আক্রমণাত্মক মানসিকতা, আক্রমণাত্মক মানসিকতা, আক্রমণাত্মক মানসিকতা - যেদিন থেকে ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হয়েছেন, তবে সেই শব্দটা ব্যবহার করার কোনও সুযোগ ছাড়েননি রোহিত শর্মা। অথচ আসল সময় রোহিতের মধ্যে ছিঁটেফোঁটা আক্রমণাত্মক মানসিকতা ধরা পড়ল না।
বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে শুরু করেছিলেন রোহিত এবং কেএল রাহুল। কিন্তু দ্বিতীয় বল থেকে রাহুলদের মধ্যে ছিঁটেফোটা আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখা যায়নি। রাহুল পাঁচ বলে পাঁচ রান করেন। ২৮ বলে ২৭ রান করেন রোহিত। বিরাট কোহলিও তেমন ছন্দ পাচ্ছিলেন না। তার ফলে পাওয়ার প্লে'তে এক উইকেটে মাত্র ৩৮ রান তোলে ভারত।
সেখানেই ভারত ম্যাচটা হেরে যায়। দারুণ ব্যাটিং উইকেটে যদি ছয় ওভারে ৩৮ রান ওঠে (এবার সুপার ১২ পর্যায়ে পাওয়ার প্লে'তে ভারতের রানরেট ছয়, যা জিম্বাবোয়ে ও নেদারল্যান্ডসের থেকে বেশি), সেখান থেকে ম্যাচ জেতার আশা কার্যত ছেড়ে দিতেই হয়। তবুও রোহিতদের সামনে ভুল শোধরানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটাও করতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক। ৮.৫ ওভারে যখন আউট হন, তখন একাই অর্ধেকের বেশি বল খেলে ফেলেছিলেন। দলের রানের অর্ধেকেরও কম করেছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে প্রথম ওভারে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় দুই উইকেটে ৬২ রান।
আরও পড়ুন: India vs England- ভীতুর মতো খেলে ভরাডুবি, টপ অর্ডার ব্যাটিংকেই কাঠগড়ায় তুললেন প্রাক্তনীরা
সবমিলিয়ে ভারতের প্রথম তিন ব্যাটার মোট ৭৩ বল খেলেন। করেন ৮৩ রান। যেখানে ৭৩ বলে ইংল্যান্ডের স্কোর বিনা উইকেটে ১২৫ রান ছিল। শুধু তাই নয়, ভারত পাওয়ার প্লে'তে যে রানে পৌঁছেছিল, সেই রানটা ২০ বলেই তুলে ফেলে ইংল্যান্ড। ছয় ওভারের শেষে স্কোর ছিল ৬৩। যা ১০ ওভারে ঠেকে ৯৮ রান। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের আগেই ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল ভারত। বছরভর ‘ইনটেন্ট’, ‘প্রসেস’-র বুলি আওড়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খোলসের মুখে ঢুকে থাকেন রোহিতরা। অথচ যে ইংল্যান্ডের স্টাইল অনুসরণ করার চেষ্টা করছিলেন রোহিতরা, তাঁরা ‘লাইভ ক্লাস’ নিয়ে গেলেন।
ভারতীয়দের মধ্যে শুধুমাত্র হার্দিক পান্ডিয়া এবং সূর্যকুমার যাদবের খেলায় সেই আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখা গিয়েছিল। বাকিদের মধ্যে (বিরাটকে কিছুটা বাদ দিয়ে, ঋষভ পন্তের হাতে বেশি সময় ছিল) সেই আক্রমণাত্মক ভাবটাই দেখা গেল না। অথচ ইংল্যান্ডের ভয়ঙ্কর বোলারদের যে সামলাতে হয়েছে, সেরকম নয়। ক্রিস ওকস, স্যাম কারান, আদিল রশিদরা ভালো বল করলেও ‘আনপ্লেয়বল' বল কার্যত ছিল না। তাঁদের সামনে নিজেদের গুটিয়ে নেন রোহিত-বিরাটরা। এমনকী লিয়াম লিভিংস্টোনের মতো স্পিনারের বিরুদ্ধেও হাত খোলেননি। স্রেফ গুটিয়ে ছিলেন।
কিন্তু রোহিতরা লিভিংস্টোন বা আদিলকে টার্গেট করলেই চাপে পড়ে যেতেন ইংরেজ অধিনায়ক জস বাটলার। কারণ দলের সেরা বোলার মার্ক উড চোটের জন্য সেমিতে নামতে পারেননি। ফলে ঋষভ পন্তের কথা ভেবে আদিলকে আগে বল করিয়ে নেওয়া, মইন আলিকে ডানহাতি ভারতীয় ব্যাটারদের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করার ছক যেভাবে সাজিয়েছিলেন বাটলার, সেটা পুরো ঘেঁটে যেত। নতুন কিছু করতে হত। চাপে পড়ে কারান, ওকসদের আনতে হত।
কিন্তু মুখে ‘ইনটেন্ট’ আওড়ানো রোহিতরা কিছুই করলেন না। লিভিংস্টোনকে ভারতীয়রা এত সমীহ দিয়ে খেললেন ভারতীয়রা, যা দেখে ইংরেজ অল-রাউন্ডার আবেগতাড়িত হয়ে পড়তে পারেন। তিন ওভারে মাত্র ২১ রান দেন লিভিংস্টোন। এমনভাবে ব্যাট করেন যে বাটলারদের ‘প্যানিক’ বোতামই চাপতে দেননি রোহিতরা। ফলে যেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়ে এসেছিলেন বাটলার, সেটাই করে গেলেন। শুধু শেষ পাঁচ ওভারে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। সেটার মোকাবিলা ব্যাট হাতেই করেন বাটলার।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।