ফের ব্যর্থ ডেভিড ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আরসিবি ম্যাচের পরে এবারও তীরে এসে তরী ডুবল তাদের। শনিবার টসে জিতে ব্যাট করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। মাত্র ১৫০ রানেই শেষ হয় রোহিতদের ইনিংস। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করেছিল হায়দরাবাদ। ১১.৩ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ওয়ার্নাররা তুলে নিয়েছিল ৯০ রান। অর্থাৎ ম্যাচ জিততে হলে বাকি ৮.৩ ওভারে সানরাইজার্সকে তুলতে হত ৬১ রান। ওভার প্রতি প্রায় ৭.৪ রান করলেই জয় নিশ্চিত ছিল। হাতে ছিল সাতটি উইকেট। সেখান থেকে ম্যাচ হেরে গেল সানরাইজার্স।
শুধু মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচ কেন, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স- কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচেও একই ছবি দেখা গিয়েছিল। সেখানেও প্রথম ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৫২ রান তুলেছিল মুম্বই। জবাবে ১৪২ রানেই শেষ হয়ে যায় কলকাতার ইনিংস। সেই ম্যাচেও একটা সময় রান তাড়া করতে নেমে এগিয়ে ছিল কলকাতা। ১৫ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ১২২ রান তুলেছিল কেকেআর। বাকি ৫ ওভারে ৩১ রান করেলই ম্যাচ জিতে যেত কলকাতা। ব্যাটিং লাইনে তখনও ছিলেন শাকিব আল হাসান, দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেলের মতো ক্রিকেটার। সেই ম্যাচও হারতে হয়েছিল নাইটদের।
তবে রান তাড়া করে এমনভাবে ম্যাচ হারার ঘটনা এবারের আইপিএল-এ আরও ঘটেছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ১৪৯ রান তাড়া করতে নেমে ১৪৩ রানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ইনিংস।
প্রশ্ন এখানেই, বারবার এমন ঘটনা ঘটছে কী করে? ম্যাচ রিডিং করলে এর উত্তর পাওয়া যায়। যেহেতু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে এমন ঘটনা দু’বার ঘটেছে তাই রোহিতদের দিয়েই ব্যাখাটা শুরু করা যাক। সঙ্গে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গোলেরের কথা বলা যাক যারা সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ৬ রানে হারিয়েছিল।
১) রোহিত শর্মার হার না মানা মানসিকতা। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত রোহিত ম্যাচের হাল ছাড়েন না। ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত কিছু না কিছু পরীক্ষা করে চলেন। ফলে সেখান থেকেই আসছে সাফল্য। ম্যাচের ১২ থেকে ১৬ ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে বাড়তি নজর দিচ্ছেন তিনি।
২) রোহিত শর্মার অসম্ভব ভালো গেম রিডিং। দীনেশ কার্তিককে কীভাবে আটকাবেন, আন্দ্রে রাসেলের সামনে পোলার্ডকে রেখে চাপ তৈরি করবেন, রাহুল চাহারকে কার বিরুদ্ধে বল করাবেন, ট্রেন্ট বোল্টকে কীভাবে ব্যবহার করবেন, সবকিছুই রয়েছে রোহিতের ভাবনায়। ম্যাচের মধ্যে খেলার গতিপ্রকৃতির সঙ্গে নিজের ভাবনাকে পাল্টাতে থাকেন রোহিত।
৩) মুম্বইয়ের দুরন্ত বোলিং লাইন আপ। প্রায় ছয় জন বোলারকে নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন রোহিত। বুমরাহ, বোল্ট, চাহার, পোলার্ড, ক্রুনাল পান্ডিয়ার মতো অভিজ্ঞ বোলাররাই মুম্বইকে হারা ম্যাচ জেতাচ্ছেন।
৪) সকলেই জানেন আরসিবির অধিনায়ক বিরাট কোহলি অধিনায়কত্বের বিচারে বাকি সকলের থেকে আলাদা। বিরাটের লড়াকু মানসিকতাই এবারের আইপিএল-এ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে আরসিবিকে জিততে সাহায্য করেছিল।
৫) দলের দুরন্ত বোলিং লাইন আপ। অধিনায়কের কাছে বোলিং-এর বেশ কিছু অপশন তৈরি করছে। ১১ থেকে ১৭ ওভার পর্যন্ত যেই বোলররা আসছেন তাঁরা উইকেট নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রানেও ব্রেক কষছেন।
৬) নতুন ব্যাটসম্যানরা যখন ক্রিজে আসছেন তখন প্রথম থেকেই চাপ তৈরি করা হচ্ছে। যা স্কোর বোর্ডে বোঝা যাচ্ছে।
এবার আসা যাক সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কেকেআর এর দিকে। যারা রান তাড়া করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ খোঁজা যাক।
১) ডেভিড ওয়ার্নার, জনি বেয়ারস্টো বাদে সানরাইরাজর্সের কোনও ব্যাটসম্যানের উপর ভরসা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। স্বদেশি ক্রিকেটার বলতে মনীশ পান্ডে, বিজয় শঙ্কর বাদে আর কেউ সেভাবে নজর কাড়ছেন না। জেসন হোল্ডার, রাশিদ খানের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে হায়দরাবাদের টিম ম্যানেজমেন্ট।
২) ম্যাচের ১০ থেকে ১৬ ওভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। ঐ ওভার গুলোতেই রানের গতি কমে যাচ্ছে।
৩) নতুন ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে এলে সেট হতে সময় নিচ্ছেন। তারমধ্যেই বিপক্ষের বোলাররা চাপ তৈরি করছেন এবং প্রয়োজনীয় রানের গড় বাড়িয়ে দিচ্ছেন। রানের চাপ হাল্কা করতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা চালিয়ে খেলতে যাচ্ছেন ও উইকেট হারাচ্ছেন।
৪) বিপক্ষের টিম ম্যানেজমেন্ট দলের ব্যাটসম্যানদের খামতি সম্পর্কে দারুণভাবে ওয়াকিবহাল। বিপক্ষ দল সম্পর্কে পড়াশুনা করে তবেই তাঁরা মাঠে নামছে। যেই ব্যাটসম্যান যেই বল বা বোলারকে খেলতে অক্ষম, সেই ব্যাটসম্যানের সামনে সেই বোলারকেই আনা হচ্ছে এবং সেই বলটাই করানো হচ্ছে, একবার নয় বারবার। এভাবে রানের গতিকে আটকানো হচ্ছে।
২০২১ আইপিএল-এ এখনও পর্যন্ত ৯টি ম্যাচ খেলা হয়েছে, যারমধ্যে ৫টি ম্যাচেই রান তাড়া করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে বিপক্ষ দল। আইপিএল-এ এমন ঘটনায় হতবাক ক্রিকেট মহল। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কী বদলাচ্ছে আইপিএল-এর খেলার গতি? সময় এখনও আছে, খেলা এখনও অনেক বাকি। তবে এটা বলা যায় যে এবারের আইপিএল-এ টসের থেকেও গেম রিডিং করাটাই সব থেকে বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে।