গুজরাট টাইটানসের জয়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে এ বারের আইপিএল। প্রথাগতভাবে সফল দলগুলির ব্যর্থতার, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, কার্যত হারিয়ে যাওয়া তারকাদের পুনরুত্থানের দেখা গিয়েছে এ বারের টুর্নামেন্টে। মরশুম শুরুর আগে মেগা নিলাম থাকায় অনেক তারকাদের ঠিকানা বদলও ঘটেছিল। তবে রিটেন করা তারকারা দলের ভরসার ঠিক কতটা মর্যাদা রাখতে পারলেন?
গুজরাট টাইটানস:-
এ মরশুমে নিজেদের আর্বিভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গুজরাট টাইটানস। বাকি আট দলের মতো নয়, একেবারে গোড়া থেকে দল সাজাতে হয়েছিল গুজরাটকে। তবে নিলামের আগে তারা তিন খেলোয়াড়কে দলে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সম্ভবত গুজরাটই একমাত্র দল যাদের নিলামের আগে নেওয়া খেলোয়াড়রা প্রত্য়েকেই সফল।
গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার পাশাপাশি রশিদ খান ও শুভমন গিলকে নিলামের আগে দলে নেয়। ৪৮৭ রান করে হার্দিক টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। বল হাতেও তিনি আট উইকেট নিয়েছেন। অপরদিকে, হার্দিকের পরেই ৪৮৩ রান করে শুভমন পঞ্চম সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। রশিদ খান বল হাতে ১৯ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে বেশ কয়েকটি ম্যাচ ফিনিশও করেন। সুতরাং, তাঁরা তিনজনেই সফল।
রাজস্থান রয়্যালস:-
ফাইনালিস্ট রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের পাশাপাশি জোস বাটলার ও যশস্বী জয়সওয়ালকে রিটেন করেছিল। বাটলার এ মরশুমের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক (৮৬৩ রান) তো বটেই, এমনকী আইপিএলে এক মরশুমে সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। সঞ্জু ৪৫৮ রান করেন, যা একদমই খারাপ নয়। ২৫৮ রান করা যশস্বীর থেকে হয়তো আরেকটু বেশি আশা করেছিল রাজস্থান।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর:-
আরসিবি বিরাট কোহলি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং মহম্মদ সিরাজকে রিটেন করেছিল। ম্যাক্সওয়েল বাদে বাকি দুই তারকার মরশুম সম্পর্কে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। ব্যাট হাতে ৩০১ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ছয়টি উইকেট নেন ম্যাক্সওয়েল। অজি তারকার পারফরম্যান্স দারুণ না হলেও, মন্দ নয়। সিরাজ ১০-র অধিক ইকোনমিতে মাত্র ৯ উইকেট নিয়েছেন। ২২.৭৩ গড়ে বিরাট কোহলির এ মরশুমে মোট সংগ্রহ ৩৪১ রান।
লখনউ সুপার জায়ান্টস:-
লখনউ প্রথম রিটেন করা খেলোয়াড় অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। ফের একবার এই মরশুমে ব্যাট হাতে অনবদ্য। ৫১-র অধিক গড়ে তিনি মোট ৬১৬ রান করেছেন। ১৯.৫০ গড়ে ১৫৬ রান ও চার উইকেট নেওয়া মার্কাস স্টইনিসের মরশুম হতাশাজনক। ১৩ উইকেট নেওয়া রবি বিষ্ণোইয়ের পারফরম্যান্সও আহামরি কিছু নয়।
দিল্লি ক্যাপিটালস:-
ক্যাপিটালস অধিনায়ক ঋষভ পন্ত ৩৪০ রান করেছেন, যা খারাপ নয়। ২৮৩ রান করা পৃথ্বী শ অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেননি। ৪৫.৫০ গড়ে ১৮২ রান করলেও বল হাতে মাত্র ছয় উইকেট নেওয়া অক্ষর প্যাটেলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। আনরিখ নরকিয়া তো হাতে গোনা মাত্র ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন। তাতে নয় উইকেট পেয়েছেন। সুতরাং, দিল্লির রিটেন করা কেউই আহামরি পারফর্ম করেননি।
পঞ্জাব কিংস:-
পঞ্জাব কেবলমাত্র মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং অর্শদীপ সিংকে ধরে রেখেছিল। মাত্র ১৯৬ রান করা মায়াঙ্র চূড়ান্ত ব্যর্থ হলেও, অর্শদীপ মাত্র ১০ নিলেও সকলকে প্রভাবিত করেছেন। এমনকী জাতীয় দলেও জায়গা পেয়ে গিয়েছেন।
কলকাতা নাইট রাইডার্স:-
কেকেআর যখন আন্দ্রে রাসেলকে রিটেন করে, তখন তাঁর ফিটনেস নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। ব্যাটে ৩৩৫ রান ও বল হাতে ১৭ উইকেট নিয়ে ‘মাসেল রাসেল’ সকলকে একেবারে চুপ করিয়ে দিয়েছেন। সুনীল নারিন মাত্র ৯ উইকেট পেলেও, তাঁর ইকোনমি ছয়ের কম। তবে হতাশ করেছেন দুই ভারতীয় বরুণ চক্রবর্তী ও বেঙ্কটেশ আইয়ার। ৮.৫-র অধিক ইকোনমিতে মাত্র ছয় উইকেট নেওয়া বেঙ্কটেশকে বিবর্ণ দেখিয়েছে। মাত্র ১৮২ রান করা বেঙ্কটেশও গত মরশুমের পুনরাবৃ্ত্তি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ:-
সানরাইজার্স তো বটেই এ মরশুমে গোটা আইপিএলের সেরা তরুণ পারফরমার হলেন ২২ উইকেট নেওয়া উমরান মালিক। তাঁকে রিটেন করে যে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কোনও ভুল করেনি, তা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন। তবে মাত্র দুই ম্যাচ খেলা আব্দুল সামাদ ও ২১৬ রান করা কেন উইলিয়ামসনকে রিটেন করলেও, নিজামের শহরের ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে তাঁরা ফুল ফোটাতে ব্যর্থ।
চেন্নাই সুপার কিংস:-
সিএসকের রিটেন করা প্রথম তারকা হলেন রবীন্দ্র জাদেজা। মাত্র ১১৬ রান ও পাঁচ উইকেট নেওয়া জাদেজার এ মরশুমটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। ২৪৪ রান ও আট উইকেট নেওয়া মইন আলির মরশুমটা মোটামুটি। গত বারের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহ রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের মরশুমটাও হতাশাজনক। তিনি ৩৬৮ রান করেছেন। ২৩২ রান করা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি কয়েকটি ভাল ম্যাচ খেলেছেন বটে। তবে সিংহভাগই ব্যর্থতা।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স:-
রোহিত শর্মা, কায়রন পোলার্ডের ব্যর্থতা মুম্বইয়ের হতাশাজনক মরশুমের বড় কারণ। রোহিত ২০-রও কম গড়ে ২৬৮ রান করেছেন। কায়রন পোলার্ড মাঝ মরশুমেই খারাপ পারফরম্যান্সের জেরে দল থেকে বাদ পড়েন। জসপ্রীত বুমরাহ ১৫ উইকেট নিলেও, তাঁর সিংহভাগ টুর্নামেন্টের একেবারে শেষের দিকে, মুম্বই প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার পর আসে। একমাত্র সূর্যকুমার যাদবকে তুখড় ফর্মে দেখায়। তিনি ১৪৫.৬৭-র স্ট্রাইক রেট ও ৪৩.২৯ গড়ে মোট ৩০৩ রান করেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত চোট আঘাতের জেরে তিনি আটটির বেশি ম্যাচ খেলতেই পারেননি।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।