্ষেত্র হল মহামেডান মাঠ।
তাও ফুটবল নয়। এমন কী ক্রিকেটও নয়। হকি ডার্বিকে ঘিরেও একই কাণ্ড। রবিবার দুপুরে মহমেডান মাঠে কলকাতা হকি লিগে মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হয়েছিল। তাও কিনা ২২ বছর পর। দীর্ঘ কাল বাদে হকি দল করেছে বাগান। এমন কী কলকাতা লিগে তারা অংশও নিয়েছে। এই ম্যাচকে ঘিরে তাই উত্তেজনা ছিল চরমে। এমন কী বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়ে এই হকি ম্যাচের প্রচার করেছিল হকি বেঙ্গল। আর সেই নির্বিষ ম্যাচ ঘিরেই ধুন্ধুমার বেধে গেল ময়দানে।
ম্যাচ দেখতে মহমেডান ম্যাচে হাজির হয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের কর্তারা। ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকার এবং মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত মাঠে ছিলেন। সূত্রের খবর, মোহনবাগান গ্যালারি থেকে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের উদ্দেশে কটূক্তি করা হয়। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা তা মেনে নেননি। পাল্টা তাঁরাও জবাব দেন। সেই নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত। মোহনবাগান গ্যালারি থেকে মাঠে ইট-পাটকেল পড়েছে বলেও অভিযোগ।
আরও পড়ুন: প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ, বিশ্বকাপের পরেই সরে দাঁড়ালেন ভারতীয় হকি দলের হেড কোচ গ্রাহাম রিড
আর এক পক্ষের অভিযোগ, ম্য়াচে মোহনবাগান যখন ১-০ এগিয়ে, তখন ঝামেলা বাধে। মোহনবাগান গ্য়ালারির সামনেই দুই-দলের কর্তারা বসেছিলেন। গ্য়ালারি থেকে অনবরত কটূক্তি ভেসে আসে। ইস্টবেঙ্গল গ্য়ালারি উল্টোপ্রান্তে। কর্তাদের মধ্য়ে অনেক মহিলাও ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে কটূক্তি ভেসে আসায় অফিসিয়ালরা মোহনবাগান গ্যালারিতে চেয়ার ছোঁড়েন। তার পরেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মহমেডান মাঠ।
অনেকেই আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে মাউন্টেন পুলিশ। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ ঘিরে এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। তবে মাঠে পর্যাপ্ত পুলিশের অভাব চিল বলে দাবি সকলের। বাংলা হকি সংস্থার সভাপতি স্বপন ব্য়ানার্জি বলেন, ‘ময়দান থানা এবং লালবাজারকে জানিয়ে রেখেছিলাম। তার পরেও পর্যাপ্ত পুলিশের ব্য়বস্থা কেন হল না, বলতে পারব না।’ আরও জানান, সমর্থকদের আবেগটাও বুঝতে হবে দু-দলের কর্তাদের।
আরও পড়ুন: দিনমজুরি করা প্রাক্তন হকি খেলায়াড়ের পাশে দাঁড়ালেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী
ভারতীয় হকির কিংবদন্তি গুরবক্স সিং বলেন, ‘আমাদের সময়ে হকি ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনা বহু দেখেছি। তবে দর্শকরা উঠে এসে ঢিল ছুড়ছে। এখান থেকে চেয়ার ছুড়ছে। এ রকম কোনও দিন দেখিনি। সামান্য় উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হলেও, আমরা আবেদন করলে তা থেমেও যেত। আজকের পরিস্থিতি খেলোয়াড় জীবনে দেখিনি। পুলিশি নিরাপত্তা আরও প্রয়োজন ছিল।’
এই ঘটনার জেরে দেড় ঘন্টার বেশি খেলা বন্ধ থাকে। এর পর গ্যালারি ফাঁকা করে ম্যাচ শুরুর চেষ্টা হয়। দু'-দলের ৬ জন অফিসিয়াল থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। তাঁর বক্তব্য, ‘যেখানে আমাদের সমর্থকরা খেলা দেখতে পারছে না, আমিও খেলা দেখতে চাই না। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে কটূক্তি হওয়াটা নতুন নয়। কিন্তু ওদের মানসিকতাই হল না খেলার। তার জন্যই মাঠের মাঝখানে এসে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি তো ভাবছি, ২৫ তারিখও হয়তো ওরা গ্য়ালারি ফাঁকা রেখেই খেলাবে।’ গ্যালারি ফাঁকা করেও অবশ্য ম্যাচ শুরু করা যায়নি। পর্যাপ্ত আলোর অভাবে ইস্টবেঙ্গল -মোহনবাগান হকি ডার্বি স্থগিত হয়ে যায়। এই ম্যাচটি পরবর্তীতে হওয়ার কথা এবং যেই স্কোরলাইনে ম্যাচ স্থগতি হয়েছিল, সেখান থেকেই শুরুর কথা।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।