নবীন-উল-হক, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কাবুলের একজন ডাক্তারের ছেলে, যিনি শরণার্থী হিসেবে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর এবং লখনউ সুপার জায়ান্টসের মধ্যে সোমবার রাতের ম্যাচের পর বিরাট কোহলি এবং গৌতম গম্ভীরের মধ্যে যে তীব্র ঝামেলা লেগেছিল, তার কেন্দ্রে ছিলেন নবীন-উল-হকই।
যখন নবীন ব্যাটিং করছিলেন, তখন তিনি মহম্মদ সিরাজ এবং কোহলির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন। সেই ঘটনার জেরে কোহলি পরে অমিত মিশ্রের সঙ্গেও কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। এর পরে ম্যাচ শেষ হলে হ্যান্ডশেকের সময়ে ফের নবীন এবং কোহলির মধ্যে অপ্রীতিকর ভাবে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে দেখা যায়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কিন্তু গম্ভীর এবং কোহলির মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, কোহলি এবং গম্ভীর একে অপরের দিকে তেড়ে তেড়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের থামানোই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এত কাণ্ডের মূলে কিন্তু নবীন-উল-হক।
আরও পড়ুন: আমার পরিবারকে গালি দিয়েছিস- কোহলি, গোতির ঝামেলা নিয়ে মুখ খুললেন প্রত্যক্ষদর্শী
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগেও মাঠে ঝামেলা করেছেন নবীন। এটা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। বিগ ব্যাশে ডার্সি শটের সঙ্গে মাঠে ধাক্কাধাক্কি করেছিলেন তিনি। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে থিসারা পেরেরার সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে তো পেসার মহম্মদ আমির আর পরে শহিদ আফ্রিদির সঙ্গেও ঝামেলা হয় তাঁর। সেই গন্ডগোলও অনেক দূর গড়িয়েছিল।
২০২০ সালের লঙ্কা প্রিমিয়র লিগের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ক্যান্ডি টাস্কার্স এবং গল গ্ল্যাডিয়েটর্সের মধ্যে। ম্যাচটি হেরে গিয়েছিল গল গ্ল্যাডিয়েটর্স। ম্যাচ চলাকালীন টাস্কার্সের নবীন ও গ্ল্যাডিয়েটর্সের মহম্মদ আমিরের তীব্র ঝামেলা হয়। আফগান পেসারের আচরণ সীমা ছাড়িয়েছিল সেই দিন। আমিরের উদ্দেশে কটূ কথা উগরে দিচ্ছিলেন। এমন আচরণ দেখে রেগে যান শহিদ আফ্রিদি।
আরও পড়ুন: কারও থেকে গালাগাল শোনার জন্য IPL খেলতে আসিনি- এখনও ফুঁসছেন নবীন
ম্যাচ শেষে দুই দলের মধ্যে করমর্দনে সময় আফ্রিদির সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান নবীন। আফ্রিদি রেগে ছিলেন নবীনের উপর। সেখানেই দু’জনের মধ্যে লেগে যায় ঝামেলা। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আফ্রিদি হয়তো বকা দিতে গিয়েছিলেন নবীন-উল-হককে। কিন্তু পালটা তর্ক করতে থাকেন নবীনও। প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের প্রতি নবীনের আচরণ দেখে ব্যথিত আফ্রিদি পরে টুইটও করেন।
ম্যাচের পর আফ্রিদি টুইটে লিখেছিলেন, ‘তরুণ খেলোয়াড়ের প্রতি আমার পরামর্শ ছিল সহজ, নিজের খেলা খেলুন এবং গালিগালাজ করবেন না। আফগানিস্তান দলে আমার বন্ধু রয়েছে এবং আমাদের খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সতীর্থ এবং প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা খেলার মূল বিষয়।’
পরে নবীন উত্তরে বলেছিলেন, ‘সব সময়েই উপদেশ নিতে এবং সম্মান দিতে প্রস্তুত। ক্রিকেট একটি ভদ্রলোকের খেলা কিন্তু কেউ যদি বলে যে, আপনারা সবাই আমাদের পায়ের নীচে আছেন এবং থাকবেন, তবে তিনি শুধু আমার কথাই বলছেন না, আমার দেশের মানুষের কথাও বলছেন।’
এক বছর পরে দ্য ক্রিকেটারে একটি সাক্ষাৎকারে নবীন সেই ঘটনার বর্ণনা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘এটা একটা মুহুর্তের ঘটনা। আমির ব্যাট করতে এসেছিল এবং ওরা ওই ম্যাচ হেরেছিল। আমার প্রথম ডেলিভারিতে ও খুব জোরে সুইং করেছিল, কিন্তু বল মিস করেছিল। আমি হেসে ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলান, ও কত বড় ছক্কা মারতে চায়– আমি রসিকতাই করেছিলাম। তবে ও সিরিয়াসলি বিষয়টি নিয়ে নেয়। আমি প্রথম বল থেকেই প্রতিযোগী মানসিকতা নিয়েই খেলি। কিন্তু ম্যাচের পর আমার মনে কারও জন্য কিছু থাকে না। ও একজন ভালো খেলোয়াড়, ভালো ক্রিকেটার।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।