ISSF World Cup: পিস্তল হাতে বিশ্বকাপে সোনা জয়! মনু ভাকের যা করতে পারলেন না সেটাই করে দেখালেন ১৮ বছরের সুরুচি ফোগাট

ISSF World Cup in Buenos Aires: বুয়েনোস আইরেসে ISSF ওয়ার্ল্ড কাপে সকলের আস্থা পূরণ করলেন সুরুচি ফোগাট। তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে জিতলেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড কাপ সোনা। মনু ভাকেরও এই প্রতিযোগিতায় ছিলেন, কিন্তু তিনি আটজনের ফাইনালে উঠতে পারেননি।

Suruchi Phogat win Gold ISSF World Cup in Buenos Aires: এই ঘরোয়া মরশুমে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন সুরুচি ফোগাট। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই এই পিস্তল শ্যুটার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সিনিয়র, জুনিয়র এবং ইয়ুথ, তিনটি বিভাগেই একক সোনা জিতেছেন। এরপর জাতীয় গেমসেও সোনা জিতেছেন। ঠিক যেমনটা ২০১৭ সালে কেরালায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে করেছিল মনু ভাকের, যিনি বড় বড় নামদের হারিয়ে নিজের আগমন জানান দিয়েছিলেন। ফলে দ্বৈত অলিম্পিক পদকজয়ী মানুর সঙ্গে তাঁর তুলনা আসাটা খুব স্বাভাবিক ছিল।

বুয়েনোস আইরেসে ISSF ওয়ার্ল্ড কাপে যখন সুরুচি নিজের লক্ষ্যস্থির করলেন, তখন গোটা দেশের নজর ছিল তাঁর ওপর। মঙ্গলবার সেই আস্থা পূরণ করলেন সুরুচি ফোগাট। তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে জিতলেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড কাপ সোনা। মনু ভাকেরও প্রতিযোগিতায় ছিলেন, কিন্তু তিনি আট-জনের ফাইনালে উঠতে পারেননি, ১৩তম স্থানে শেষ করেন (৫৭৪ পয়েন্ট)। সুরুচি বাছাইপর্বে সকলের ওপরে ছিলেন (৫৮৩ পয়েন্ট)।

২৪-শটের ফাইনালে সুরুচি স্কোর করেন ২৪৪.৬ পয়েন্ট, দ্বিতীয় স্থানে থাকা চিনের কিয়ান ওয়ে (২৪১.৯) এবং টোকিও অলিম্পিক্স পদকজয়ী জিয়াং র্যানশিন (২২১.০)-এর থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। প্রথম দুই সিরিজের (১০ শট) পর সুরুচি ছিলেন চতুর্থ স্থানে, কিন্তু তারপরে ধীরে ধীরে সাহসী শুটিংয়ের মাধ্যমে গতি বাড়ান। একটি ১০.৭ এবং একটি ১০.৮ স্কোর তাকে পদকের দৌড়ে নিয়ে আসে। এরপর ১৩তম শটে (১০.১) তিনি শীর্ষস্থানে উঠে আসেন এবং সেই স্থান ধরে রাখেন।

এই ম্যাচের পরে সুরুচি বলেন, ‘আমি ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলিতে ভালো স্কোর করেই এই টুর্নামেন্টে এসেছি, যা আমাকে ছন্দে রেখেছে। আমি শুটিং উপভোগ করেছি, কোনো চাপ অনুভব করিনি।’ প্রথম সিরিজে কিছু কম স্কোর এলেও, তিনি দ্রুত ঘুরে দাঁড়ান। সুরুচি বলেন, ‘ওগুলোতে আমার কোনও চাপ আসেনি, কারণ আমি জানতাম আমার প্রক্রিয়া এবং কৌশল ঠিক ছিল। প্রথম ওয়ার্ল্ড কাপ সোনা জেতা নিঃসন্দেহে বড় মুহূর্ত, তবে আমি আরও অনেক কিছু অর্জন করতে চাই।’

২০১৯ সালে হরিয়ানার ঝাজ্জরের সাসরোলি গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল সুরুচি ফোগাটের যাত্রা। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সেই অ্যাকাডেমিতে, যেখানে মানু ভাকেরও কোচ সুরেশ সিংয়ের অধীনে নিজের কেরিয়ারের প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিলেন। তাঁর বাবা ইন্দর সিং, একজন অবসরপ্রাপ্ত আর্মিম্যান, প্রথমে সুরুচিকে কুস্তিতে নিয়ে যান। কিন্তু এক ইনজুরির পর আর কুস্তির ম্যাটে ফেরেননি সুরুচি। শুটিং তার শান্ত স্বভাবের সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই হয়ে যায়।

২০২৩ সালে তিনি জুনিয়র ভারতীয় দলে নির্বাচিত হন এবং জার্মানির সুলে জুনিয়র ওয়ার্ল্ড কাপে মিক্সড টিম ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নেন। সুরুচি বলেন, ‘সিনিয়র সার্কিটে প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পর কঠোর পরিশ্রম করেছি।’

এই মরশুমে সব কিছু যেন একসঙ্গে মিলেছে। গত এক বছরে ধারাবাহিকভাবে ভালো স্কোর করেছেন তিনি। তাঁর বাবা ইন্দর সিং বলেন, ‘এই কঠোর পরিশ্রমই এখন ফল দিচ্ছে। ও খুবই নিয়মিত এবং মনোযোগী অনুশীলনে। যখন ও বুয়েনোস আইরেসে গিয়েছিল, ফোন থেকেও দূরে ছিল।’ সুরুচির মতো প্রতিভার উত্থান নিঃসন্দেহে ভারতের শুটিং ভবিষ্যতের জন্য এক আশাব্যঞ্জক বার্তা।