২০১৫ সালে দিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের চতুর্থ এবং শেষ টেস্টে দিল্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়ার ৩৩৭ রানের বিশাল জয় পেয়েছিলেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দুরন্ত বোলিং, অজিঙ্কা রাহানের মাস্টারক্লাস ব্যাটিংয়ের হাত ধরে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছিল টিম ইন্ডিয়া। দিল্লির ঘরের ছেলে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে এই জয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল ক্রিকেট প্রেমীরা।
২০২৩ সালের বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে ভারত যে ভাবে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে, সে ভাবেই কোহলিরা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে বড় জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। কোটলায় রোমাঞ্চকর টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং আইকন এবি ডি'ভিলিয়ার্স এবং হাসিম আমলা কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করলেও, বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেননি।
প্রাক্তন ভারতীয় ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর দাবি করেছেন, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে দিল্লি টেস্টের সময়ে তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন শিক্ষা পেয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁর প্রকাশিত বই ‘কোচিং বিয়ন্ড: মাই ডেজ উইথ দ্য ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিম’-এ টিম ইন্ডিয়ার বিভিন্ন পুরনো ঘটনা তুলে ধরেছেন। প্রাক্তন ভারতীয় ফিল্ডিং কোচ জানিয়েছেন, তিনি ২০১৫ সালে দিল্লিতে টেস্ট ম্যাচের পরে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন।
শ্রীধর লিখেছেন, ‘ভারতীয় দলের সঙ্গে আমার কর্মজীবনের শুরুতে আমি যুক্তিসঙ্গত ভাবে কিছু কঠোর শিক্ষা পেয়েছি। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ টেস্টে কোটলায় দুরন্ত জয় এসেছিল। আমরা তখন ২-০ ব্যবধানে জিতে লিড উপভোগ করছি। তবে পঞ্চম দিনে চা বিরতিতে মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা হয়তো আমাদের টানা তৃতীয় জয়ে বাধা দিতে পারে। খেলে মনে হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের টানা তৃতীয় জয়ে বাধা দিতে পারে। এবি হাল ধরে রেখেছিল এবং হাশিম আমলা ও ফ্যাফ ডু'প্লেসিকে পাশে পেয়েছিল। ফাইনাল বিরতিতে তাদের ৫ উইকেট পড়েছিল। আমরা ডিসেম্বরের বিকেলে একটি চূড়ান্ত ধাক্কা দিতে বধ্যপরিকর ছিলাম, এবং আশা ছিল যে যদি জিততে পারি।’
আরও পড়ুন: ইন্দোর টেস্টের আগে স্ত্রী আথিয়ার সঙ্গে মহাকালের দর্শন করে পুজো দিলেন কেএল রাহুল
শ্রীধর যোগ করেছেন, ‘চায়ের সময়, আমরা দ্রুত একটি আলোচনায় রিভার্স সুইং নিয়ে কথা বলি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, অশ্বিনের পাশাপাশি উমেশ যাদবও আঘাত হানবে। আমরা উমেশকে বলেছিলাম, ওর বোলিং হাতটা একটু নামাতে এবং ওর কান থেকে কিছুটা দূরে ডেলিভারি দিতে, যা ওকে রিভার্স খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা ভারতের বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে তাঁদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৪ বলে ২৫ রানের ধৈর্য্যশীল নক খেলেছিলেন। প্রাক্তন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডি'ভিলিয়ার্স সেই সময়ে আমলাকে যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন। দিল্লিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় বোলারদের হতাশ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কিংবদন্তি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। তিনি তাঁর বিস্ফোরক ব্যাটিং শৈলীর জন্য পরিচিত। তবে ডি'ভিলিয়ার্স ৪৩ রানের ম্যারাথন নকও খেললেও, ২৯৭টি ডেলিভারির মুখোমুখি হন।
শ্রীধর লিখেছেন, ‘দলের সঙ্গে আলোচনা করার পর আমি কমন এড়িয়ায় গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ভিডিয়ো বিশ্লেষক এবং পুরানো বন্ধু প্রসন্ন আগোরামের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করি। আমি বাকি কাজের কথা সেই সময়ে ভুলেই গিয়েছিলাম। সাধারণত নতুন সেশন শুরুর আগে প্লেয়াররা যদি কেউ ওয়ার্ম আপ ডেলিভারি করে, সে কারণে আমি সাধারণত ক্যাচিং স্টেশন তৈরি করতাম। এই সময়ে আমি সেই সব ভুলে গিয়েছিলাম। তখন হঠাৎ আমি শুনতে পেলাম, কেউ শ্রী ভাই, শ্রী ভাই বলে ডাকছে।’
আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য! দুর্ধর্ষ অনুমান ক্ষমতায় অসাধারণ ক্যাচ ইংল্যান্ড তারকার, হতবাক বিশ্ব - ভিডিয়ো
শ্রীধরের এই কাণ্ডে কোহলি স্বাভাবিক ভাবেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। প্রাক্তন ফিল্ডিং কোচ লিখেছেন, ‘আমি সেই আওয়াজ শুনে এক সেকেন্ডের জন্য হিম হয়ে গেলাম। আমি আমার ঘড়ির দিকে উঁকি দিলাম এবং আমি চাপে পড়ে যাই। আমি তখন বড় বড় পা ফেলে ছুট লাগালাম। কিন্তু যখন আমি মাঠে পৌঁছলাম, তখন আম্পায়াররা নেমে পড়েছেন। এবং ভারতীয় দলও তা অনুসরণ করছে। বিরাট পিছন ফিরে অবশেষে আমাকে দেখতে পায়। ওর মুখ নিরপেক্ষ ছিল, কিন্তু ও ওর হাত প্রশস্ত করে, কাঁধ ঝাঁকায়। ও কী বোঝাতে চেয়েছিল, সেটা বোঝার জন্য আপনাকে শারীরিক ভাষার বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই।’
প্রোটিয়ারা ১৪৩.১ ওভারে ১৪৩ রানে গুটিয়ে যায়। রবীন্দ্র জাদেজা আমলাকে ক্লিন বোল্ড করেন। এবং স্পিন জাদুকর অশ্বিন ডি'ভিলিয়ার্সের উইকেট নেন। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার পাঁচ উইকেট নিয়ে (৫/৬১) দিল্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৩৩৭ রানে জিততে ভারতকে সাহায্য করে। এবং টিম ইন্ডিয়া ৩-০ সিরিজও জিতে যায়।
তবে হতাশায় ডুবে থাকার কারণে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের সেলিব্রেশন করার মেজাজে ছিলেন না শ্রীধর। এমন কী এই ঘটনার পরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। শ্রীধর লিখেছেন, ‘চা-পরবর্তী সেশনটি খেলার একটি দুর্দান্ত অধ্যায় ছিল। উমেশ দুর্দান্ত ভাবে বোলিং করেছেন, (ঋদ্ধিমান) সাহা ডান দিকে লাফিয়ে একটি দুরন্ত ক্যাচ নিয়েছিলেন, অশ্বিন পিছিয়ে থাকা শর্ট লেগে এবি-র উইকেট পেয়েছিলেন এবং খেলাটি এক নিমেষে বদলে গিয়েছিল। তবে আমি আমার দায়িত্বে ব্যর্থ হয়েছি, এটা ভেবে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এটা সিরিজের শেষ সেশন ছিল, এবং আমি বল থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম। ক্যাপ্টেন যখন হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকালেন, আমার মনে প্রথম ভাবনাটি এসেছিল যে, আমাকে ভারতীয় দল থেকে সরে যেতে হবে, চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।